সিডনি, ২৫ অক্টোবর : ক্রিকেটের আস্ত একটা মহাভারত যেন সিডনি মাঠ। যার পরতে পরতে সুখ-দুঃখের কত ইতিহাস। শনিবাসরীয় ম্যাচও একদিন নিশ্চিতভাবে ঠাঁই নেবে ইতিহাসের পাতায়। খাদের অতল থেকে উঠে আসার এমন দমচাপা কাহিনি লিপিবদ্ধ থাকবে ইট, কাঠ, গ্যালারি আর সবুজ ঘাসে। হয়তো তখন রো-কো জুটি মাঠে থাকবে না। কিন্তু স্কোরবই থাকবে। ডিজিটাল যুগে ভিডিও ফুটেজও। দুই মহাতারকার উচ্ছ্বাসহীন মাইলস্টোন ছোঁয়ার মুহূর্তও থেকে যাবে চিরকাল। নিঃশব্দতাও কত বাঙ্ময় বোঝা গেল ডনের দেশে।
অস্ট্রেলিয়াকে ৪৬.৪ ওভারে গুটিয়ে দিয়েছিল ভারত। সেই রান ৩৮.৩ ওভারে তুলে দিলেন রোহিত শর্মা আর বিরাট কোহলি। রোহিত ১২৫ বলে ১২১ রান করে নট আউট থেকে গেলেন। ১৩টি ৪, ৩টি ছক্কা। বিরাট ৮১ বলে ৭৪ রান করে নট আউট থেকে যান। ৬৯ রানে শুভমন গিল (২৪) হ্যাজলউডের বলে ফিরে যাওয়ার পর এই দুজন মিলে অপরাজিত জুটিতে ১৬৮ রান তুলেছেন। ৯ উইকেটে নিয়মরক্ষার ম্যাচ জিতে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা থেকে বাঁচল ভারত। ১৯৮৪-এর পর কখনও অস্ট্রেলিয়ায় হোয়াইটওয়াশ হয়নি ভারত।
আরও পড়ুন-বিজেপির ওড়িশায় নিজের বাড়িতেই গণধর্ষিতা নাবালিকা
প্রথম দুই ম্যাচে বিরাট শূন্য করেছিলেন। রোহিত প্রথম ম্যাচে ৮ করার পর দ্বিতীয় ম্যাচে করেছিলেন ৭৩। কিন্তু তাতেও মাথার উপর থেকে বিশ্বকাপে বাদের খাঁড়া সরেনি। সিডনিতে নিশ্চিতভাবে কেরিয়ারের শেষ ম্যাচে খেলতে নেমে রো-কো ফুঁ দিয়ে সব সংশয় উড়িয়ে দিলেন। সেইসঙ্গে এটাও দেখালেন যে ফর্ম ব্যাপারটা আসে-যায়, কিন্তু ক্লাস চিরকাল থেকে যায়। তুমি সব কেড়ে নিতে পার, ক্লাস কিছুতেই কাড়তে পারো না।
একদিনের ক্রিকেটে ভারত এক নম্বর দল। গত মার্চে রোহিত শর্মার নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছে। কিন্তু আইসিসি ট্রফি জয়ী অধিনায়ককে সরিয়ে আচমকা নির্বাচকরা শুভমনকে অধিনায়ক করে দেন। বর্তমানে নাকি না থাকলেও চলবে, সামনে তাকাতে হবে। এখানে প্রথম দুই ম্যাচে শুভমনরা দাঁড়াতে পারেননি। কিন্তু সিডনিতে রোহিত ও বিরাট যেই একসঙ্গে রান করলেন, আবার নীল জার্সিধারীদের চ্যাম্পিয়নের মতো দেখাল। দেখে মনে হয়নি সিরিজ ১-২-এ হেরেছে ভারত। তার থেকে বড় কথা, জয় এল দাপটেই।
