প্রতিবেদন: অনলাইন ও অফলাইন বেটিং অ্যাপের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা অথবা কঠোর নিয়ন্ত্রণ লাগু করার দাবি জানিয়ে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারের জবাব তলব করেছে। বিচারপতি সুর্যকান্ত এবং বিচারপতি এন কোটেশ্বর সিংয়ের বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে ধর্মপ্রচারক ড. কে এ পলের পিটিশন গ্রহণের পর। ড. পলের অভিযোগ, বেটিং অ্যাপগুলির অপব্যবহারের ফলে সারা দেশে, বিশেষত তেলেঙ্গানায়, আত্মহত্যার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। তিনি পরিসংখ্যান দিয়ে আদালতে জানান, শুধুমাত্র তেলেঙ্গানায় এই বেটিং অ্যাপের ফাঁদে পড়ে গত কয়েক মাসে ১০০০-এর বেশি তরুণ আত্মহত্যা করেছেন। তাঁর দাবি, বেটিং অ্যাপের প্রচারে বলিউড ও দক্ষিণি চলচ্চিত্র জগতের বহু সেলিব্রিটি জড়িত এবং ইতিমধ্যে অন্তত ২৫ জন প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে তেলেঙ্গানা পুলিশ।
আরও পড়ুন-বৃষ্টিবিধ্বস্ত উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে উদ্ধারে নামল সেনাবাহিনী
আবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ৯০ কোটি তরুণ নাগরিকের মধ্যে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ বেআইনি ও অনৈতিকভাবে এই বেটিং অ্যাপে ফেঁসে গেছে, যা তাঁদের জীবনের অধিকার তথা সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে। এই প্রসঙ্গে প্রাথমিকভাবে বিচারপতি সূর্যকান্ত ইঙ্গিত দেন, বিষয়টি আইনের দ্বারা সম্পূর্ণভাবে রুখে দেওয়া সম্ভব নয়, কারণ মানুষ স্বেচ্ছায় এমন কাজে যুক্ত হচ্ছে। যদিও পরে তিনি বলেন, যদি এটি মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের পর্যায়ে পৌঁছয়, তাহলে কেন্দ্রের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা উচিত। শীর্ষ আদালত তাই কেন্দ্রীয় সরকারকে এই ইস্যুতে তাদের অবস্থান জানাতে নির্দেশ দিয়েছে। আবেদনকারী তাঁর পিটিশনে উল্লেখ করেছেন, কিছু জনপ্রিয় ক্রীড়াবিদ ও অভিনেতার ভাবমূর্তিতে আকৃষ্ট হয়ে তাঁদের সামাজিক প্রভাবের ফলে তরুণরা এই অ্যাপে আকৃষ্ট হচ্ছে। এমনকী ক্রিকেট কিংবদন্তি সচিন তেন্ডুলকারের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখন এই মাপের তারকা একে সমর্থন করেন, তখন কোটি কোটি মানুষ ধরে নেন, অ্যাপটি নিরাপদ। শীর্ষ আদ্লত এই পর্যায়ে কেন্দ্রকে নোটিশ পাঠিয়েছে। পরে প্রয়োজনে রাজ্যগুলিকেও নোটিশ দেওয়া হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। ড. পলের আবেদনে যে দাবিগুলি উত্থাপিত হয়েছে তা হল, সমস্ত বেটিং অ্যাপকে জুয়া খেলার আওতাভুক্ত ঘোষণা করা। কঠোর কেন্দ্রীয় ও রাজ্য আইন প্রণয়ন করে বেটিং অ্যাপ নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রিত করা। গুগল, অ্যাপল ও অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে এই অ্যাপগুলি সরানোর নির্দেশ। বিদেশি বেটিং সাইটে প্রবেশ রুখতে টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রককে ব্যবস্থা নিতে বলা। অ্যাপ নির্মাতা ও প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু। বলিউড তারকা, ক্রীড়াবিদ ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের এই ধরনের প্রচার থেকে বিরত থাকার নির্দেশ। মামলাটি শুধুমাত্র আইনগত নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতার দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে উঠছে।