প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ড। বন্যপ্রাণী এবং বনজ সম্পদে সমৃদ্ধ। অরণ্য অঞ্চলের পাশাপাশি আছে নদী, পাহাড়, হ্রদ এবং জলপ্রপাত। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বরাবর পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। ঝাড়খণ্ডের অন্যতম সেরা গন্তব্য পাত্রাতু ভ্যালি। জায়গাটি রাজধানী শহর রাঁচির এক অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। পাত্রাতুকে বিবেচনা করা হয় একটি সেন্সাস টাউন হিসাবে। পর্যটকদের কাছে দ্বিতীয় মানালি। অবস্থান রামগড় মহকুমায়। রয়েছে পাত্রাতু বাঁধ। টলটলে জল। অন্য পাশে সবুজ গাছপালা। দুচোখ জুড়িয়ে যায়। পাত্রাতু বাঁধটি ভারতীয় প্রকৌশলের জনক স্যার মোক্ষগুন্ডম বিশ্বেশ্বররায়ের পূর্বচিন্তায় স্থাপিত। বাঁধটি পাত্রাতু তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান জলাধার। রামগড় সেনানিবাস এলাকায় জল সরবরাহের জন্য এবং নলকারি নদীর জল সংরক্ষণের জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০৮ মিটার উপরে অবস্থিত। বাঁধের মোট স্টোরেজ ক্ষমতা ৮১ বর্গ মাইল। জায়গাটি ইদানীংকালে দুর্দান্ত ভাবে পর্যটক আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। এই বাঁধ প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে একটি দর্শনীয় স্থান।
আরও পড়ুন-ফ্ল্যাট বিক্রিতে প্রতারণা, ইডির তলব অভিনেত্রীকে
পিথৌরিয়া-পাত্রাতু ভ্যালিটি চিরসবুজ। দেখা যায় রকমারি গাছ। ফুটে থাকে নানারকমের ফুল। পাত্রাতুর দুই পাশ পাহাড় দিয়ে ঘেরা। দূষণমুক্ত প্রকৃতি। সম্পূর্ণ রূপে মানুষের ভিড় বর্জিত একটি এলাকা। বাঁধের পাশে একটি প্রাচীন মন্দির রয়েছে। যা পঞ্চওয়াহিনী মন্দির নামে পরিচিত। প্রতিদিন ভক্ত সমাগম ঘটে। অনেকেই পুজো দেন। এখানে পাহাড় থেকে অনেকগুলো নদী নেমে এসেছে। যা জলাধারে মিশে যায়। জলাধারে বোটিংয়ের ব্যবস্থা আছে।
আরও পড়ুন-মন্দির অনুষ্ঠানে শিল্পীদের অশালীন আক্রমণ উপাচার্যর
রাঁচি এবং পিথাউরিয়া হয়ে ছোটনাগপুর মালভূমি থেকে নেমে আসার সময় পাত্রাতু উপত্যকার এক ঝলক দেখতে পাওয়া যায়। উপত্যকার সর্পিল রাস্তা বাইকার, অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। বিপজ্জনক বাঁক-সহ সবুজ উপত্যকা পর্যটকদের হতচকিত করে দেয় এবং এর বৃত্তাকার ও আঁকাবাঁকা রাস্তা চালকের দক্ষতা পরীক্ষা করার জন্য যথেষ্ট। পর্যটকরা কখনও শাল, গামহার, সেগুন আচ্ছাদিত বন আবার কখনও বা এবড়োখেবড়ো পাহাড় এবং উপত্যকার প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যের সাক্ষী হতে পারেন।
আরও পড়ুন-ডাল মে জরুর কুছ কালা হ্যায়!
