প্রতিবেদন: মণিপুরে সংঘর্ষের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার কালা দিবস পালিত হল কুকি অধ্যুষিত এলাকায়। ডাক দেওয়া হয়েছিল বন্ধেরও। কালো পতাকা উড়িয়ে সন্ত্রাসের প্রতিবাদও জানিয়েছেন অনেকে। জিরিবাম এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত থেকেই জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। দিল্লির যন্তর-মন্তরেও উঠেছে প্রতিবাদের ঢেউ। নিখোঁজ ৩১ জনের ছবি নিয়ে দিল্লিতে অবস্থান বিক্ষোভ করেছেন প্রিয়জনেরা। অন্যদিকে মেইতেইরা দিনটিকে পালন করেছে চিন-কুকি মাদক সন্ত্রাসীদের মণিপুর আক্রমণের বর্ষপূর্তি হিসেবে।
আরও পড়ুন-প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত কেনিয়া! মৃত কমপক্ষে ১৮৮ জন
কিন্তু কুকি এবং মেইতেই দু’পক্ষেরই ক্ষোভ ঝরে পড়ছে একটাই প্রশ্নের মধ্যে— এই একবছরের মধ্যে একবারও কি প্রধানমন্ত্রী এসে দাঁড়াতে পারলেন না রাজ্যের অসহায় মানুষদের পাশে? এই প্রশ্নই বারবার তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। মণিপুরে শান্তি ফেরাতে কেন্দ্র এবং সেরাজ্যের গেরুয়া সরকারের অপদার্থতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বছর ঘুরল। তবু আজও রক্তাক্ত মণিপুর। গেরুয়া কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের চূড়ান্ত প্রশাসনিক ব্যর্থতা এবং অপদার্থতার মূল্য এখনও দিতে হচ্ছে উত্তর-পূর্বের এই পাহাড়ি রাজ্যের মানুষকে। একবছর আগে এই ৩ মে-তেই মেইতেই এবং কুকি জনজাতির মধ্যে শুরু হয়েছিল রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। একবছরে এখনও পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ২২০ জন। গৃহহীন অন্তত ৭০,০০০ মানুষ। এরমধ্যে নারী-নির্যাতনের কদর্য রূপ দেখেছে রাজ্য। যৌন নির্যাতনের পরে নগ্ন করে রাস্তায় হাঁটানো হয়েছিল ২ মহিলাকে। পুলিশের সাহায্য চেয়েও পাননি তাঁরা। সিবিআই তদন্তেই ধরা পড়েছে গেরুয়া পুলিশের এই নগ্ন রূপ। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয়, অগ্নিগর্ভ মণিপুরকে শান্ত করার প্রশ্নে কেন্দ্র এবং গেরুয়া সরকারের নিস্ক্রিয় ভূমিকা। পুলিশ আছে, সেনা, আধাসেনাও আছে, তবুও নিভছে না আগুন। রাজ্যের ৭ বিজেপি বিধায়ক, ২ মন্ত্রীর ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
তাঁদের সঙ্গে গত এক বছরে মন্ত্রিসভার নাকি কোনও সম্পর্কই নেই। অথচ কুকি-সন্ত্রাস থেকে মেইতিদের বাঁচানোর অজুহাতে বিজেপির মদতে গড়ে উঠেছে মেইতেই যুবকদের সশস্ত্র বাহিনী ‘আরাম্বাই টেঙ্গল’। অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই যুবকরা। বলতে গেলে সমান্তরাল সরকারও চালাচ্ছে। মণিপুরের অবস্থা এখনও কতটা ভয়াবহ তার প্রমাণ মিলেছে প্রথম দফার নির্বাচনেই। বুথের সামনে গুলি চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। অবাধে চলেছে ভীতি প্রদর্শন, ইভিএম ভাঙচুর এবং ভোটলুটও। বেশ কয়েকটা বুথে পুনরায় ভোটগ্রহণও হয়েছে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে। তারপরেও খবর এসেছে বেশ কয়েকটি অশান্তি এবং মৃত্যুর। প্রশ্ন একটাই, এর শেষ কোথায়?