নাজির হোসেন লস্কর, মগরাহাট: ইংলিশ চ্যানেল, জিব্রালটর প্রণালী পার করে ইতিহাস গড়া সাঁতারু মাসুদুর রহমান বৈদ্য তার আইকন৷ প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে মাসুদুরের লড়াইকে সামনে রেখে প্রতিষ্ঠিত হতে চায় মগরাহাটের বাপী ফকির। এবছর ৩৭১ নম্বর পেয়ে উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে সে৷ তার প্রতিবন্ধকতাকে ঈশ্বরের দান ভেবে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছে৷ এখন স্নাতকে পড়ার জন্য চলছে তোড়জোর৷ বৃহস্পতিবার মগরাহাট ২ ব্লক প্রশাসন ২০২২–এ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতী ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন করে৷ কৃতী প্রাপকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মগরাহাটের কলস হাইস্কুলের ছাত্র ১০০ শতাংশ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বাপী ফকির৷ তাঁর সম্বন্ধে স্কুলের শিক্ষক বলেন, আমরা বাপীকে বলেছিলাম সহযোগী লেখক নিয়ে পরীক্ষা দিতে৷
আরোও পড়ুন-পরিত্যক্ত হাসপাতাল থেকে ৪ জনের দেহ উদ্ধার, চাঞ্চল্য মুম্বইয়ে
কিন্তু বাপী এককথায় নাকচ করে বলে, সে নিজের মতো করে লিখে পরীক্ষা দেবে৷ আমরা আশ্চর্য ওর এই ইচ্ছাশক্তিই ভালো ফল এনে দিয়েছে উচ্চমাধ্যমিকে৷ এদিন বাপী ফকির নিজের সংগ্রামের কথা সবার সামনে তুলে ধরে৷ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বাপী বলে, আমি ঈশ্বরের দান৷ কোনওদিন ভাবতে পারিনি যে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেব এবং পাশ কবর৷ আমি ভাবতাম আমার জীবনটা বেকার৷ কিন্তু তা নয়৷ প্রতিবন্ধী হলেও কিছু করা যায় তা আমাদের দেখিয়ে দিয়ে গেছেন সাঁতারু মাসুদুর রহমান৷ যিনি ইংলিশ চ্যানেল পার করেছে৷ সেই মানুষটাকে দেখে আমার অনুপ্রেরণা জেগে আছে৷ আমিও কিছু হয়ে দেখাব৷ বাপীর আর্জি, এতদিন সবার সাহায্য পেয়েছি৷ আগামীদিনেও এগিয়ে যাওয়া জন্য শিক্ষক ও প্রশাসনের সহযোগিতা চাইছি৷ এছাড়া তার জীবনে ছোট্ট এক ঘটনা তুলে ধরে বাপী৷ যখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত তখন প্রাইভেট টিউটরের মাইনে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না তার পরিবারের৷ অর্থের অভাবে পড়াশুনার ছেড়ে দেওয়ার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছিল৷ এমন সময় এলাকার এক প্রাইভেট টিউটর প্রবীর মণ্ডল তার পড়াশুনার দেখভাল করেন৷ তিনিই বাপীকে মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে সাহস জুগিয়েছিলেন, বাপী তুমি পারবে৷ আজ বাপী উচ্চমাধ্যমিক পাশ৷ সেই গৃহশিক্ষককে এদিন প্রশাংসায় ভরিয়ে দেয় বাপী৷
আরোও পড়ুন-পকেট কাটতে জিএসটি মুড়িতেও!
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার মগরাহাট ২ ব্লক ভবনের সভাঘরে ৩০ জন কৃতী ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে মানপত্র-সহ শিক্ষাসামগ্রী উপহার কিট তুলে দেওয়া হয়। শিক্ষা বিষয়ক রাজ্য সরকারের নানা প্রকল্পের কথা তুলে ধরে মগরাহাট পূর্বের বিধায়ক নমিতা সাহা বলেন, পড়াশুনা এখন আর অর্থনৈতিক বাধার কোনও কারণ নয়। শুধু ইচ্ছাশক্তি থাকলে আগামীদিনে এগিয়ে যাবে। তোমরাই একদিন এলাকার মুখ উজ্জ্বল করবে।
রাজমিস্ত্রির ছেলে পুলিশ আধিকারিক হয়ে এখন মগরাহাট থানার দায়িত্বে আছেন আব্দুস সামাদ আনসারী। তাঁর সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন কৃতীদের সামনে। পাশাপাশি তিনি অভিভাবকদের অনুরোধ করেন শিক্ষকদের প্রতি সহনুভূতি দেখানোর জন্য৷ শিক্ষকরা একটু কড়া পদক্ষেপ নিলে যেন সেটাকে খারাপ ভাবে না নেন৷ বলেন, তাঁদের সময় শিক্ষকদের বেতের বাড়ি খাওয়ার পর বাবা–মায়ের কাছে বলতে ভয় পেতেন কারণ, পুনরায় বাড়িতে পেটন খাওয়ার উপক্রম হয়ে না পড়ে৷
আরোও পড়ুন-প্রথম সিরিজ জয়ে উচ্ছ্বসিত অধিনায়ক
অন্যদিকে, শিক্ষকদের আরও বেশি করে দায়িত্ব নিতে হবে বলে জানান বিডিও সেখ আবদুল্লাহ। শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, স্কুলের সকল পড়ুয়াদের পাশাপাশি কয়েকজন ছাত্রছাত্রী যারা ভালো রেজাল্ট করতে পারে তাদের প্রতি বিশেষভাবে নজর দিন। তাদের পিছনে একটু সময় বেশি দিন৷ এরাই আপনাদের স্কুল, ব্লক, মগরাহাটের নাম উজ্জ্বল করবে। এছাড়া বক্তব্য রাখেন জেলা খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ হায়দার আলী মল্লিক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রদীপকুমার হালদার প্রমুখ।