ডিজিটাল অ্যারেস্ট কেলেঙ্কারি নিয়ে পদক্ষেপ সুপ্রিম কোর্টের

আদালত পর্যবেক্ষণ করেছে যে এই ঘটনাটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই ধরনের ঘটনা বহুবার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

Must read

নয়াদিল্লি: ডিজিটাল প্রতারকদের বাড়বাড়ন্তে উদ্বিগ্ন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। দেশ জুড়ে উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলা ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট কেলেঙ্কারি’র ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত মামলা শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকার ও সিবিআই-এর কাছ থেকে জবাব তলব করেছে। বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ শুক্রবার গভীর বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন যে, কীভাবে জালিয়াত-চক্র ভুয়ো বিচারবিভাগীয় নির্দেশ ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করছে! এই মারাত্মক জালিয়াতি রুখতে আদালত অ্যাটর্নি জেনারেল-এর সহায়তাও চেয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, সাধারণত রাজ্য পুলিশকে তদন্ত দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হত, কিন্তু প্রতারকরা যে সুপ্রিম কোর্টের নামে একাধিক বিচার বিভাগীয় আদেশ, এমনকি পিএমএলএ -এর অধীনে জারি করা ১ সেপ্টেম্বরের একটি ফ্রিজ অর্ডার পর্যন্ত জাল করেছে— তাতে শীর্ষ আদালত চরম উদ্বিগ্ন। সেই জাল আদেশে বিচারক, ইডি-র আধিকারিক এবং আদালতের ভুয়ো সিলমোহর-সহ জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে। শীর্ষ আদালত আরও জানিয়েছে যে, জাল আদালতের নির্দেশ ব্যবহার করা বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনসাধারণের আস্থার মূলে আঘাত হানে এবং এটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে।

আরও পড়ুন-দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কড়া নজরদারির নির্দেশ জারি করল নবান্ন

দুই বিচারপতির বেঞ্চ পর্যবেক্ষণ করেছে, জালিয়াতিতে মুম্বই হাইকোর্টের ভুয়ো প্রক্রিয়া এবং সিবিআই ও ইডি-র তদন্তের মিথ্যা দাবিও ব্যবহার করা হয়েছে। আদালতের মতে, বিচারকের ভুয়ো স্বাক্ষরযুক্ত বিচার বিভাগীয় আদেশ তৈরি করা এবং এই আদালতের নাম, সীলমোহর ও বিচারিক কর্তৃত্বের অপব্যবহার অত্যন্ত গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। এই ধরনের গুরুতর অপরাধকে সাধারণ প্রতারণা বা সাইবার অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যায় না।

আরও পড়ুন-বিজেপি রাজ্যে বেআইনি খনির প্রতিবাদ দলিত যুবককে মারধর, মুখে প্রস্রাব

প্রসঙ্গত, ডিজিটাল অ্যারেস্ট কেলেঙ্কারি হল এমন অনলাইন প্রতারণা, যেখানে সাইবার অপরাধীরা পুলিশ বা সিবিআই-এর মতো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা সরকারি কর্মকর্তার ছদ্মবেশ ধারণ করে তাদের টার্গেট হওয়া প্রতারিতদের ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ দিতে চাপ দেয়। অনেক সময় জালিয়াতির কৌশলে মিথ্যা বিশ্বাস করানো হয় যে তারা আইনগত সমস্যায় জড়িয়ে পড়েছেন এবং মামলা বন্ধ করার জন্য তাদের বিপুল অঙ্কের টাকা জরিমানা দিতে হবে। অর্থবান প্রবীণ দম্পতিদের থেকে ১.৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার একটি অভিযোগের ভিত্তিতে গত মাসেই আদালত স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এই বিষয়টি আমলে নেয়। ওই দম্পতি অভিযোগ করেন যে, ১ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সিং প্ল্যাটফর্ম এবং ফোনের মাধ্যমে সিবিআই, আইবি এবং বিচারিক কর্তৃপক্ষের ছদ্মবেশীরা যোগাযোগ করে। প্রতারকরা হোয়াটসঅ্যাপ এবং ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের ভুয়ো নির্দেশও প্রদর্শন করে। ভুয়ো নথির মাধ্যমে গ্রেফতারের হুমকি দেখিয়ে ওই দম্পতিকে একাধিক ব্যাঙ্ক লেনদেনের মাধ্যমে ১.৫ কোটি টাকা স্থানান্তরে বাধ্য করা হয়েছিল। এদিন আদালতের নজরে আসে যে আম্বালার সাইবার ক্রাইম শাখায় দুটি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে, যা নির্দেশ করে যে প্রবীণ নাগরিকদের লক্ষ্য করে সংগঠিত অপরাধমূলক কার্যকলাপের একটি নির্দিষ্ট ধাঁচ রয়েছে। আদালত পর্যবেক্ষণ করেছে যে এই ঘটনাটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই ধরনের ঘটনা বহুবার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তাই কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য পুলিশের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সর্বভারতীয় ভিত্তিতে কঠোর ব্যবস্থা
নেওয়া প্রয়োজন।

Latest article