রান্নাঘরের তৈল পুরাণ

তেল হোক সয়াবিন কিংবা সরিষা, তেলই সর্বেসর্বা, রান্নাঘরের রানি। তেল ছাড়া রান্না বিস্বাদ। কিন্তু জানেন কি এই ভোজ্যতেলের ইতিবৃত্ত? কোন তেল খাবেন। লিখছেন তুহিন সাজ্জাদ সেখ

Must read

ভাল করে রান্না করতে তেল দিতে হয় বেশি, ওসব রান্না খেয়ে সবাই মন ভরে দেয় হাসি। খারাপ রান্না ভাল্লাগে না তবুও মুখে হাসি, থাকে লেগে মুখে সদাই বৌকে ভালোবাসি। কী আর করা যায়— এতসব মুখরোচক পদ, জিভে যে জল আর ধরে না! তেলকই, তেলচিংড়ি, তেলভাত, তেলকোপ্তা, তেলচচ্চড়ি, তেলঝাল, তেলমরিচের ভাজি, তেলডাল, তেলপিঠা, তেলচাটনি, তেলের আচার, সঙ্গে আবার আমতেল, কেউ কি করে মানা! তেল দিয়ে রাঁধা যায় সুস্বাদু সব রান্না।
ভোজ্যতেলের পরিচয়
তেল ছাড়া রান্না, সে ছিল আদিম যুগের গল্প। রান্নায় তেল এখন জরুরি। তরকারি রান্না, ভাজাভুজি, কষানো, পাউরুটির ডিপ্স, সানা, সেঁকা বা পোড়ানোর সময়, এমনকী স্যালাডের ড্রেসিং করতেও তেল দিতে হয়। রান্নায় যে তেল ব্যবহার করি, তা খাবারের সঙ্গে সঙ্গে আমরা খেয়ে নিই, তাই একে বলে ভোজ্যতেল। বেশিরভাগ সময় এই তেল উদ্ভিদের দেহ থেকে পেয়ে থাকি, কিছু ক্ষেত্রে সেটা প্রাণীদেহের তরল চর্বিও হতে পারে।
তবে নিউট্রিশন, বায়োলজি কিংবা কেমিস্ট্রির চোখ দিয়ে দেখলে, ভোজ্যতেল বলতে বোঝায় আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি মিশ্রণ। ফ্যাটি অ্যাসিড একটি অর্গানিক যৌগ যা চর্বি বা তেলের মূল উপাদান, উদ্ভিদ ও প্রাণীর শরীরে প্রাকৃতিকভাবেই সৃষ্টি হয়। খাবারের সঙ্গে ভোজ্যতেল গ্রহণ করার ফলে আসলেই আমাদের দেহে দরকারি ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো যায়, যা আমাদেরকে নানাভাবে সুস্থ এবং সাবলীল থাকতে সাহায্য করে।
তেল দিয়ে রান্না
জলের তুলনায় তেল অনেক বেশি তাপ সহ্য করতে পারে, তাই রান্নায় তেল ব্যবহার করার ফলে রান্নাটিকে পুড়তে দেয় না। রান্নায় খাদ্যগুণ বজায় থাকে, রান্না দেখতে ভাল হয়। তাড়াতাড়ি রান্নার জন্য তেল ভীষণ উপকারী। শুধু কি তাই, তেল রান্নায় একটি সুন্দর গন্ধ এনে দেয়, অনেকসময় তেল তার নিজের গন্ধের ছাপও রান্নার মধ্যে ছেড়ে দেয়। সুন্দর একটি সুবাস বেরিয়ে আসে কড়াই থেকে, নানারকম মশলা যেমন আদা, রসুন, লঙ্কা, হিং, কিংবা পাঁচ ফোড়নের সঙ্গে গরম তেলের সে এক অন্য রসায়ন! সাধে কি আর বলে ঘ্রাণেন অর্ধ ভোজনাং।
আমরা বাঙালিরা রান্নার তেল বলতে প্রথমেই বুঝি সরষের তেল। রান্নাঘরে সরষে তেলের মাহাত্ম্যের শেষ নেই! তবে আজকাল সয়াবিন, সূর্যমুখী, অলিভ, পাম, ক্যানোলা, রাইস ব্রান, পিনাট, তিল, কর্ন বা কুসুম ফুলের তেলও রান্নাঘরের অনেকটা জায়গা জুড়ে রয়েছে। শুধু কি তাই, আমন্ড, ম্যাকাডেমিয়া, পেকান, পিস্টাশিও, অ্যাভোকাডো, ক্যাশিউ প্রভৃতি তেলও রান্নাঘরের আশপাশেই ঘুরঘুর করছে। ঘরের তাপমাত্রায় সাধারণত এরা তরলই