এখানকার রাস্তা আক্ষরিক অর্থেই পরিচ্ছন্ন এবং পরিষ্কার। পথে যেতে যেতে চোখে পড়বে চমৎকার কিছু দর্শনীয় স্থান। উড়ে বেড়ায় নানা রকম পাখি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর।
ডাউনহিলে বিখ্যাত পাত্রাতু পার্ক রয়েছে। মূলত একটি বিনোদন পার্ক। পর্যটকদের অবশ্যই পরিদর্শন করা উচিত। কারণ এটি সত্যিই আকর্ষণীয় একটি জায়গা। শিশুরা সম্পূর্ণরূপে নিজের মতো করে উপভোগ করতে পারে এবং বিভিন্নভাবে জায়গাটির মজা নিতে পারে। আছে বোটিং, বাঞ্জি জাম্পিং-এর সুবিধা-সহ অন্যান্য সুবিধাও। উপত্যকার চমৎকার দৃশ্যগুলি মনের মণিকোঠায় ধরে রাখার জন্য আপনাকে যাত্রাকালে জালেবি ঘাটে থামতে হবে। দাঁড়াতে হবে কিছুক্ষণ। সবুজের দিকে তাকালে পাবেন চোখের আরাম। যারা লং ড্রাইভ পছন্দ করেন তাদের জন্য এটি সত্যিই একটি আনন্দদায়ক যাত্রা। একা নয়, যাবেন কয়েকজন মিলে।
আরও পড়ুন-আজ এএফসি’র প্রস্তুতি শুরু
সবমিলিয়ে ঝাড়খণ্ডের পাশাপাশি দেশের সেরা পর্যটন গন্তব্যস্থলগুলির মধ্যে একটি হল পাত্রাতু ভ্যালি এবং বাঁধ৷ পর্যটনের সুবিধার্থে এবং পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য ঝাড়খণ্ড পর্যটন কিছু সদর্থক উদ্যোগ নিয়েছে। যেমন পাত্রাতু লেক রিসর্ট। যা পাত্রাতু বাঁধের পাশে শান্ত উপত্যকায় অবস্থিত। রাজ্য পর্যটন বিভাগের তৈরি। রিসর্টটি পর্যটকদের উপজাতীয় এবং বন্যজীবনের এক ঝলক দেখায় এবং ভ্রমণকারীদের জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দেয়। পাত্রাতুতে ভ্রমণ করা আর প্রকৃতির প্রেমে নতুন করে পড়া, একপ্রকার সমার্থক। কারণ পাত্রতুতে প্রকৃতি তার সৌন্দর্য উজাড় করে ঢেলে দিয়েছে। দুই-তিনদিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন। মন ভাল হয়ে যাবে। দূর হয়ে যাবে মানসিক এবং শারীরিক ক্লান্তি।
আরও পড়ুন-ঘরে-বাইরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ধিক্কার বিজেপিকে
কীভাবে যাবেন?
একমাত্র রেলওয়ে স্টেশন পাত্রাতু। তিনটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। হাওড়া-কলকাতা থেকে সরাসরি আসা যায়। নতুন দিল্লি, পাটনা এবং ভারতের অনেক রাজ্য যেমন পাঞ্জাব ও হরিয়ানার মতো শহরগুলির সঙ্গেও রেলপথে যোগাযোগ রয়েছে। পাত্রাতু যাওয়া যায় রাজ্য হাইওয়ে ২ দিয়ে। এই সড়ক রামগড়ের জেলা সদর এবং রাজ্যের রাজধানী রাঁচির সঙ্গে সংযুক্ত। রামগড় শহর থেকে প্রায় ৩০-৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। রাঁচি থেকে প্রায় ৪০ কিমি দূরে। সড়কপথে এক ঘণ্টারও কম সময়ে পৌঁছানো যায়। ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গের অনেক শহর থেকে এখানকার বাস পাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন?
আছে সরকারি রিসোর্ট। পাশাপাশি আছে বেসরকারি হোটেল এবং লজ। থাকা এবং খাওয়ার কোনও অসুবিধা হবে না। তবে আগে যোগাযোগ করে যাবেন। ভ্রমণের সেরা সময় সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে। নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে পর্যটকদের জন্য এই স্থানটির প্রধান আকর্ষণ হল একঝাঁক রঙিন পরিযায়ী পাখির উপস্থিতি।