ঘুরে আসুন পেনাং

মালয়েশিয়ার পেনাং। এশিয়ার বিখ্যাত দ্বীপ গন্তব্যের অন্যতম। 'প্রাচ্যের মুক্তা’ হিসেবে পরিচিত। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্য, আতিথেয়তা, প্রাচুর্যের জন্য বিখ্যাত। সমুদ্র-ঘেরা জায়গাটা পূরণ করতে পারে বিদেশ ভ্রমণের স্বপ্ন। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

বিদেশ ভ্রমণ বহু মানুষের স্বপ্ন। অনেকের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়, অনেকের হয় না। বাধা হয়ে দাঁড়ায় মূলত পকেট। বর্তমানে দাঁড়িয়ে বিদেশ ভ্রমণ কিন্ত আর সিলেবাসের বাইরে নেই। চাইলে সহজেই কোথাও না কোথাও ঘুরে আসা যায়। নাগালের মধ্যেই রয়েছে মালয়েশিয়া। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশে আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। তার মধ্যে অন্যতম পেনাং। এশিয়ার বিখ্যাত দ্বীপ গন্তব্যের অন্যতম। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জাঁকজমকপূর্ণ ঐতিহ্য, আন্তরিক আতিথেয়তা, প্রাচুর্যের জন্য বিখ্যাত। ‘প্রাচ্যের মুক্তা’ হিসেবে পরিচিত জায়গাটা পর্যটকদের জন্য একটা ওয়ান স্টপ গন্তব্য, যেখানে রয়েছে প্রচুর রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, ডিস্কোথেক, নিশি মার্কেট, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরস এবং অকৃত্রিম সমুদ্র সৈকত। ঝলমলে সমুদ্র সৈকতে বেড়ালে মন ভাল হয়ে যাবে। স্থানীয়ভাবে পুলাউ পিনাং নামে পরিচিত পেনাং একটা কচ্ছপাকৃতির দ্বীপ দিয়ে গঠিত। আয়তন ২৮৫ বর্গ কিলোমিটার।
সমুদ্র সৈকত ছাড়াও পেনাংয়ে আছে বেশকিছু দর্শনীয় স্থান। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম পেনাং রাষ্ট্রীয় যাদুঘর। এখানে চিত্রাঙ্কনের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। ক্যাপ্টেন রবার্ট স্মিথের দশটি মূল চিত্রাঙ্কনের আটটিই এখানে দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও রয়েছে বাবা নিওনিয়ার চিনা মাটির বাসন-কোসন, জুয়েলারি, পোশাক এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় মূল্যবান সামগ্রী, যেগুলির সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব অতুলনীয়।
রয়েছে ফোর্ট কর্নওয়ালিস এবং রাজা এডওয়ার্ড সার্কাস ক্লক টাওয়ার। ৬০ ফুট দীর্ঘ। ১৮৯৭ সালে রানি ভিক্টোরিয়ার হীরকজয়ন্তীতে নির্মিত। কাঠামো মূলত কাঠের। কামান দিয়ে ঘেরা। প্রধান কামানটির নাম সেরি রামবো।

আরও পড়ুন-বড় পর্দা থেকে পার্টির বড় পদে

পেনাং পাহাড় স্থানীয় লোকজন ও পর্যটকদের জন্য জনপ্রিয় মিলনস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৩০ মিটার উঁচু। এখান থেকে জর্জ টাউনের সুন্দর চলমান দৃশ্য ও মালয় উপদ্বীপের উপকুলভূমির দৃশ্য দেখা যায়।
পেনাংয়ের উত্তর-পূর্ব অংশে ১০০ হেক্টর জমিতে রয়েছে চিত্তবিনোদন পার্ক। এখানে কয়েকটি স্বচ্ছ জলের পুল, ফুটপাথ, বিশ্রাম ঘর, শিশুদের খেলার মাঠ এবং বন জাদুঘর আছে, যেখানে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় কাঠসামগ্রী এবং সংরক্ষিত বিভিন্ন প্রজাতির পোকা রয়েছে।
উদ্ভিদ উদ্যান মালয়েশিয়ায় মাত্র একটিই রয়েছে। এর আয়তন ৩০ হেক্টর। জঙ্গলপূর্ণ পাহাড়ে ঘেরা। এখানে বিশাল ক্রান্তীয় উদ্ভিদ ও প্রাণীর সংগ্রহ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে পেনাং ব্রিজের রেপ্লিকা, একটি পাঠাগার।
বহু মানুষ ঘুরে দেখেন বৌদ্ধমন্দির চায়ামাংকালারাম, যা ৫ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে। চায়ামাংকালারাম পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম হেলানো বুদ্ধমূর্তি। এখানে বুদ্ধমূর্তির পিছনে রয়েছে প্রচুর কুলুঙ্গি। ওয়াত চায়ামাংকালারামে রয়েছে মালয়েশিয়ার সর্ববৃহত প্যাগোডা, যা নয় তলা উঁচু এবং মাপে ১৬৫ ফুট। এখানকার বিভিন্ন কমপ্লেক্স জুড়ে রয়েছে রহস্যময় নাগা সর্পমূর্তি, যেগুলো স্বর্গ ও মর্ত্যের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা করেছে। এখানে অবাধে প্রবেশ করা যায়। কিন্তু প্রধান মন্দিরের ভিতরে ছবি তোলার অনুমতি নেই।
পেনাংয়ের রাষ্ট্রীয় মসজিদ গ্রিনলেন উপশহরে ৪.৫ একর জুড়ে বিস্তৃত। এটা মালয়েশিয়ার সবচেয়ে জমকালো মসজিদ হিসেবে চিহ্নিত। এই মসজিদ ভ্রমণের জন্য রাষ্ট্রীয় ধর্ম-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রয়োজন। এখানে পরিদর্শনে আসতে বিশেষ ধরনের পোশাক পরতে হয়।

আরও পড়ুন-জোটের বৈঠকে অভিষেক

এখানে আছে একটি ম্যানসন। অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতকের স্মৃতিবাহী এবং চিনের বাইরে তিনটি টিকে যাওয়া ভবনের অন্যতম। এর প্রাচীন টাইল করা ছাদ, নুড়ি বিছানো প্রাঙ্গণ, কপিল ইটের প্রাচীর এবং স্টিলের বাঁকানো সিঁড়ি, চিনা মাটির দুর্লভ সংগ্রহ, ভাষ্কর্য, খোদাই শিল্প, চিত্রিত কাপড়, নকশা করা কাপড়, ল্যাকার, ব্রোঞ্জের তৈরি সামগ্রী ও অন্যান্য অ্যান্টিক সামগ্রী পর্যটকদের অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। সবমিলিয়ে পেনাং ভ্রমণ আনন্দদায়ক হবে। ভারতীয়দের ভ্রমণের সুবিধার্থে মালয়েশিয়া সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। যাওয়ার আগে বিস্তারিত জেনে নিলে সুবিধা।

Latest article