সূর্য

বরাবরই প্রেমের গল্প বুনতে ভালবাসেন পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিক। সদ্য মুক্তি পেয়েছে তাঁর রোম্যান্টিক ড্রামা ‘সূর্য’। এক ভবঘুরে নায়ক আর তার নায়িকার গভীর প্রেমের, এক মিষ্টি অপেক্ষার গল্প হল ‘সূর্য’। ছবিতে মুখ্যভূমিকায় রয়েছেন অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়, দর্শনা বণিক এবং মধুমিতা সরকার। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

চোখে না দেখেই শুধু অনুভবে অনুভবে প্রেমের আত্মস্থতা। একটা অপেক্ষা, এমন একজনের জন্য যাকে আমি বহুদিন ধরে খুঁজে চলেছি। হ্যাঁ তার সাড়া পেয়েছি, দূর থেকে তার গন্ধ পেয়েছি, তার অস্তিত্বে নাক, মুখ, শরীর, মন পূর্ণ হয়ে গেছে। এই তো এবার পৌঁছে যাব তার কাছে। আর একটু পথ। এই পৌঁছনোটা কী ভীষণ মধুর তাই না! একটা মিলন অপেক্ষার যেখানে শেষ হবে।

আরও পড়ুন-কেজরিওয়ালের স্বাস্থ্যের অবনতি, প্রতিবাদে আন্দোলনের পথে ইন্ডিয়া

আসলে প্রেমের জন্য এই অন্তবিহীন অপেক্ষাটাই এযুগের মানুষ ভুলে গেছে। প্রেমে এখন অপেক্ষার চেয়ে উপেক্ষাই বেশি। তাই ইট-কাঠ-পাথরের শহরে হৃদয়ের কারবারে লোকসানটাই বারবার হয়। সম্পর্কের ভাঙন দেখতেই অভ্যস্ত হয়ে গেছি আমরা। এহেন পরিস্থিতির মাঝে পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিকের সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা ছবি ‘সূর্য’ যেন দমকা বাতাস। ছবিটা কালিদাসের ‘মেঘদূত’ কাব্যগ্রন্থের কথা মনে করিয়ে দেয়। যে কাব্যগ্রন্থে অপেক্ষারই স্তুতি। এক অদ্ভুত ছবি ‘সূর্য’। ছবির গল্প নতুন নয়, আবার নতুনও। চিরাচরিত প্রেমকাহিনি। গল্পের চলনটা ভারি সুন্দর আর গল্প বলার ধরণটাও বেশ আলাদা। দক্ষিণী ছবি ‘মারা’ এবং মালায়লম ছবি ‘চার্লি’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি হয়েছে ‘সূর্য’। অনেকে রিমেক বললেও পরিচালক একে রিমেক বলতে নারাজ। তাই যাঁরা ‘মারা’ আর ‘চার্লি’ দ্যাখেননি তাঁদের কাছে ছবিটা একবারেই আনকোরা। আর যাঁরা দেখেছেন তাঁদেরও ছবিটা অন্যরকম লাগবে হলফ করে বলতে পারি। ছবির শুরু থেকে শেষ যা সবচেয়ে মনে ধরে তা হল প্রেমের জন্য অপেক্ষা। প্রকৃতির সঙ্গেও রয়েছে এই ‘সূর্য’র সুন্দর এক সমীকরণ।
এই ছবির নায়িকা উমা একজন ফোটোগ্রাফার। বাড়িতে বিয়ের চাপকে উপেক্ষা করতে ঘর ছাড়ে সে। পাত্রপক্ষ দেখতে আসে কিন্তু সে বিয়ে করতে চায় না। পাত্র তার পুরনো বন্ধু। তাই তাকে ম্যানেজ করে নতুনের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে উমা। এক পাহাড়ি গ্রামের পথে নতুন কাজ নিয়ে রওনা দেয়। এই পথে যেতে যেতেই এক অজানা, অচেনা ভবঘুরের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। যার নাম সূর্য। তাকে সে চোখে দ্যাখেনি। সেই পরিচয়টা অনুভবের। কখনও লরির চালক, কখনও চা-ওয়ালা, কখনও ট্যা ক্সি ড্রাইভার— এমন সব মানুষের সঙ্গে আলাপের মধ্যে দিয়ে একটু একটু করে ‘সূর্য’র সঙ্গে তার পরিচয় হয়। লোকজনের মুখে তার মসিহা হয়ে সবার পাশে থাকার গল্প শুনতে শুনতে উমা কখন যেন তার প্রেমে পড়ে যায়। এই ছবিতে কল্পনার একটা বড় জায়গা রয়েছে। ‘আগামীকাল’ নামক আশ্চর্য এক জায়গায় পৌঁছে উমার আলাপ হয় দিয়ার সঙ্গে। দিয়ার থেকেও সূর্যকে আরও অনেকটা জানতে পারে সে। বৃদ্ধ, অসুস্থ একদঙ্গল মানুষও তার সঙ্গে সূর্যের পরিচয় ঘটায়। মৃত্যুর কিনারায় এসে দাঁড়িয়েও যারা হাসে এবং ভরপুর বাঁচে। এদের নিয়েই সূর্যের ঘর। এরাই সূর্যের জীবন। সূর্য একা বাঁচে না, অনেক মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বাঁচে। ‘সূর্য’ কখনও মাঠে লাঙল করে, তো কখনও ফসল তোলে। মুখে তার একগাল হাসি। বিপদের ত্রাতা। সবার মুখে তারই জয়গান। মেঘের ফাঁক দিয়ে টুক করে উঁকি মেরে এক চিলতে রোদ ঢেলে দিয়ে যায়। তাঁকে খুঁজলে পাওয়া যায় না। কিন্তু প্রয়োজনে সে নিজেই এসে ধরা দেয়। আকাশের সূর্যের মতোই ছবির সূর্য ছড়িয়ে দেয় নিজের সব আলোটুকু। নিজের সবটা অন্যকে উজাড় করে দেওয়াতেই তাঁর আনন্দ। কে এই সূর্য? দিয়াই বা কে? এইসব চরিত্রেরাই বা কারা? পরতে পরতে পেঁয়াজের খোলসের মতো খুলে আসতে থাকে প্রেম। সূর্যের প্রেম। সূর্য আর উমার প্রেম। গভীর, অব্যক্ত, বিশ্বাসযোগ্য সেই প্রেম। কিন্তু দেখা হয় কি তাঁদের? শেষ হয় কি অপেক্ষার? এটা জানতে হলে যেতে হবে প্রেক্ষাগৃহে। ভাল লাগার ছবি, ভালবাসার ছবি ‘সূর্য’।

