প্রতিবেদন : আগামী বছর লোকসভা ভোট। তার আগে সংসদে শেষ পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২৩-২৪ (Union Budget 2023-24) পেশ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ভোটের দিকে লক্ষ্য রেখে তৈরি কেন্দ্রীয় বাজেটের মূল বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে নতুন আয়কর ব্যবস্থার অধীনে কিছু ছাড় এবং মূলধনী ব্যয়ে বড় বৃদ্ধি।
অর্থমন্ত্রী এদিন তাঁর বাজেট (Union Budget 2023-24) প্রস্তাবে বেতনভোগীদের আয়করে ছাড় নিয়ে বেশ কয়েকটি ঘোষণা করেছেন। বেতনভোগীরা এখন নতুন কর কাঠামো মেনে আয়কর জমা দিতে পারেন। তবে কেউ চাইলে তিনি পুরনো কর কাঠামো অনুযায়ীও আয়কর জমা দিতে পারবেন। অর্থমন্ত্রীর এই নতুন ও পুরনো কর কাঠামো নিয়ে কিছুটা ধন্দে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। যার ফলে অনেকেই বুঝতে পারছেন না নতুন কর কাঠামো, নাকি পুরনো কর কাঠামো কোনটা তাঁদের পক্ষে সুবিধাজনক হবে। আগের কাঠামো অনুযায়ী আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কোনও কর দিতে হত না। সেটা বাড়িয়ে তিন লক্ষ টাকা করেছেন অর্থমন্ত্রী। নতুন কর ব্যবস্থায় আয়কর ছাড়ের সীমা ৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। নতুন কর ব্যবস্থায় ট্যাক্স স্ল্যাবের সংখ্যা এবং হার কমানো হয়েছে। বর্তমানে করের হারের ৬টি স্ল্যাব রয়েছে। তা কমিয়ে ৫টি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন কর ব্যবস্থায় ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে করের হার হবে শূন্য। বাৎসরিক আয় ৩ থেকে ৬ লক্ষ টাকা হলে ৫ শতাংশ কর দিতে হবে। বাৎসরিক আয় ৬ থেকে ৯ লক্ষ টাকা হলে কর দিতে হবে ১০ শতাংশ। অর্থাৎ কারও বার্ষিক আয় ৯ লক্ষ টাকা হলে নতুন কর ব্যবস্থায় তাঁকে ৪৫ হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে। বর্তমানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দিতে হয় ৬০ হাজার টাকা। মানে তাঁর ১৫ হাজার টাকা বা ২৫ শতাংশ সাশ্রয় হবে। পুরনো কর কাঠামোয় এই হিসেবটা অবশ্য একই ছিল। বাৎসরিক আয় ৯ থেকে ১২ লক্ষ টাকার মধ্যে হলে কর দিতে হবে ১৫ শতাংশ হারে। পুরনো হারে যা ছিল ২০ শতাংশ। বর্তমানে কারও আয় ১৫ লক্ষ টাকা হলে নতুন ব্যবস্থায় তাঁকে ১.৫ লক্ষ টাকা কর দিতে হবে। বর্তমান কর কাঠামোয় তাঁকে কর দিতে হয় ১ লক্ষ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা। ১২ লক্ষ টাকা থেকে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় হলে কর দিতে হবে ২০ শতাংশ। যা আগে ছিল ২৫ শতাংশ। বাৎসরিক আয় যদি ১৫ লক্ষ টাকার বেশি হয় তা হলে ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। পুরনো কর কাঠামোতেও ১৫ লক্ষ টাকার বেশি আয়ে ৩০ শতাংশই কর দিতে হত। পুরনো কর কাঠামোর পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কোনও আয়কর দিতে হত না। এখন সেটাই বেড়ে ৭ লক্ষ টাকা হয়েছে। পাশাপাশি ৯ থেকে ১২ এবং ১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়েও কর বেশ কিছুটা কমেছে। ১৫ লক্ষ টাকার বেশি বার্ষিক আয় যাদের, তাদের করের হার ৩০ শতাংশ৷
আরও পড়ুন-শিশুদের বই-চকোলেট দিলেন মুখ্যমন্ত্রী, সোনাঝুরিতে দোকানে বানালেন চা
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নয়া আয়কর কাঠামোয় মানুষের কিছুটা হলেও সাশ্রয় হবে। নতুন কর কাঠামোয় কোনও বেতনভোগীকে ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়কর দিতে হচ্ছে না। কিন্তু কারও আয় যদি ৭ লক্ষ ১ টাকা হয় তাহলে তাঁকে দ্বিতীয় পর্যায়ের কর দিতে হবে। অর্থাৎ ৩ থেকে ৬ লক্ষ টাকা আয়ে পাঁচ শতাংশ বা ১৫ হাজার টাকা এবং ৬ থেকে ৭ লক্ষের হিসেবে প্রায় ১০ হাজার টাকা কর দিতে হবে। আবার আয় যদি সাত লাখের থেকে এক টাকাও বেশি হয় সেখানে একজনকে কর দিতে হবে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। পুরনো কর কাঠামোয় কারও আয় পাঁচ লক্ষ এক টাকা হলে তাঁকে ৩ থেকে ৬ লক্ষের হিসেবে পাঁচ শতাংশ কর দিতে হত। তবে গৃহঋণ-সহ বিভিন্ন বিনিয়োগে ছাড় মিলিত। কিন্তু নতুন আয়কর কাঠামোয় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনও ছাড় মিলবে না। অর্থাৎ কোনও একজন চাকরিজীবী কোথায় কী পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করছেন সরকারের তা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। তিনি মোট যে পরিমাণ আয় করবেন তার উপরেই কর ধার্য হবে। বেতনভোগীদের নিজেদের ইচ্ছামতো যে কোনও একটি কর কাঠামো বেছে নেওয়ার সুযোগও দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী সীতারামন। পুরনো নাকি, নতুন কর কাঠামো কোনটা সুবিধাজনক হবে সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কারও আয় যদি সাত লক্ষের বেশি হয় তাহলে পুরনো কর কাঠামো বেছে নেওয়াই ভাল। কারণ সেক্ষেত্রে বিনিয়োগের উপর ছাড়ের সুবিধা মিলবে। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কোনও আয়করদাতা চাইলে প্রতিবছর আলাদা আলাদা কর কাঠামো বেছে নিতে পারেন৷ অর্থাৎ এক বছর নতুন কর কাঠামোয় কর দিয়ে পরেরবার পুরনো কাঠামোয় ফেরা যেতে পারে৷