জয়া দত্ত:
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থান
এই ছাত্র পরিষদের সদস্যা হিসেবেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক সংগ্রামের সূচনা।
কলেজ জীবনের এক ছাত্রী সংগঠনের কর্মী থেকে ১৯৮৪ সালে বাম দুর্গ যাদবপুর থেকে দেশের সর্বকনিষ্ঠ সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হওয়া—এটি ছিল এক অভূতপূর্ব সাফল্য। এরপর তিনি দেশের ক্রীড়া, নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী, দু’বারের রেলমন্ত্রী এবং অবশেষে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হন।
তিন-তিনবার রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হওয়া সত্ত্বেও তিনি আজও সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি, নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক এবং বিজেপির বিরুদ্ধে দেশের প্রধান বিরোধী নেত্রী। ছাত্র পরিষদ থেকে উঠে এসে এমন বর্ণময় রাজনৈতিক যাত্রার নজির ভারতবর্ষে আর কারও নেই।
আরও পড়ুন-প্রতিবাদের আগুনই হোক শিক্ষার আলো
ছাত্র আন্দোলনের গৌরবগাথা
সত্তরের দশকে যোগমায়া দেবী কলেজের ফটকে যখন ক্ষমতাসীন ডিএসও পতাকা ছিঁড়ে ফেলে, তখন একা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝড়-বৃষ্টির রাতে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই একাকী প্রতিরোধ বাংলার ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে আজও কিংবদন্তি।
দক্ষিণ কলকাতার জেলা কংগ্রেসের এক সভায় প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির প্রশ্ন, “এই তোদের মধ্যে মমতা বলে কে আছে?” এর উত্তরেই সামনে আসে সেই ছোটখাটো অথচ দুর্দমনীয়া যুবনেত্রীর নাম। প্রিয়রঞ্জন ও সুব্রত মুখোপাধ্যায় দু’জনেই তখন ভবিষ্যতের এক উজ্জ্বল নেতৃত্বকে চিনে ফেলেছিলেন। প্রিয়রঞ্জনের ভবিষ্যদ্বাণী, “তুই খুব ভালো করছিস, অনেক দূর যেতে হবে তোকে।” সময়ের পরীক্ষায় শতভাগ সত্য প্রমাণিত হয়েছে।
তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় পর্যন্ত ভবানীপুরে যদুবাবুর বাজারে দাঁড়িয়ে যুব নেত্রীর বক্তৃতা শুনে মুগ্ধ হয়ে এগিয়ে এসে আলাপ করেছিলেন। এমনকী প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর নজরেও এসেছিলেন তরুণী মমতা, তাঁর সাড়া জাগানো রাজ্যব্যাপী আন্দোলনের কারণে।
নতুন পথের সন্ধানে
কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেসের একাংশ যখন সিপিএমের সঙ্গে আঁতাত করে, তখন মমতা বুঝতে পারেন কংগ্রেসে থেকে বামকে পরাজিত করা অসম্ভব। তাই ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি, তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস। সেই সঙ্গে ছাত্র পরিষদের প্রায় সব প্রাক্তন সভাপতি তৃণমূলে যোগ দেন এবং নেত্রীর নির্দেশে জন্ম নেয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ।
প্রয়াত সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় পর্যন্ত মন্তব্য করেছিলেন, “বাংলায় তৃণমূলই আসল কংগ্রেস।”
আরও পড়ুন-টিএমসিপি ছাত্রসমাজের হৃৎস্পন্দন
আগামী দিনের শপথ
আজও যেমন শত দমন-পীড়ন, বঞ্চনা ও শোষণের পরও তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সাম্প্রদায়িক ও দুর্নীতিগ্রস্ত বিজেপির বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামে অবিচল।
বাংলার গণতন্ত্র ও ভারতের সংবিধান রক্ষার লড়াইয়ে আগামী দিনে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
আসছে ২৮ অগাস্ট, আমরা সমবেত হব মেয়ো রোডে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে নেত্রীর দিকনির্দেশের অপেক্ষায়। কারণ ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে বারবার প্রমাণিত হয়েছে, সাধারণ ঘরের মেয়েটি সাদা শাড়ি পরে কালীঘাট থেকে যে লড়াই শুরু করেছিলেন, সেটিই আজ বাংলার মানুষের শেষ ভরসা।
“ছাত্রশক্তি শুধু সমাজের অগ্রদূত নয়,
বাংলার গণতন্ত্র রক্ষার অগ্রভাগের সেনা।
আর সেই সেনার প্রাণ, সেই সংগ্রামের নাম
তৃণমূল ছাত্র পরিষদ।
কেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ?
আগামী প্রজন্মের নেতৃত্ব গড়তে আজকের ছাত্রই সবচেয়ে বড় শক্তি। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ হল সেই মঞ্চ, যা ছাত্র সমাজকে তাদের শিক্ষাগত, সামাজিক এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়। আমরা কেবল নেতা তৈরি করি না; আমরা গড়ি জনগণের সত্যিকারের প্রতিনিধি, যারা ন্যায়, জনসেবা এবং সমাজ পরিবর্তনের আদর্শকে সামনে রেখে প্রতিদিন কাজ করে।
ছাত্রশক্তিকে সুসংগঠিত করা: রাজনৈতিক চেতনায় শিক্ষিত ও সচেতন যুবসমাজ গঠন করা।
সামাজিক ও শিক্ষাগত সংস্কার: সমাজের সমস্যার সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা রাখা।
নেতৃত্ব ও সংহতি: আগামী প্রজন্মের জন্য দায়িত্বশীল ও দৃঢ় নেতৃত্ব তৈরি করা।
সংগ্রামী মনোভাব: ন্যায় ও পরিবর্তনের জন্য লড়াই করার মানসিকতা তৈরি করা।
ছাত্রশক্তিই সমাজের প্রকৃত অগ্রদূত। আজকের ছাত্রই আগামী দিনে নীতি, ন্যায় ও জনসেবার মাধ্যমে সমাজের রূপান্তর ঘটাবে।
“ছাত্রশক্তি যেখানে, সেখানেই সমাজের পরিবর্তনের আলো।”