আরও পড়ুন-সবার আচরণই সংযত হওয়া উচিত : স্পিকার

শহরের উষ্ণতম দিনে ও ‘পারিয়া’র সাফল্যের পর অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায় এবার ‘সূর্য’ অবতারে। এলেন দেখলেন জয় করলেন। বেশ সুপুরুষ, মাচো এক প্রেমিকের চরিত্রে দারুণ লেগেছে ছবিতে বিক্রমকে। সঙ্গে দুই রূপসী অভিনেত্রী মধুমিতা সরকার এবং দর্শনা বণিক। দারুণ মানিয়েছে তিনজনকেই। দর্শকদের পছন্দ হয়েছে ছবিটা। ফলে হাউসফুল। এই তিনজন ছাড়া ছবিতে রয়েছেন শ্রীদীপ মুখোপাধ্যায়, প্রসূন গায়েন প্রমুখ।
গোটা ছবির পারস্পরিক রসায়নটাই খুব সুন্দর। একটা মনোরম ল্যান্ডস্কেপ এই ছবির পটভূমি। প্রকৃতি একটা বড়সড় ভূমিকায় রয়েছে ছবি জুড়ে। অরুণাচল এবং উত্তরবঙ্গে পাহাড়ের কোলে হয়েছে শ্যুটিং তাই ভীষণ দৃষ্টিনন্দন পুরো ছবিটা। জনপ্রিয় পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিক প্রেমের ছবিতে সিদ্ধহস্ত। এর আগে তাঁর পরিচালিত ‘সোয়েটার’ বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল দর্শকমহলে। হিট হয় ছবির প্রত্যেকটি গান। ‘প্রেমে পড়া বারণ’ গানটা আজও গেয়ে ওঠেন বহু সঙ্গীতপ্রেমীই। এরপর শিলাদিত্য পরিচালিত ‘হৃদপিণ্ড’ও নির্ভেজাল ভালবাসার ছবি হিসেবে কদর পেয়েছে দর্শকের কাছে। এবার ‘সূর্য’। শিলাদিত্য বরাবরই ভালবাসার গল্প বুনতে ভালবাসেন। এই ছবির প্রযোজক প্রদীপ চক্রবর্তী। চিত্রনাট্য লিখেছেন স্বয়ং পরিচালক। অসাধারণ ক্যামেরা করেছেন অয়ন শীল। ছবির গানের সুর দিয়েছেন লয়-দীপ। ছবির গান গেয়েছেন শিলাজিৎ, সোমলতা, কিঞ্জল আর তিমির। ‘সূর্য’ কি ত্রিকোণ প্রেমের গল্প বলবে নাকি অন্য ধারায় বইবে— এই রহস্য না হয় তোলা থাক। সামনে বসে দেখার মজাটা তো সেখানেই।

Latest article