বিরাটের বিরুদ্ধে ৩৬ রানে আউটের আবেদন উঠেছিল। কিন্তু এলিসের বলে ডিআরএসের আবেদন নাকচ হয়ে যায়। বাকি যাত্রায় তাঁকে নিজের ছন্দে মনে হয়েছে। রোহিত অবশ্য প্রথম থেকেই গুছিয়ে ব্যাট করেছেন। ১০৫ বলে একদিনের ক্রিকেট নিজের ৩৩তম শতরান তুলে নিয়েছেন। হিসেব বলছে এই দুজন বিশ্বকাপের আগে আরও ২১টি ম্যাচ পাবেন। তার মানে নিজেদের মেলে ধরতে অনেক ম্যাচ পাচ্ছেন দুই মহাতারকা।
পারথ আর অ্যাডিলেডে তিন অলরাউন্ডার নিয়ে খেলার পরিকল্পনা কাজে দেয়নি। এখানে দলে দুটি পরিবর্তন করেছেন গম্ভীররা। প্রাক্তনদের লাগাতার চিৎকারের পর অবশেষে শনিবার খেলানো হল কুলদীপ যাদবকে। সঙ্গে এলেন প্রসিধ কৃষ্ণ। বাইরে গেলেন অর্শদীপ সিং ও নীতীশকুমার রেড্ডি। নীতীশকে আটে খেলানো হচ্ছিল লোয়ার অর্ডারে রান করবেন বলে। কিন্তু তিনি সেটা পারেননি। বল হাতেও তাঁর উপর বিশেষ ভরসা করা যায়নি। কুলদীপ কিন্তু ভাল বল করতে পারেননি।
আরও পড়ুন-দক্ষিণ দিনাজপুরে ছয়ে ৬ তৃণমূলের কর্মিসভায় ডাক চন্দ্রিমার
টপ অর্ডারে কোনও পরিবর্তন না করায় যশস্বী জয়সোয়ালের এই সিরিজে খেলার সুযোগ হল না। একই হাল কিপার ধ্রুব জুরেলেরও। উইকেটের পিছনে রাহুল মানে ২০২৭ বিশ্বকাপ ভাবনাতেও সেটাই থাকছে। অস্ট্রেলিয়া এদিন টসে জিতে আগে ব্যাট নিয়েছিল। যাতে বোর্ডে বড় রান তুলে ভারতকে চাপে ফেলা যায়। তাদের জন্য অবশ্য এটা খুব একটা চাপের ম্যাচ ছিল না। সিডনিতে নামার আগে সিরিজ ২-০ করে ফেলেছিলেন মিচেল মার্শরা। বরং চাপ ছিল ভারতের টি ২০ সিরিজের আগে জমি শক্ত করার।
ট্রাভিস হেড (২৯) যখন আউট হলেন, অস্ট্রেলিয়ার রান ৬১। পরের উইকেট মার্শের (৪১)। দল তখন ৮৮/২। প্রথমে সিরাজ আর পরে অক্ষর জোড়া ধাক্কা দেওয়ার পর ভাল শুরুর সুবিধাটা হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ঘটনা হল এরপর ম্যাথু শর্ট (২৪) ও অ্যালেক্স ক্যারি (৩০) সেট হয়েও উইকেট দিয়ে যান ওয়াশিংটন সুন্দর ও হর্ষিত রানা। তবু অস্ট্রেলিয়া ৪৬.৪ ওভারে ২৩৬ রান করতে পেরেছে ম্যাট রেনশর জন্য। ওয়াশিংটন তাঁকে বোল্ড করে দেওয়ার আগে তিনি ৫৬ রান করেছেন। আগের ম্যাচে নায়ক কনোলি করেন ২৩ রান।
৩৯ রানে ৪ উইকেট। চাপ সামলেছেন হর্ষিত। ৪৪ রানে দুই উইকেট ওয়াশিংটনের। কুলদীপকে নিয়ে এত কথা হল। তিনি ৫০ রানে নেন ১টি উইকেট। একটি করে উইকেট প্রসিধ, সিরাজেরও। তবু ভারতীয় বোলিং এদিন ভালই হয়েছে।

