২০২৪ এর নারী (Women)। প্রতিটা নতুন বছরে একটু একটু করে পুরনো খোলস ছেড়ে নতুন অবয়বে, কেতাদুরস্ত হয়ে ওঠে সে। নিজেকে ভেঙে গড়ে, ঘষে মেজে তৈরি করে। সাধারণ গৃহবধূ থেকে শিল্পোদ্যোগী, ভগ্লার, ইউটিউবার– আজ তাঁদের অনেক পরিচয়। আজ প্রতি ঘরে একজন করে পাবলিক ফিগার। আধুনিক নারীর উল্টে দেখুন পাল্টে গেছি এই চেহারার বিবর্তনের কান্ডারি অনেক কিছুই। সেই তালিকায় রয়েছে অত্যাধুনিক গ্যাজেট থেকে ইলেকট্রনিক্স গুডস, হেঁশেল থেকে হাল ফ্যাশনের টুকিটাকি। নতুন বছরে নারী জীবনের রূপকার এরাই।
রসুইঘর থেকে মডিউলার কিচেন
পুরনো রসুইঘর, পাকশাল বা হেঁশেল থেকে আজকের মডিউলার কিচেন। মাঝখানে পেরিয়েছে অনেকটা সময়। একটা সময় মাটির লেপা উনুন তার পরবর্তীতে কেরোসিন স্টোভে স্বচ্ছন্দ বাড়ির মেয়ে-বউদের (Women) দিনের বেশিরভাগ সময়টা কেটে যেত রান্নাঘরেই। কাঠের পিঁড়িতে উবু হয়ে বসে কুটনো আর বাটনায়, লোহার কড়াইয়ের ঠুং ঠাং শব্দে কেটে যেত তাঁদের গোটা দিন। মাটির কলসী থেকে জল তোলায় অভ্যস্ত নারী আজ মডিউল করে ফেলেছে তাঁদের টাইম অ্যান্ড স্পেস। তাই মডিউলার কিচেন বদলে দিয়েছে তাঁদের গোটা হেঁশেল জীবন। বদলে গিয়েছে রান্নাঘরের কনসেপ্ট, সেই সঙ্গে রান্নার কনসেপ্ট আর বদলেছেন রাঁধুনিও। হয়েছেন কেতাদুরস্ত। এলপিজি গ্যাস, মাইক্রোওয়েভ, ইলেকট্রিক গ্রিল, ফুড প্রসেসর নিয়ে মডিউলার কিচেনের সঙ্গে শুরু হয়েছে নারীর (Women) জয়যাত্রা। ছোট্ট পরিসরেই হাত বাড়ালেই বন্ধুর মতো দরকারি-অদরকারি সবকিছু সুন্দর করে ফিট করে গিয়েছে।
রান্নার ডায়েরি থেকে কুকিং ভ্লগ
একটা সময় ছিল সারাদিন হেঁশেল ঠেলে দুপুরে ডায়েরি নিয়ে বসে নিজের পছন্দের রান্নার উপকরণগুলো লিখে ফেলতেন বাড়ির গৃহিণীরা (Women)। কোমরের খুঁটে বাঁধা থাকত গোটা সংসার। সারাদিন পরে বাড়ির পুরুষটি ফিরলে তাক লাগিয়ে দিতেন চমৎকার সব পদ রেঁধে। অভিজাত, বনেদি বাড়ির গৃহিণীদের রান্না লেখা সেই সব ডায়েরি কালের সাক্ষী হয়ে আজও রয়েছে বহু পরিবারে, আবার বই আকারে ছাপাও হয়েছে। সেই ডায়েরির অভ্যেস ছেড়ে আজকের মেয়েরা কুকিং ভ্লগার। পৃথিবী জুড়ে মেয়েদের একটা বড় অংশ আজ নিজে শুধু রান্নাই করেন না, সেই রান্নার স্বাদ-গন্ধ পৌঁছে দেন ঘরে ঘরে। ছোট্ট ছোট্ট রেসিপি সাজিয়ে আজকে তাঁরা ফুড ভ্লগার। সকাল থেকে রাত, সেখানেই চলে তাঁদের রন্ধনযজ্ঞ। রান্নার দৌলতেই অতি সাধারণ গৃহবধূ আজ পাবলিক ফিগার। সংসারের রান্নাবাড়ির ক্ষুদ্রগণ্ডি পেরিয়ে আপ টু ডেট হয়ে সর্বসমক্ষে।
কাঠের পিঁড়ি থেকে অ্যান্টি ফ্যাটিগ ম্যাট
গরিব হেঁশেল হোক বা বড়লোকি রান্নাঘর, সারাদিন একটানা সেখানে কাটিয়ে দিনের শেষে ক্লান্ত হয়ে পড়া বাড়ির মেয়েরা আজ আর কাঠের পিঁড়িতে বসে রাঁধেন না। সারাবাড়ির দেখভাল করা দশভুজার দেখভালের জন্য এসে গিয়েছে হরেক উপায়। আজকের গৃহিণীর ক্লান্তি কাটাতে রান্নাঘরে জায়গা করে নিয়েছে অ্যান্টি ফ্যাটিগ বা ক্লান্তিরোধী কিচেন ম্যাট। স্টাইলিশ এই কিচেন অ্যাক্সেসরিজে স্মার্ট হয়ে উঠেছেন গৃহিণী। এই কিচেন ম্যাটে দাঁড়ালে ক্লান্তি আসে না। এমনকী রান্নাঘরে জল পড়লে স্লিপ করে যাওয়ার কোনও ভয় নেই। ফুরফুরে মেজাজে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী তাঁরা।
