প্রতিবেদন : দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কালীঘাটে নেত্রীর বাসভবনে সোমবার হয়ে গেল দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক। ২০২৪ কে সামনে রেখে দলের চলার পথ ও অভিমুখ ঠিক করে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশে বিজেপির বিরোধিতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই যে একমাত্র মুখ, এ বিষয়টি সকলেই তাঁদের বক্তব্যে তুলে ধরেন।
বৈঠক শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, মেঘালয়ের পবন চামলিং সহ ১২ জন বিধায়কের সঙ্গে পরিচিত হয়ে খুবই ভাল লাগল। এতদিন মেঘালয় বঞ্চিত হয়ে এসেছে। সামনে মেঘালয়ের ভাল দিন আসছে। এছাড়াও তিনি লিখেছেন, অন্যান্য রাজ্যের নেতারাও এসেছিলেন, যা আমায় আনন্দ দিয়েছে। এখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানুষের জন্য লড়াইয়ের সময়। আর এই লড়াইয়ে আমরা জিতব। তার কারণ, মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। মানুষ আমাদের বিশ্বাস করছেন। জমানুষের দোয়া আমাদের সঙ্গে রয়েছে।
আরও পড়ুন-Meghalaya TMC: আজ কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠক করবেন মেঘালয় প্রদেশ তৃণমূল সভাপতি চার্লস পিংরো
ওয়ার্কিং কমিটির ২১ জন সদস্যের পাশাপাশি সর্বভারতীয় স্তরে সদ্য তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়া হরিয়ানার অশোক তানওয়ার, বিহারের পবন ভার্মা, গোয়ার লিয়েন্ডার পেজও এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। নেত্রীর বাসভবনে বিকেল সাড়ে তিনটে থেকে প্রায় পৌনে পাঁচটা পর্যন্ত চলা এই বৈঠকে ঠিক হয়, আগামিদিনের দিকে তাকিয়ে দলের সংবিধান পরিবর্ধন-পরিমার্জন ও আধুনিকীকরণ করবে তৃণমূল কংগ্রেস। আর এ বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন ও সিদ্ধান্ত নেবেন দলনেত্রী।
আরও পড়ুন-পেগাসাস বিরোধিতা করায় ১২ সাংসদকে একতরফা বহিষ্কার
টার্গেট ২০২৪: তৃণমূল কংগ্রেস ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই যে দেশে বিজেপির একমাত্র অ্যান্টিডোট তা প্রমাণিত বাস্তব। গত বেশ কয়েকবছর ধরে একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসের কাছেই টানা পরাজিত হচ্ছে বিজেপি। অন্য কোনও দলের তাবড় নেতারা যা করে দেখাতে পারেননি তাই করে দেখিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসকে সর্বভারতীয় স্তরে আরও মেলে ধরছেন। বিভিন্ন রাজ্য থেকে একের পর এক নেতা-কর্মী যোগ দিচ্ছেন দলে। ২০২৪-এর মেগা লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, এই বার্তাই দলকে দেন তৃণমূল কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার বলেছেন বিজেপিকে হারানোই তাঁর লক্ষ্য। এদিনের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকেও সে প্রসঙ্গ উঠে আসে।
আরও পড়ুন-BJP: বিজেপি নেত্রীর বিরুদ্ধে প্রার্থী করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২৩ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ
দলীয় সংবিধান পরিবর্তন: তৃণমূল কংগ্রেস এখন সর্বভারতীয় দল। ১৯৯৮ সালে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন দল তৈরি করেন, তখন এক ও একমাত্র উদেশ্য ছিল বাংলা থেকে সিপিএমকে হটানো। সেই লক্ষ্যে দলনেত্রী সফল হয়েছেন অনেক আগেই। ২০২১-এর নির্বাচন পরবর্তী অধ্যায়ে তৃণমূল কংগ্রেস সর্বভারতীয় স্তরে প্রবলভাবে নিজের জোরালো উপস্থিতির বার্তা দিচ্ছে। মূলত দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন। তাঁরই পরিকল্পনায় উত্তর-পূর্বের ত্রিপুরা হোক কিংবা অসম।
