উচ্চমাধ্যমিকে প্রস্তুতির রণকৌশল, তৃতীয় পর্ব

ড. পার্থ কর্মকার : জয়েন্ট ডিরেক্টর অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশন গভঃ অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যান্ড অ্যাডভাইসর ওয়েস্ট বেঙ্গল স্কুল সার্ভিস কমিশন, প্রাক্তন উপসচিব (শিক্ষা), পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।

Must read

উচ্চমাধ্যমিকের (Higher Secondary) বিভিন্ন বিষয়ের সম্মানীয় অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে মতামত বিনিময়ের মাধ্যমে যেসকল বিষয়ভিত্তিক টিপসগুলি পেয়েছি তা তোমাদেরকে উপস্থাপন করছি। এতে তোমরা তোমাদের ভুলগুলো দূর করে অনেক সুন্দর করে উত্তর লিখতে পারবে উচ্চ মাধ্যমিকে (Higher Secondary)। একই সঙ্গে ধন্যবাদ জানাই সম্মানীয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যাঁরা বিভিন্ন বিষয়ে সুন্দর উত্তর লেখার কৌশল আমাকে শেয়ার করেছেন আমাদের প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে।

বিভিন্ন বিষয়ের উপরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস বাংলার ক্ষেত্রে :-  ১) যে কোনও কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, নাটক থেকে উত্তর করবার সময়, অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী সবক্ষেত্রেই ‍‘কবি শরৎচন্দ্র বলেছেন’ কিংবা গদ্য রচনার ক্ষেত্রে, ‍‘কবি বঙ্কিমচন্দ্রের রাধারানী গল্পে’—এইভাবে উত্তর শুরু করে, যা একটি ভাল উত্তরপত্রের জন্য মারাত্মক ত্রুটি।

২) শিক্ষার্থীকে প্রথমে ভাল করে জেনে নিতে হবে যে, সে যে লেখাটা থেকে উত্তর তৈরি করছে, সেটি গল্প, কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ নাকি কোনও উপন্যাসের অংশ।

৩) এক্ষেত্রে গল্প হলে বলতে হবে গল্পকার। নাটক হলে বলতে হবে নাট্যকার। কবিতা থেকে উত্তর করলে লিখতে হবে কবি।

৪) গদ্য রচনার হলেই যে সেটি গল্প হবে তাও নয়। সেটি উপন্যাসের অংশ হতে পারে কিংবা কোনও প্রবন্ধ হতে পারে। এক্ষেত্রে শিক্ষক- শিক্ষিকাদের থেকে জেনে নিতে হবে যে সেটি উপন্যাসের অংশ, নাকি প্রবন্ধ।

৫) যদি উপন্যাসের অংশ হয়, তাহলে লিখতে হবে ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র বা ঔপন্যাসিক বিভূতিভূষণ কিংবা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এমনটা।

৬) যদি প্রবন্ধ হয় তবে লিখতে হবে প্রাবন্ধিক রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী কিংবা প্রাবন্ধিক রবীন্দ্রনাথ লেখা যেতে পারে। যদি রবীন্দ্রনাথের লেখা প্রবন্ধ হয়। অর্থাৎ প্রবন্ধের বেলায় প্রাবন্ধিক লিখতে হবে। তবে উত্তরের মান ভাল হবে।

৭) MCQ-এর উত্তর লেখার সময় কেবলমাত্র সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করে প্রশ্নের দাগ নম্বর দিয়ে উত্তর লিখতে হবে। সমগ্র বাক্য লেখার দরকার নেই।

৮) একটি বাক্যে উত্তর লেখার ক্ষেত্রে, সেই অংশটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে, লেখকের নাম কী, তা আবশ্যিক নয়। সরাসরি এক কথায় উত্তর লিখতে হবে।

৯) ব্যাখ্যাধর্মী প্রশ্নের উত্তরের ক্ষেত্রে উত্তরের একটা অংশ শেষ হলে, বাকি অংশ লেখার সময় অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করতে হবে।

১০) কিংবা একটি আলোচনামূলক প্রশ্নের উত্তরের এক-একটি দিক ধরে, অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করতে হবে।

১১) অবশ্যই কিছু সাধারণ বানান ভুলের দিকে নজর দিতে হবে। যেমন— কোনও অবস্থাতেই শ, ষ, স— এই তিন ‘শ্’কে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। ই, ঈ, উ, উ, ঊ এবং য, জ-এর প্রভেদ রাখতে হবে শব্দের অর্থ অনুযায়ী।

