চিত্তরঞ্জন খাঁড়া: টিকিট নিয়ে হাহাকারের মধ্যেই শনিবাসরীয় শহর কলকাতার অভিমুখ যুবভারতী। আইএসএল ফাইনালের আগে বদলা আর ইতিহাসের গন্ধ। দেশের সেরা লিগ প্রথম দল হিসেবে টানা দু’বার জিতে ইতিমধ্যেই নজির গড়েছে মোহনবাগান। লিগ-শিল্ডের পর কাপ চ্যাম্পিয়ন হলে মুম্বই সিটির-পর দ্বিতীয় দল হিসেবে আইএসএলে দ্বিমুকুট জিতবে জোসে ফ্রান্সিসকো মোলিনার দল। স্বপ্নপূরণের শপথ নিয়েই আজ হাউসফুল যুবভারতীতে কাপ জয়ের লড়াইয়ে নামছে মোহনবাগান। মহারণের আগে মোলিনার সংসারে ফিল গুড হাওয়া। কোনও চোট বা কার্ড সমস্যা নেই। ফাইনালের জন্য তৈরি সবাই।
আরও পড়ুন-নীলকণ্ঠ ও নীলপরমেশ্বরী কথা
প্রতিপক্ষ শিবিরে প্রতিশোধের আগুন থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। ম্যাচের আগের দিন ফাইনালের ফটোশুটে দু’দলের দুই স্প্যানিশ কোচ মোলিনা ও জেরার্ড জারাগোজার মধ্যে বন্ধুত্বের ছবিটা হয়তো বৈরিতাকে সামনে আনেনি। তবে আইএসএল লিগ পর্বে যুবভারতীতে লিস্টন কোলাসোর গোলে হার বা ডুরান্ড কাপ সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে মোহনবাগানের কাছে হারের জবাব দেওয়ার সুযোগ যে এই মরশুমে আর পাবে না বেঙ্গালুরু। এর সঙ্গে দু’বছর আগে ফাতোরদায় আইএসএল ফাইনালের কথাও বলতে হয়। সেদিন বিশাল কাইথের বিশ্বস্ত হাত স্বপ্নভঙ্গের আঁধার নামিয়েছিল বেঙ্গালুরু শিবিরে। কিন্তু বদলার আগুনে এই মোহনবাগান টিমকে তাদের ডেরায় হারিয়ে কাপ জয় ব্লুজদের পক্ষে সহজ হবে না। যেখানে চলতি আইএসএলে এখনও অপরাজিত মনবীর সিংরা। দু’দলের মুখোমুখি সাক্ষাতেও এগিয়ে মোহনবাগান।
শুধু তাই নয়, মোলিনার দলের অবিশ্বাস্য ফর্মের সঙ্গে ভরা যুবভারতীর শব্দব্রহ্মও বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে থাকবে। তবে বড় ম্যাচে হিসেব বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন সেই সুনীল ছেত্রী। চল্লিশোর্ধ তারকা স্ট্রাইকারকে নজরে রাখতেই হবে আলবার্তো রডরিগেজ, শুভাশিস বোসদের। সুনীলের পাশে থাকবেন দুর্দান্ত ছন্দে থাকা রায়ান উইলিয়ামসও। তাঁকে কড়া নজরে রাখতে হবে বাগান রক্ষণকে। চলতি আইএসএলে ১৪ গোল করে ভারতীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলদাতা সুনীল। ম্যাচের ২৪ ঘণ্টা আগে নিউটাউনের পাঁচ তারা হোটেলে সাংবাদিক সম্মেলনে মোলিনার পাশে বসেই বেঙ্গালুরুর স্প্যানিশ বস জারাগোজা বললেন, ‘‘সুনীলকে দ্বিতীয়ার্ধে নামাচ্ছি কারণ আমি মনে করি, পরে নেমেও ওর মতো ফুটবলার পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। সেটা ও করছেও। যখন মনে হয়েছে সুনীলকে ৯০ মিনিট খেলিয়েছি। ও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ফিরেছে। তাই ফিটনেস মাথায় রেখে ভারসাম্য রাখতে হচ্ছে। ফাইনালে শুরু থেকে খেলবে নাকি পরে সুনীলকে নামাব, সেটা ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেব।’’
সবুজ-মেরুন শিবিরের শপথ একটাই, আইএসএলে দ্বিমুকুট জিততে হবে। লিগ-শিল্ড এসেছে, এবার চাই কাপ। গতবার শিল্ড জিতেও মুম্বইয়ের কাছে ফাইনাল হেরে কাপ হাতছাড়া হয়েছিল। পরিসংখ্যানও মোহনবাগানের বিপক্ষে। ঘরের মাঠে এখনও পর্যন্ত কোনও দল ফাইনাল জিততে পারেনি। মোলিনা অবশ্য সাফ বলে দিলেন, ‘‘অতীতে কী হয়েছে সেটা নিয়ে ভাবতে চাই না। সমর্থকদের সামনে ফাইনাল খেলব। বেঙ্গালুরু শক্ত প্রতিপক্ষ। আমাদের জন্য কঠিন ম্যাচ। কাপ জিতে সমর্থকদের খুশি করতে চাই। সেটা ৫-৪ গোলে হোক বা ১-০। জয়টাই আসল। ফাইনালের জন্য আলাদা মোটিভেশনের প্রয়োজন হয় না। আমরা লিগ-শিল্ড জিতে ইতিমধ্যেই উজ্জীবিত। এবার ডাবল করার জন্য মুখিয়ে রয়েছি।’’ বেঙ্গালুরুর সমর্থকরা থাকবেন যুবভারতীর স্ট্যান্ডে। তাঁদের জন্যও ফাইনাল জিততে মরিয়া বেঙ্গালুরুর কোচ। জারাগোজা শুনিয়ে রাখলেন, তিনি ৫-৪ গোলের হাইস্কোরিং ম্যাচ চাইছেন।
গতবার মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ফাইনালে যে ভুল করেছিলেন, তা এবার করতে চান না অধিনায়ক শুভাশিস। মোহনবাগান রক্ষণের বিশ্বস্ত সৈনিক বললেন, ‘‘ঘরের মাঠে সমর্থকদের সামনে ফাইনাল খেলার অনুভূতিই আলাদা। গতবার যে ভুলগুলো করেছিলাম সেগুলো আর করতে চাই না। তিন বার আমি ফাইনাল খেলেছি। এবার সামনে বেঙ্গালুরু। আমরা শুধু ফাইনালে মনোনিবেশ করছি।’’