প্রতিবেদন: বিলকিস বানো (Bilkis Bano Case) গণধর্ষণ কাণ্ডের এক অপরাধী অর্ধেক সাজা খাটার পর মুক্তি পেয়ে ওকালতি শুরু করেছেন গুজরাত আদালতে। নজিরবিহীন এই ঘটনায় রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করল দেশের শীর্ষ আদালত। এই ঘটনায় সুপ্রিম বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়ার প্রশ্ন, ‘ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত কেউ কী করে ওকালতির মতো পেশাকে বেছে নিতে পারে?’
২০০২ সালে নরেন্দ্র মোদির শাসনে গুজরাতে গোধরা পরবর্তী হিংসায় দেবগড় বারিয়ায় গণধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ১১ জন অপরাধীকে মুক্তি দিয়েছে গুজরাত সরকার। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে মামলা। সেই মামলার শুনানিতে দোষীদের আইনজীবী ঋষি মালহোত্রা তার মক্কেলকে উদ্ধৃত করেন। এরপর সেই ঘটনার অন্যতম অপরাধী রাধেশ্যাম শাহ নিজের প্রসঙ্গে বলেন, ‘আজ প্রায় এক বছর কেটে গিয়ে গিয়েছে। আমার বিরুদ্ধে কিন্তু একটিও মামলা হয়নি। এক মোটর দুর্ঘটনা মামলায় আমি আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছি। আমি একজন আইনজীবী। এবং আমি আবার প্র্যাকটিস শুরু করেছি।’ রাধেশ্যামের এমন বক্তব্য শোনার পর রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি।
আরও পড়ুন- দেশে ‘রেপ ক্যাপিটাল’ ইউপি, হিংসায় অশান্ত মণিপুর
এর পরই শীর্ষ আদালতের বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়া বলেন, বিলকিস বানো (Bilkis Bano Case) মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে কীভাবে এই ব্যক্তি লাইসেন্স পেলেন প্র্যাকটিস করার? আইন একটা মহান পেশা। বার কাউন্সিলকে বলতে হবে দোষী কি প্র্যাকটিস করতে পারেন? আপনি একজন দোষী। এতে কোনও সন্দেহ নেই। আপনাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলেই আপনি জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন।’ আইন অনুযায়ী অ্যাডভোকেটস অ্যাক্টের ২৪এ ধারায় বলা হয়েছে, ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত কেউ আইনজীবী হিসাবে কাজ করতে পারেন না।
প্রসঙ্গত, বিলকিসকে গণধর্ষণ এবং তাঁর পরিবারের সাত সদস্যকে খুনের অভিযোগে ২০০৮ সালে মুম্বই ট্রায়াল কোর্ট রাধেশ্যাম-সহ ১১ জনকে যাবজ্জীবন জেলের সাজা দিয়েছিল। এরপর গত বছরের ১৫ অগস্ট ৭৬তম স্বাধীনতা দিবসে বিলকিসকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাত সরকার। মুক্তির পর স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব ওই অপরাধীদের সংবর্ধনা দেন। যা নিয়ে গোটা দেশে শোরগোল পড়ে যায়। প্রবল বিতর্কের মাঝে পড়ে গুজরাত সরকার জানায়, জেলে ওই ১১ জন ধর্ষক এবং খুনি ‘ভাল আচরণ’ করেছেন, সে কারণেই তাঁদের সাজার মেয়াদ কমানো হয়েছে। যদিও প্রতিপক্ষ দাবি করে, ওই ১১ জন বিভিন্ন সময় প্যারোলে মুক্তি পেয়ে যখন জেলের বাইরে ছিলেন, তখনও তাঁদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছিল। ১১ জনের মধ্যে ১০ জনই বিভিন্ন সময়ে প্যারোলের নিয়মভঙ্গ করেছেন।