আবার আরব সাগরের তীরে গোয়া। কিংবা গোবলয়ের বিহার, হরিয়ানা প্রত্যেকটি জায়গায় দলের সংগঠনকে প্রসারিত ও মজবুত করছেন তিনি। এইসব জায়গার নেতারাও যোগ দিচ্ছেন দলে। আড়ে-বহরে বাড়ছে তৃণমূল কংগ্রেস। ফলে নতুন করে জাতীয় স্তরে ও রাজ্যে অনেককেই দলের ওয়ার্কিং কমিটি-সহ বিভিন্ন কমিটিতে জায়গা করে দিতে হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতেও হবে। তাই দলের সংবিধানে বদল আনতে চায় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সোমবারের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। নতুন করে যখন সময়ের দাবি মেনে তৃণমূল কংগ্রেসের সংবিধান পরিবর্তন-পরিমার্জন ও আধুনিক হবে, দলের অভিজ্ঞ নেতৃত্ব চান এই পরিবর্তনও হোক নেত্রীর হাত ধরেই।
আরও পড়ুন-BJP: বিজেপি নেত্রীর বিরুদ্ধে প্রার্থী করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২৩ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ
ত্রিপুরার লড়াইকে কুর্নিশ: ২১-এর নির্বাচনে বিজেপিকে রুখে দিয়ে বাংলা ও সর্বভারতীয় স্তরে তৃণমূল কংগ্রেস অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। তেমনি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মাত্র দু’মাসে বিজেপির গুন্ডামি-খুনোখুনি-রক্তাক্ত আক্রমণের পরেও ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেস যেভাবে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে তার জন্য এদিন বিশেষভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ও দলের যে সমস্ত নেতৃত্ব ও যুব নেতা-কর্মীরা প্রাণপাত করেছেন তাঁদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ উপস্থিত নেতৃবৃন্দ।
পরবর্তী বৈঠক দিল্লিতে: দীর্ঘদীন বাদে কালীঘাটে নেত্রীর বাসভবনে দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হয়েছে। ২০২৪ কে সামনে রেখে গোটা ভারতবর্ষ চষে ফেলবেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বলেছেন বারবার তিনি দিল্লি যাবেন। এদিন ঠিক হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের পরবর্তী ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হবে দিল্লিতে। যাতে আগামী দিনে জাতীয় স্তরের অনেকেই এই বৈঠকে একসঙ্গে যোগ দিতে পারেন।
আরও পড়ুন-মনোনয়নে উন্নয়নের শপথ
সোমবার বৈঠকে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সুব্রত বক্সি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, যশোবন্ত সিনহা, পবন সিং। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডেরেক ও’ব্রায়েন, সৌগত রায়, মুকুল রায়, গৌতম দেব, শুভাশিস চক্রবর্তী, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, অনুব্রত মণ্ডল, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এদিনের বৈঠকের আগে দলনেত্রী পবন চামলিং সহ তাঁর সঙ্গে আসা গোটা টিমকে অভ্যর্থনা জানান নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন-ইস্টবেঙ্গলের দল নামাতে চাই সঠিক স্ট্র্যাটেজিও
পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন ও পবন ভার্মা বলেন, অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হয়েছে। দলের ডিএনএ পরিবর্তন নয়, সংবিধান পরিবর্তন ও আধুনিক হবে। পবন ভার্মা বলেন, দেশে বিজেপি বিরোধিতার ক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেস সমমনোভাবাপন্ন সব দলকে নিয়েই চলতে চায়। দল কংগ্রেসকে সঙ্গে রাখতে চায়। তবে তৃণমূল কংগ্রেস জাতীয় দল হিসেবে তার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে। এদিন বৈঠকের শুরুতে প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা জানানো হয় নীরবতা পালন করে। বিধায়ক চার্লস পিনগ্রোপকে মেঘালয় তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।