থাকে, তবে নারকেল, তাল কিংবা তালশাঁস তেলের মতো বেশ কিছু তেল কঠিন অবস্থায় পাওয়া যায়। এটা অবশ্য ওই তেলের মধ্যে উপস্থিত বিশেষ ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিডের কেরামতি। প্রয়োজনে আমরা যেসব প্রাণীদেহের ফ্যাট বা চর্বি ব্যবহার করি সেগুলো সচরাচর কঠিন অবস্থাতেই পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন-ফাঁকির ফাঁকে মোদি-নির্মলার বাজেট

ভোজ্যতেলের ইতিহাস
রান্নার গন্ধ, সমৃদ্ধি, মসৃণতা, কোমলতা, খাস্তা ভাব, এসবের কথা ভেবেই শুরু হয়েছিল রান্নায় তেলের ব্যবহার। প্রতিটি খাদ্য উপাদানকে সুন্দর ভাবে গলিয়ে রান্নাটিকে সম্পন্ন করতে সাহায্য করে এই তেল। রান্না করা খাবারটি শুকিয়ে যায় না এই তেলের জন্যই। সবচেয়ে বড় কথা রান্নায় তেল আমাদের পরিতৃপ্তি দেয়। একথা ভেবেই আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে প্রাচীন সভ্যতায় রান্নায় তেল ব্যবহার করা শুরু হয়। তখন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ছাড়াই তেল বলকারক, বমনকারক, জীবাণুনাশক, প্রদাহনাশক, চিকিৎসামূলক এবং উপশমকারক হিসেবে ব্যবহৃত হত।
সেদিন যখন আদিম মানুষেরা আগুন ও তাপের ব্যবহার শিখেছিলেন, তারপর তাঁরা উদ্ভিদের দেহ তাতিয়ে তেল নিষ্কাশনের উপায় বাতলেছিলেন, সেই থেকেই শুরু হয় রান্নায় তেল ব্যবহারের প্রথা। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব দু’হাজার বছর আগে চিন ও জাপানের মানুষেরা সয়াবিন তেলের ব্যবহার শুরু করেন; তারও একহাজার বছর আগে দক্ষিণ ইউরোপের মানুষেরা শিখেছিলেন অলিভ অয়েলের ব্যবহার। সমসাময়িক সময়ে মেক্সিকো এবং উত্তর আমেরিকায় পিনাট ও সানফ্লাওয়ার ওয়েল; আফ্রিকা মহাদেশে নারকেল ও তালের তেল, এবং হরপ্পা সভ্যতায় আমাদের দেশে প্রচলিত হয় তিলের তেল। ভারতীয়রা তখন হাঁড়ি ও মুষল ব্যবহার করে তেল তৈরি করতেন।
ভোজ্যতেলের ধরন
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে, তেল দু’রকম উপায়ে উৎপাদন করা হয়। এক, কোনওরকম রাসায়নিক না মিশিয়ে প্রাকৃতিক গন্ধ-সহ যান্ত্রিকভাবে পেষাই করে তেল বার করা; কথায় বলে তিলে আর সরষেতে থাকে তেল সুপ্ত, তেল-কলে না মাড়ালে তেল থাকে গুপ্ত। দুই, প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি তেলের সঙ্গে রাসায়নিক এবং গন্ধ জাতীয় পদার্থ মিশিয়ে তেলকে নানারকম প্রক্রিয়ায় শোষণ করা হয়, যা রিফাইন অয়েল নামে জনপ্রিয়। কৃত্রিম উপায়ে চেহারা, স্বচ্ছতা, গন্ধ, স্থায়িত্ব বদলে ফেলার দরুন তেলের গুণমান কমে যায়, যদিও বাজারে এই ধরনের তেলের চাহিদা তুঙ্গে।
ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে আমাদের সেইসব তেল ব্যবহার করতে হবে যার মধ্যে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত রয়েছে। ফ্যাটি অ্যাসিড বলতে স্যাচুরেটেড, পলিআনস্যাচুরেটেড (পুফা), এবং মনোআনস্যাচুরেটেড (মুফা) ফ্যাটি অ্যাসিড বোঝায়। আমাদের শরীরে এই তিন ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে প্রয়োজন, তাই রান্নায় ব্যবহৃত তেল এমন হওয়া উচিত যার মধ্য দিয়ে আমরা এই তিন প্রকার ফ্যাটি অ্যাসিড যেন পাই। অতিরিক্ত মাত্রায় স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে। দ্যা ইউএস ন্যাশনাল হার্ট, লাং অ্যান্ড ব্লাড ইনস্টিটিউট সাধারণের উদ্দেশ্যে জানিয়েছেন, আমাদের বেশি-বেশি করে পুফা ও মুফা-যুক্ত তেল ব্যবহার করা উচিত। এইসব তেলে রয়েছে ওমেগা ৩, ৬ ও ৯-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাটি অ্যাসিড।
ভোজ্যতেলের ব্যবহার
অনেকসময় বিস্কুট বা রুটি বা ওই জাতীয় খাবার তৈরির সময় প্রয়োজনে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডের সঙ্গে হাইড্রোজেন মিশিয়ে স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডে রূপান্তর করা হয়, একে ফ্যাট হাইড্রোজেনেশন বলা হয়, এতে উপজাত খাবারটি দেখতে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। তবে এরা শরীরের পক্ষে অতটা উপকারী নয়। আবার রান্নার পাত্রের তাপ সহ্য করার ক্ষমতা এবং তাপমাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তেলের ধর্মের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। ঘরের তাপমাত্রায় যা স্বাস্থ্যকর তাই অতিরিক্ত তাপে হয়ে যায় বিষ! যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনও তেল পুড়তে শুরু করে এবং পোড়া গন্ধ বের হয়, তাকে তেলের স্মোক পয়েন্ট বলে, এর চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় তেল পুড়লে তা শরীরের জন্য মারাত্মক। তাই নির্দিষ্ট রান্নার জন্য নির্দিষ্ট ধরনের তেল ব্যবহার করা উচিত, সব রান্নার জন্য একই তেল নয়।
দেহে যদি তেল বাড়ে ভুঁড়ি বাড়ে নিত্য। অতিরিক্ত তেল আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আমাদের দেহে চর্বির পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, কোলেস্টেরল, অ্যাসিডিটি, বদহজম, আলসার, পাকস্থলীর প্রদাহ, লিভারের সমস্যা, ত্বকের সমস্যা প্রভৃতি অসুখের শিকার হই আমরা, অতিরিক্ত এবং অবৈজ্ঞানিক ভাবে তেল ব্যবহারের ফলে। পোড়া তেলের বিষক্রিয়ায় এই সমস্যাগুলো অনেকসময় গুরুতর হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন-শপথ অবৈধ! ঘৃণ্য রাজনীতি রাজ্যপালের

রান্নার তেল সংরক্ষণ