ন্যাকড়া চোপড়া থেকে কিচেন লিনেন
আগে বাড়ির ঠাকুর-চাকরেরা রান্নার সময় কাঁধে একটা গামছা রাখতেন হাত মোছার বা অলপারপাজ ইউজের জন্য। পরবর্তীতে এল সুতির ন্যাকড়া চোপড়া। বাড়ির মায়েদের কাপড় কেটেই চলে যেত রান্নাঘরের যাবতীয় কাজ। এখন আধুনিকার রান্নাঘরে কিচেন লিনেন থাকতেই হবে৷ যা কেতা বাড়িয়েছে রমণীর আর রক্ষা হয়েছে পরিচ্ছন্নতা৷ অ্যাপ্রন, স্ক্রাবস, আভেন গ্লাভস, টাওয়েল, টি টাওয়েল, টেবল ম্যাটস, টেবল রানার, পট হোল্ডার, ন্যাপকিন, হাউজহোল্ড লিনেনসে স্টাইলিশ, টিপটপ হয়েছেন মেয়েরা (Women)। সবেতেই রেখেছেন রুচির ছাপ।
আরও পড়ুন- আটপৌরে সহজিয়া কথাপূর্ণা
স্টিক থেকে নন স্টিক
তেলকালি ঝুলি মাখা অতীতের রান্নাঘরের লোহার কড়াই, মেটে হাঁড়ি পাতিল, মালসা, কলসী আর মশলাপাতি রাখার নারকোলের খোল, লোহার চাটু, কালো বড়সড় একটা শিলনোড়া– যুগ পেরিয়ে পরিণত নারীর স্টাইলিশ সঙ্গী নানা অত্যাধুনিক ইউটেনসিলস। যার মধ্যে অন্যতম নন স্টিক হাঁড়িকুড়ি, তাওয়া, প্যান, কড়াই ইত্যাদি। টেফলন কোটিং থেকে শুরু তারপর সিলভারস্টোন, টেফাল, অ্যানোলন, সার্কুলন, সেফালন এসে গিয়েছে। হাতা-খুন্তির সেই আনস্মার্ট বিষয় পেরিয়ে এখন স্মার্ট মেয়েদের হাতে সিলিকন স্প্যাটুলা, হাতা, খুন্তি, এমনকী বাসনও। আধুনিক নারী ননস্টিকে অভ্যস্ত হবির পাশাপাশি নিজেও হয়ে উঠেছেন স্লিক এবং স্টাইলিশ।
চিরুনি থেকে থেরাপিউটিক হেয়ার ব্রাশ
চিরুনি আর নারীর (Women) সংযোগসূত্র বহুযুগের। আগেকার দিনে রানি, মহারানিরা চুলে চিরুনি ব্যবহার করতেন, যে চিরুনি তৈরির ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। খ্রিস্টপূর্ব পাঁচ হাজার শতকে এর ব্যবহার শুরু নারীর হাত ধরেই। সেই নারী থেকে আজকের আধুনিকা তার চুলের যত্নে বরণ করে নিয়েছে হেয়ার ব্রাশকে। হেয়ার ব্রাশ চুলের বাড়বৃদ্ধিকে তরান্বিত করে চুল ভাল রাখে। সেই হেয়ার ব্রাশের বিবর্তন মেয়েদের জীবনেও এনেছে পরিবর্তন। এখন থেরাপিউটিক হেয়ার ব্রাশ স্টাইলিশ ওয়রকিং মহিলাদের জন্য আদর্শ। চুলের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে সঙ্গে চুল বাড়াতে এবং স্ক্যাল্পের হেলদি ম্যাসাজে থেরাপিউটিক হেয়ার ব্রাশ যেমন কার্যকরী, তেমনই ট্রেন্ডি।
আয়না থেকে মিরর উইথ লাইট
