মধ্যপ্রদেশের মান্ডু। অনেকেই বলেন মান্ডবগড়। এখানকার আকাশে-বাতাসে ভেসে বেড়ায় মেষপালিকা রূপসী রূপমতী ও সংগীতজ্ঞ রাজা বায়াজিদ খান তথা বাজ বাহাদুরের প্রেমকাহিনি। বাজ বাহাদুর ছিলেন মালওয়া বংশের শেষ রাজা। ১৫৫৫ থেকে ১৫৬২ সাল পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করেছিলেন। মান্ডু আসলে এক দুর্গনগরী। মালব মালভূমিতে ২০৮০ ফুট উচ্চতায় ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। হাত বদল হয়েছে বহুবার। শেষ পর্যন্ত এক ভূতুড়ে শহরের রূপ নিয়েছে। বহন করে চলেছে যুদ্ধ-প্রেম-সংঘাত-সংস্কৃতির এক অনন্য ইতিহাস। তেমন ভিড় নেই, কার্যত দূষণমুক্ত। রাতের আকাশে ফুটে ওঠে নক্ষত্রের মেলা। আছে বেশকিছু প্রাচীন নিদর্শন। পর্যটকরা ঘুরে দেখেন। সেগুলো কী কী?
আরও পড়ুন-তৃণমূল টোটো ইউনিয়নের সদস্যদের মানবিক মুখ দেখল বর্ধমান
রানি রূপমতী প্যাভিলিয়ন
শহরের অন্যতম দ্রষ্টব্যস্থান আফগান স্থাপত্যে নির্মিত বাজ বাহাদুরের গড়া রূপমতী প্যাভিলিয়ন। এটা প্রমোদ নিকেতন। মহলটি লম্বা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। মান্ডু বাস স্ট্যান্ড থেকে ৫ কিমি দক্ষিণে অবস্থিত। লাগোয়া পাহাড়ের ঢালে রেওয়া কুণ্ড। বাজ বাহাদুর বিশেষ ভাবে তাঁর রানির জন্য এই কুণ্ড খনন করিয়েছিলেন, যাতে রানির কখনও জলের অভাব না হয়। রূপমতী প্যাভিলিয়নের সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। রানি রূপমতী এই মহলে বসে বাজ বাহাদুর প্যালেস এবং নর্মদা নদী— দুইই দেখতে পেতেন। প্রেমের সাক্ষী এই আশ্চর্য প্রাসাদ। এখান থেকে সূর্যাস্ত উপভোগ করতে দারুণ লাগে।
বাজ বাহাদুর প্রাসাদ
এই প্রাসাদের অবস্থান রানি রূপমতী প্যাভিলিয়নের খুব কাছেই। মান্ডু শহরের একটি অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গা। পাহাড়ের পাদদেশে কয়েক শতকের প্রাচীন এই প্রাসাদটির স্থাপত্য পর্যটকদের মুগ্ধ করবেই। প্রাসাদের সংগীতমহলটির অভিনবত্ব আছে। রূপমতী ও বাজ বাহাদুরের গান ও তানের মজলিশ বসত এই মহলে।
আরও পড়ুন-বিজেপি সাংসদ প্রতাপকে এখনই বহিষ্কারের দাবি
নীলকণ্ঠ প্রাসাদ
শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নীলকণ্ঠ প্রাসাদ। আকবরের আমলে ছিল রাজশাসকের প্রমোদপ্রাসাদ। পরে মরাঠাদের আমলে এখানে শিবের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পিছনে আছে একটি জলপ্রপাত। যা মন্দিরের সৌন্দর্যকে অনেকটাই বাড়িয়ে তুলেছে।
জাহাজ মহল
এই মহলটি গিয়াসুদ্দিনের আমলে তাঁর ১৫০০০ দাসীর জন্য বানানো হয়েছিল। মুঞ্জ তালাও ও কপুর তালাও-এর মাঝে জাহাজ মহল বা শিপ প্যালেস। গঠনশৈলী পর্যটকদের অভিভূত করে। চাঁদের আলোয় লেকের জলে পড়ে প্রতিবিম্ব। তখন অদ্ভুত সুন্দর লাগে। মনে হয় সত্যিই যেন জাহাজ ভাসছে। এই মহলের ভিতর রয়েছে বড় বড় হল, স্মৃতিস্তম্ভ আর টার্কিশ বাথ।