রান্নার তেল ঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে এর গুণগত মান নষ্ট হতে পারে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই সবসময় এটিকে আলো, বাতাস ও তাপের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখাই আমাদের উচিত। তেল অক্সিডাইজড্ হলে এর পুষ্টিগুণ কমে যায় এবং খারাপ গন্ধ তৈরি হয়। তাই কাচের বা স্টিলের বোতলে রেখে ঢাকনা বন্ধ করে রাখতে হবে। রান্নাঘরের উষ্ণতা বেশি হলে তেল দ্রুত নষ্ট হতে পারে। তাই এটি ঠান্ডা ও শুকনো স্থানে রাখতে হবে। তবে তেল যাতে ভাল থাকে তার জন্য কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাও রয়েছে। যেমন: নাইট্রোজেন ফ্লাশিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যাতে অক্সিজেনের উপস্থিতি কমানো যায়। তেল বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলে ফ্রি-র্যাডিক্যাল তৈরি হয়, যা তেলের গুণমান নষ্ট করে। সেই জন্যই তেল ব্যবহারের পর সম্পূর্ণ ঢাকনা বন্ধ করতে হয়, যাতে বাতাস প্রবেশ না করে। সূর্যালোক বা কৃত্রিম আলোতে তেলের অণু ভেঙে যায়, ফলে এটি দ্রুত নষ্ট হয়। তাই অন্ধকার রঙের কাচের বোতল বা ধাতব পাত্রে তেল সংরক্ষণ করা হয়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (যেমন- ভিটামিন ই) যোগ করে ফটো-অক্সিডেশন কমানো হয়। কম তাপমাত্রায় সংরক্ষণ (৫-১৫°C) করা উত্তম, বিশেষ করে অলিভ অয়েল বা ফ্ল্যাক্সসিড অয়েলের ক্ষেত্রে। এছাড়াও পরিবেশবান্ধব ঠান্ডা চেম্বার বা ভ্যাকুয়াম স্টোরেজ ব্যবহার করা হয় শিল্প পর্যায়ে।
আমাদের কথা
রান্নায় তেলের সুবিবেচক ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে বর্জ্য তেলের যথাযথ ব্যবস্থাপনাও জরুরি। এই প্রকার বর্জ্য স্যানিটারি পাইপ, সিউয়ার প্রভৃতির ক্ষতি করে, তাই কখনও কিচেন সিঙ্কে পোড়া তেল ফেলতে নেই, চেম্বারের ভিতরে ফাঁপ সৃষ্টি করে, ফলে ভিতরে নোংরা ওভারফ্লো করে বাইরে বেরিয়ে আসে। প্রয়োজনে সম্ভব হলে, বর্জ্য তেলের রিসাইক্লিং করতে হবে, যা অনেকসময় বায়োডিজেল বা জ্বালানি তৈরিতে সাহায্য করে। সবকিছু মাথায় রেখে রান্নার তেল ব্যবহার করতে হবে আমাদের, প্রয়োজনে পরামর্শ নিতে হবে একজন ডায়েটিশিয়ান কিংবা নিউট্রিশনিস্টের। তবেই না, তোমার রান্না সেরা রান্না এমন রান্না নাই, তোমার রান্না খেয়ে আমি দারুণ খুশি তাই। ধরে না আর হাসি মুখে বৌ যে দারুণ খুশি, খুশির চোটে আহ্লাদী বৌ কয় যে ভালবাসি।

আরও পড়ুন-জমে উঠেছে নাট্যমেলা

ভোজ্যতেলের ভাল-মন্দ
সুপর্ণা মণ্ডল | পুষ্টিবিদ
সাধারণ মানুষের কাছে ভোজ্যতেল হল সেটাই যে তেল দিয়ে রান্না করা যায়। সাধারণ মানুষ তেলের পার্থক্য তেমন বোঝেন না। রান্নার তেল মূলত তৈরি হয় উদ্ভিদ থেকেই।
একজন পুষ্টিবিদের কাছে ভোজ্যতেল সেটাই যার মধ্যে রয়েছে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড, যেমন পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (পুফা), মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (মুফা) এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড সঠিক পরিমাণে বজায় থাকে; এবং সঠিকভাবে সঠিক মাত্রায় সেটা ব্যবহার করতে পারলে শরীরের উপকার হয়।
বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের রান্না, যেমন বাঙালিরা কষিয়ে রান্না করতে বেশি পছন্দ করে, সেইক্ষেত্রে রান্নার তেল এমন হওয়া উচিত যে ব্যবহৃত তেল যেন চট করে পুড়ে না যায়, আবার তার মধ্যে পুফা, মুফা সবকিছুই সঠিক পরিমাণে উপস্থিত থাকে, তাহলেই সেটা স্বাস্থ্যকর ভোজ্যতেল।
সাদা তেলের তুলনায় সরষের তেল অনেক দেরিতে পোড়ে, তাই কষিয়ে রান্না কিংবা ভাজাভুজির ক্ষেত্রে সরষের তেল ব্যবহার করাই ভাল। কোনও একবার রান্না করা বহুদিন ধরে না ব্যবহার করাই ভাল।
তেলের উপর রান্নার স্বাদ কিন্তু নির্ভর করে না। তেল বাছুন তার গুণমান যাচাই করে, স্বাদের কথা ভেবে নয়। গন্ধ আছে মানেই তেল ভাল এমনটা কিন্তু নয়।
সঠিক তেল ব্যবহার না করলে বিশেষ করে পোড়া তেল ব্যবহার করলে আমাদের হার্টের সমস্যা, কোলেস্টেরল বৃদ্ধি, হাইপারটেনশন, ওবেসিটি, হজমের সমস্যা, ত্বকের সমস্যা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
খাওয়াদাওয়া এবং রান্নার তেল ব্যবহারে পরিবর্তন আনতে হবে, তার জন্য অবশ্যই একজন ডায়েটিশিয়ান বা পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে নিলে ভাল। কেননা, বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের রান্না, তাই জেনে নেওয়া উচিত কোন রান্নার জন্য কোন তেল, কতটা পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত। নইলে শরীরের জন্য উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিডের চাহিদা পূরণ হবে না। ফলে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ব। তাই তেল ব্যবহারে বৈচিত্র আনতে হবে।
একজন মানুষের হাইট এবং ওয়েট অনুযায়ী তাঁর প্রতিদিনের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালরির হিসেবে যে টোটাল ফ্যাটের প্রয়োজন, তার মধ্যে ভিজিবল্ ফ্যাট অর্থাৎ যেটা রান্নার তেল থেকে আসে সেটা মোটামুটি ২০–৩০ মিলিলিটারের মধ্যে। এর চেয়ে বেশি শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
তেলের বদলে ঘি খাওয়া যায়। ঘি এমনিতে খুব উপকারী, এর মধ্যে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, কোনও ব্যক্তি প্রতিদিন এক চামচ অর্থাৎ পাঁচ মিলিলিটার ঘি খেলে সেটা উপকারী। তবে খেয়াল রাখতে হবে, ওই ব্যক্তি যেন তাঁর জন্য প্রয়োজনীয় ভিজিবল ফ্যাটের পরিমাণ থেকে ঘিয়ের পরিমাণ বাদ দেন। নইলে হিতে বিপরীত হবে!
ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে রান্নার তেল ব্যবহারের সেরকম কোন সম্পর্ক নেই, তবে ঋতু বদলের সঙ্গে সঙ্গে খাবারের মেনু বদলে যায়। গরমের সময় হালকা পাতলা কম মশলাদার রান্না, অথচ শীতের সময় কষিয়ে রসিয়ে, নানারকম ভাজাভুজি, সঙ্গে পকোড়া প্রভৃতি; খুব স্বাভাবিকভাবেই আমাদের রান্নার তেল বদলাতে হবে। নইলে স্বাস্থ্যহানি ঘটবে। রান্নার তেল পুড়ে গেলেই বিপদ!

Latest article