দেশের স্বাস্থ্যকর্মী, যার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সব ধরনের চিকিৎসকরা, তাঁদের নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত হয়েই এসেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। আর জি করের ঘটনায় স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে দেশের বর্তমান আইন যে যথেষ্ট নয় তা স্পষ্ট করে দেন তিনি। সেই সঙ্গে নয় সদস্যের টাস্ক ফোর্স ও তাঁদের সাহায্য করার জন্য অধিকারিকদের কমিটি গঠন করল সুপ্রিম কোর্ট। নির্দিষ্ট করে দেওয়া হল টাস্ক ফোর্স কী কী করবে। তিন সপ্তাহের মধ্যে অন্তর্বর্তী রিপোর্ট পেশ করবে ও দুই মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেশ করবে। সেই সঙ্গে প্রতিটি রাজ্যকে হাসপাতালগুলি সম্পর্কে একাধিক তথ্য পেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এক মাসের মধ্যে।
নয় সদস্যের ন্যাশানাল টাস্ক ফোর্স গঠন করে মূলত দুটি বিষয় দেখার নির্দেশ দেওয়া হয় সুপ্রিম কোর্টের তরফে
* প্রথমত, হাসপাতালের সব ধরনের হামলা, যার মধ্যে লিঙ্গবৈষম্যগত হামলার ঘটনা আটকানোর ব্যবস্থা করা।
* দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে নিরাপদ কাজের স্থান তৈরি করা। নিরাপত্তার বিষয়ে নজরে রাখা হবে সমস্ত ধরনের স্বাস্থ্য কর্মীদের, যার মধ্যে রয়েছেন ডাক্তাররা, পড়ুয়া ডাক্তার যাঁরা ইন্টার্নশিপে রয়েছেন, আবাসিক ডাক্তার, সিনিয়র আবাসিক ডাক্তার সহ নার্সরা। নির্দেশিকা তৈরির কাজে সব ধরনের অংশীদারদের যুক্ত করে আলোচনার পথে এগোনোর নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
পাসাপাশি রি টাস্ক ফোর্সই সমস্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামো দেখে প্রস্তাব দেবে কবে থেকে এই নির্দেশিকা কার্যকর করা সম্ভব।
যে দুটি বিষয়কে নজরে রেখে নির্দেশিকা তৈরি করবে টাস্ক ফোর্স তার মধ্যে নিরাপত্তার বিষয়টিতে কোন কোন দিক লক্ষ্য রাখতে হবে তা নিয়ে বিস্তারিত জানায় সুপ্রিম কোর্ট।
আরও পড়ুন- রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পুজো বন্ধের চক্রান্ত! দুর্গাপুজো হবে জানাল ফোরাম ফর দুর্গোৎসব
আদালতের নির্দেশ –
১) হাসপাতালের মধ্যে নিরাপত্তা বাড়ানো
২) পরিকাঠামোগত উন্নয়ন
৩) সমাজ কর্মীদের নিয়োগ যাঁরা শোক ও জরুরি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পরামর্শ দেবে
৪) শোক ও জরুরি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কর্মশালার আয়োজন নিয়ে পরিকল্পনা
স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে নিরাপদ কাজের জায়গা হিসাবে গড়ে তুলতে আদালতের নির্দেশ –
১) সব হাসপাতাল, নার্সিংহোম ও বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার জায়গায় প্রিভেনশন সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট অ্যাগেন্স্ট উমেনস অ্যাট ওয়ার্কপ্লেস অ্যাক্ট শক্তভাবে লাগু করতে হবে। এই আইন অনুযায়ী অন্তর্বর্তী অভিযোগ গ্রহণের কমিটি সর্বত্র থাকতে হবে।
২) পশ (POSH) আইন নিয়োগকারী সংস্থাকে অনুসরণ ও প্রতিপালন করতে হবে
৩) সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য হেল্পলাইন নম্বর রাখতে হবে
এনটিএফ এই নির্দেশিকার পাশাপাশি নিজেদের প্রয়োজন মতো সংযোজন করতে পারে।
ন্যাশানাল টাস্ক ফোর্স যে বিষয়গুলির উপর নির্দেশিকা তৈরি করবে তার পাশাপাশি রাজ্যগুলিকেও টাস্ক ফোর্সকে সাহায্য করার জন্য তথ্য তৈরি রাখার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। সেক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের তরফে একটি তালিকা করা হয়েছে। যে উত্তর রাজ্যগুলি তৈরি রাখবে –
১) প্রতি হাসপাতালে কত নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন রয়েছে
২) হাসপাতালে মোট কত বিশ্রাম ইত্যাদির জায়গা রয়েছে, সেখানে কী ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়
৩) হাসপাতালের সব জায়গায় সাধারণ মানুষের অবাধ যাতায়াতের সুযোগ রয়েছে কিনা
৪) ব্যাগ বা লাগেজে নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে কিনা
৫) হাসপাতালের সর্বত্র কী সিসিটিভি ক্যামেরার নজরদারির অধীন
৬) হাসপাতালের বাইরে পুলিশ পোস্ট রয়েছে কিনা
৭) পশ (POSH) আইন অনুযায়ী অন্তর্বর্তী অভিযোগের জায়গা রয়েছে কিনা
৮) রোগীর শোক সামলানোর প্রশিক্ষণ স্বাস্থ্যকর্মীদের রয়েছে কিনা
রাজ্যগুলি ও কেন্দ্রেশাসিত অঞ্চলগুলি একমাসের মধ্যে সব হাসপাতাল থেকে এই তথ্য তুলে সুপ্রিম কোর্টে পেশ করবে।