হোসাং শাহর সমাধি
আলমগির, দিল্লি ও ভাঙ্গি দরওয়াজা পেরিয়ে পৌঁছে যেতে হবে মান্ডুর বাজার এলাকায়। বাস স্ট্যান্ডের পাশেই শ্বেতপাথরের আসরফি মহল তথা খিলজিরাজ মামুদ শাহর সমাধি। পাশেই রামমন্দির। আসরফি মহলের বিপরীতে জামি মসজিদ, আফগান শিল্পের নিদর্শন। জামি মসজিদ লাগোয়া পাঠান স্থাপত্যে গড়া হোসাং শাহর সমাধি। শ্বেতমর্মরে হিন্দু-মুসলিম-আফগান শৈলীতে তৈরি ভারতের প্রথম সৌধ।
আরও পড়ুন-বর্ধমান স্টেশনে ভে.ঙে পড়ল জলের ট্যাঙ্ক, মৃ.ত ৩, আহত ১২
রয়্যাল গ্রুপ
হাতি পোল পেরিয়ে শুরু রয়্যাল গ্রুপ। প্রথমেই লোহানি কেভস। পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে খাড়া সিঁড়ি। আরও এগিয়ে জাহাজ মহল। বিপরীতে রাজদরবারের তাবেলা অর্থাৎ অশ্বশালা তথা তাবেলি। এই মহলে বসেছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মিউজিয়াম। সামান্য এগোতেই হিন্দোলা মহল তথা সুইং প্যালেস, প্রজাদের সঙ্গে রাজাদের সাক্ষাৎস্থল। জাফরির কাজ অনন্য করে তুলেছে একে। মুঞ্জ তালাও-এর উত্তরে রূপমতীর মহলটি আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত। এই মহলের প্রবেশ ফটকে চম্পা বাওড়ি তথা স্টেপ ওয়েল। চম্পা বাওড়ির উত্তরে রূপমতীর হামাম। এরই পাশে ইন্দো-মুসলিম শৈলীতে তৈরি মান্ডুর প্রাচীনতম দিলওয়ারা খান মসজিদ তথা মকবরা। বাঁয়ে মোঘল ও রোমান স্থাপত্যের অনুপম নিদর্শন সম্রাট জাহাঙ্গিরের তৈরি জল মহল আজ বিধ্বস্ত।
মালিক মুঘিতের মসজিদ
সাগর তালাওকে কেন্দ্র করে সাগর তালাও গ্রুপ। এখানে দেখে নেওয়া যায় মালিক মুঘিতের মসজিদ। তার বিপরীতে ক্যারাভান সরাই, আর এই দুই ভবনের মাঝখান দিয়ে যে রাস্তা রয়েছে, সেটা পৌঁছে দেবে এক অদ্ভুত নামের ভবনে— দাই কি ছোটি বহেন কা মহল। আদতে এটি একটি সমাধি, কাছেই দাই কা মহল। সাগর তালাওয়ের পাড়ে ইকো পয়েন্ট। আরও এগিয়ে রয়্যাল এনক্লেভের কাছে নিরালা নিভৃতে পাহাড়ের বুকে সানসেট পয়েন্ট।
আরও পড়ুন-১০ হাজার কোটি বিনিয়োগে তথ্যপ্রযুক্তিতে নয়া উদ্যোগ, রাজ্যে ১০ কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন
কীভাবে যাবেন?
ট্রেনে বা বিমানে পৌঁছে যান ইন্দোর। সেখান থেকে বাস বা গাড়িতে মান্ডু। দূরত্ব ৮৭ কিমি। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে কেটে যাবে সময়।
কোথায় থাকবেন?
রয়েছে মধ্যপ্রদেশের এমপিটি মালওয়া রিসর্ট ও এমপিটি মালওয়া রিসর্ট, অনলাইন বুকিং www.mptourism.com। আছে প্রচুর বেসরকারি হোটেল। আগে থেকে বুকিং করে গেলেই ভাল।