১২) সংসদের নতুন বানান বিধি মেনেই শব্দের বানান শুদ্ধ করতে হবে।

১৩) সাধারণত ছোট ছোট সরল বাক্যে, উত্তর লেখা অভ্যাস করতে হবে।

১৪) জটিল দীর্ঘ বাক্য পরিহার করতে হবে।

১৫) তৎসম শব্দ ব্যবহার করলে দোষ নেই। তবে দৈনন্দিন ব্যবহার্য শব্দগুলির প্রয়োগ ঘটাতে পারলে উত্তর অনেক বেশি স্মার্ট হবে।

১৬) ভাষা সাহিত্যের ক্ষেত্রে বর্ণগুলি পরিচ্ছন্ন ভাবে লিখতে হবে, যাতে পরীক্ষক এক ঝলকে প্রতিটি শব্দ চিনতে পারেনন।

১৭) বক্তব্যকে সুস্পষ্ট ও প্রাঞ্জল করবার জন্য যথাযথভাবে যতি পতন দরকার। অর্থাৎ দাড়ি, কমা, সেমিকোলন এগুলো ঠিক ঠিক জায়গায় সঠিক ভাবে, উপস্থাপন করতে হবে।

১৮) যতি পতনের ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের বিশেষভাবে ভুল হয় প্রশ্নবোধক বাক্য লিখে দাড়ি দিয়ে ফেলে।

১৯) মূল উত্তরের তুলনায় প্রাসঙ্গিক কথা বেশি হলে উত্তরের মান নষ্ট হয়।

২০) সর্বোপরি প্রশ্ন অনুযায়ী সরাসরি উত্তর দেওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

ইংরেজির ক্ষেত্রে

 

১) উচ্চমাধ্যমিক-এর ইংরেজি সিলেবাস-এ চারটি গদ্য, চারটি পদ্য ও একটি নাটক আছে। এইগুলো খুব ভাল করে পড়ে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে এটি প্রশ্নপত্রের PART-B সেকশনের পুরো নম্বর পেতে সাহায্য করবে।

২) ইংরেজি গদ্য, পদ্য ও নাটকের লেখক, কবি ও নাট্যকার-এর নাম সঠিকভাবে জেনে রাখতে হবে।

৩) ইংরেজি গদ্য, পদ্য ও নাটকের বিশেষ বিশেষ শব্দের অর্থ ও অন্যান্য পদের রূপ জেনে রাখা জরুরি। MCQ, SAQ ও গ্রামার ভিত্তিক প্রশ্ন উত্তরের ক্ষেত্রে খুব কাজের হবে।

৩) পরীক্ষার সময় গদ্য, পদ্য ও নাটকের বড় প্রশ্নের উত্তর লেখার ক্ষেত্রে বিভিন্ন খণ্ডিত অংশের উত্তর আলাদা আলাদা করে লিখতে হবে। প্রশ্নের উত্তরের প্রথম অংশে প্রসঙ্গ লিখে দিলে ভাল হয়।

৪) টেক্সটুয়াল গ্রামারের জন্য গদ্য, পদ্য ও নাটকের টেক্সট পড়ার সময় এগুলো নিয়মিতভাবে অভ্যাস করা Comprehension এর জন্য নিয়মিত অভ্যাস করা দরকার। এক্ষেত্রে ভয়ের কিছু নেই। একটু ধৈর্য ধরে পড়ে উত্তর করলে পুরো নম্বর পাওয়া সম্ভব।

৬) রাইটিং-এর জন্য নিয়মিত অভ্যাস প্রয়োজন। রিপোর্টের ক্ষেত্রে শিরোনাম। চিঠির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ফরম্যাট-এ উত্তর লিখবে এবং Precis-এর ক্ষেত্রে শিরোনাম অবশ্যই ঠিকমতো লিখতে হবে। এর জন্য নির্দিষ্ট নম্বর বরাদ্দ থাকে।

৭) PART-B এর উত্তর খুব সতর্কভাবে করতে হবে। MCQ প্রশ্নের উত্তরের জন্য আগে পেন্সিল দিয়ে দাগ দিয়ে পড়ো। এর পর উত্তর লেখো।

৮) SAQ-এর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নির্ভুল বাক্যে উত্তর লিখতে হবে। অন্যথায় নম্বর কাটা যাবে। যে শব্দটি উত্তর হবে সেটির বানান ভুল হলে কোনও নম্বর পাওয়া যাবে না।

৯) পুরো উত্তরপত্রটি রিভিশন করে নেওয়া দরকার।

১০) Comprehension-এর ক্ষেত্রে তোমরা মন দিয়ে বারতিনেক ধীরে ধীরে পড়ো যাতে লেখার ভাবটা বোঝা যায় অর্থাৎ আত্মস্থ করো। এরপর প্রশ্নগুলো পড়ো এবং উত্তর দিতে চেষ্টা করো, দেখবে সমস্ত উত্তর সঠিক হবে।

Latest article