বলো তো আরশি কে বেশি সুন্দর! এমন বলার দিন পেরিয়ে এসছেন আজকের মেয়েরা। পোর্টেবিলিটির যুগে এখন সবকিছুই তাঁদের পার্সবন্দি আয়নাও। আগেকার দিনে বাড়িতে থাকা বড়সড় আয়নাতেই চলত সাজ পর্ব। কিছু অভিজাত পরিবারে সেগুন কাঠের আয়নার চারপাশে লাগানো থাকত জোরালো আলো। সেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কুমকুম, পাউডার, ঠোঁটে রং দিতেন নারী। লাল রুজ মাখতেন গালে, নাকে। এরপর পাল্টেছে যুগ। প্রসাধনীতে ধীরে ধীরে তাঁরা আপ-টু ডেট এবং পুরোদস্তুর ঝাঁ চকচকে । এখন তাঁরা সঙ্গে রাখছেন পুরোদস্তুর লেড লাইট লাগানো পোর্টেবল আয়না। আয়না ওপেন করলেই ধারালো আলোয় মুখ দেখবেন তাঁরা। কমপ্যাক্টের সঙ্গে তো বটেই, এমনিও পাওয়া যায় লেড লাইট দেওয়া আয়না। বাড়িতে জায়গা ড্রেসিং টেবিল নয়, স্লিক স্টাইলিশ কোজি লেড লাইট মিরর নারী সৌন্দর্যকে, তার আবেদনকে বাড়িয়ে তুলেছে অনেকটা।
খেরোর খাতা থেকে স্মার্ট নোটবুক
সকালের সবজি থেকে মাছ, মাংস, মশলাপাতি, দোকান-বাজার সবকিছু লিখে না রাখলে গোটা সংসারটা সামলে ওঠাই দায় হয় গৃহিণীদের। আগে বাড়ির মহিলাদের হিসেবনিকেশ চলত খেরোর খাতায় বা ছেলেমেয়ের পুরনো ফেলে দেওয়া খাতাপত্রের খালি পেজে, ছোট্ট বাঁধাই করা ডায়েরিতে বা নতুন বছরে পাওয়া এক-আধটা নতুন ডায়েরিও ব্যবহার করে থাকেন অষ্টাদশী থেকে পঞ্চাশোর্ধ্ব মহিলারা। আজ সবটাই মোবাইল কেন্দ্রিক। টেকস্যাভি মেয়েরা জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ করেন মোবাইলেই। এখন এই হিসেবনিকেশ হোক বা টুকিটাকি তথ্য, বা ডেইলি প্ল্যান, টু ডু লিস্ট সবকিছুর জন্য আধুনিকাদের আরও বেশি করে অ্যাপ্ট করে তুলতে এসে গিয়েছে রিইউজেবল নোটবুক। এই নোটবুক একটা ম্যাজিক যা মহিলাদের কাজ আরও সহজ করে দিয়েছে মুহূর্তেই। এর সঙ্গে থাকে একটা স্পেশাল পেন এবং ইরেজার ক্লথ। যা কিছু লিখতে থাকুন একবার ওই নরম কাপড়টা বুলিয়ে নিলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, ডায়েরিতে লেখার পর ডায়েরির নীচে থাকা ই-মেল সাইনে মার্ক করে মোবাইলে ছবি তুললেই সেই সব ইনফরমেশনগুলো আপনা আপনি মেলে সেভ হয়ে যাবে। প্রিটি উইমেন স্মার্ট নোটবুকের দৌলতে স্মার্ট ওয়র্ক করে ফেলছেন নিমেষেই।
টর্চ থেকে সেফটি টর্চ উইথ শক এফেক্ট
আজকের নারীকে (Women) স্মার্ট করতে মার্কেট জুড়ে বিভিন্নরকম স্মার্ট সেফটি টুল। শুধু ঘরকন্না আর সাজগোজেই আত্মরক্ষাতেও স্মার্ট তাঁরা। নিজেকে যে বাঁচাতে সদা তৎপর। সেই হ্যারিকেন, লণ্ঠনের যুগ পেরিয়ে অন্ধকারের যষ্টি বলতে নারীর একমাত্র সাধন ছিল টর্চ। বড় স্টিলের টর্চ মোটামুটি সব বাড়িতেই দেখতে পাওয়া যেত কিন্তু মেয়েদের পার্সে টর্চ রাখার প্রয়োজন পড়লেও রাখার উপায় ছিল না। তারপর, এখন হাতে মোবাইল ফোন তাই আলাদা করে আর টর্চ লাগে না। মোবাইলেই যে রয়েছে টর্চ। কিন্তু তাতে কী। এখন চাই সেফটি টর্চ। বিষয়টা কীরকম। এই সেফটি টর্চ ছোট্ট ও হ্যান্ডি কিন্তু রাতের অন্ধকারে কেউ আপনাকে বিপদে ফেলতে চাইলে বাড়িয়ে দিন সেই টর্চ, এমন শক লাগবে যে পালিয়ে যেতে বাধ্য হবে সেই দুষ্ট। তাই তো এর নাম সেফটি টর্চ উইথ শক এফেক্ট , যার এফেক্টে আজকের নারীর রাশ বেশ ভারী। কুছ পরোয়া নেই তাঁদের। স্মার্ট সেফটি টুলসে তাঁরা আজ হেব্বি স্মার্ট।