প্রতিবেদন : ভারতের বিচারব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি একটি তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শীর্ষ আদালত তার কর্মরত বিচারপতিদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিবরণ অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা শুরু করেছে, যা স্বচ্ছতা এবং জনআস্থার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যেই ৩৩ জন কর্মরত বিচারপতির মধ্যে ২১ জনের সম্পত্তির বিবরণ ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট বিচারপতির পাশাপাশি তাঁদের স্ত্রী/স্বামী ও যৌথ পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি, সোনা, শেয়ার এবং বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আরও পড়ুন-হিমালয়ের হিমবাহ গলে বাড়ছে জলস্তর, বিপদে ভারত
উল্লেখযোগ্যভাবে, সুপ্রিম কোর্ট কলেজিয়ামের পাঁচজন বিচারপতির সম্পত্তির বিবরণও এতে প্রকাশিত হয়েছে। শীর্ষ আদালতের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাকি বিচারপতিদের সম্পত্তির বিবরণও খুব শীঘ্রই ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। এই সিদ্ধান্তটি গৃহীত হয় গত ১ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের সব বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ সভায়, যেখানে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে বিচারপতিদের সম্পত্তি সংক্রান্ত তথ্য জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে প্রকাশ করা হবে। এই নীতি কেবল বর্তমান বিচারপতিদের ক্ষেত্রেই নয়, ভবিষ্যতের বিচারপতিদের ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রযোজ্য হবে। এই পদক্ষেপটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন বিচারবিভাগে স্বচ্ছতার ঘাটতি নিয়ে জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে। বিশেষত, সম্প্রতি দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত ভার্মার বাসভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর পোড়া টাকার বান্ডিল (আনুমানিক ১৫ কোটি) উদ্ধারের অভিযোগ ঘিরে দেশজুড়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়, তা বিচারবিভাগের প্রতি আস্থা ও স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলে। ফলে, সুপ্রিম কোর্টের এই উদ্যোগ জনসাধারণের আস্থা পুনর্গঠনের একটি সচেতন প্রচেষ্টা বলেই মনে করা হচ্ছে। এই পদক্ষেপ বিচারপতিদের সম্পত্তির তথ্য প্রকাশ সংক্রান্ত পূর্ববর্তী অনুশীলনের একটি মৌলিক পরিবর্তন। এতদিন পর্যন্ত বিচারপতিরা তাঁদের সম্পত্তির বিবরণ শুধুমাত্র ভারতের প্রধান বিচারপতির কাছে জমা দিতেন এবং তা জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করা ঐচ্ছিক ছিল। ফলে সম্পত্তি ঘোষণা থাকলেও তা নাগরিকদের জানার অধিকার ছিল না। এছাড়া সুপ্রিম কোর্ট আরও একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে স্বচ্ছতার প্রয়াসে। তা হল, হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়ার বিস্তারিত তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করছে। এতে হাইকোর্ট কলেজিয়ামের মতামত, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের সুপারিশ, সুপ্রিম কোর্ট কলেজিয়ামের পর্যবেক্ষণ এবং ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত প্রস্তাবিত ও কার্যকর করা নিয়োগগুলির তালিকা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই ধরনের উদ্যোগে বিচারবিভাগের স্বচ্ছতার পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা ও আস্থার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।