অলোক সরকার, রাঁচি
জানসেন আর ব্রিজকের পার্টনারশিপ যখন হু হু করে এগোচ্ছে, তখন দুরু দুরু বুকে রাঁচি তাকিয়ে ছিল রহস্য স্পিনারের দিকে। কুলদীপ এসব পরিস্থিতিতে অব্যর্থ। তাঁর হাতে প্রচুর জুটি ভেঙেছে। রাহুল হাতে বল তুলে দিয়ে হয়তো বলেছিলেন, যা ভাই, কাজটা শেষ করে আয়। কুলদীপ কথা রেখেছেন। প্রথমে জানসেন (৭০) তারপর ব্রিজকে (৭২) কুলদীপের মায়াজালে আটকে যেতেই ভারতের (Team India_South Africa) জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। পরে অবশ্য বশ ৬৭ করে যান। কুলদীপ ৬৮ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন। হর্ষিতের শিকার ৩। প্রথম একদিনের ম্যাচে ভারত জিতল ১৭ রানে।
৪.৪ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা (Team India_South Africa) যখন ১১/৩, তখন ওদের টেস্টের ভারত মনে হচ্ছিল। ভাবুন একবার, রিকেলটন, ডি কক, মার্করামের মতো দাপুটে লোকজন ফিরে গিয়েছেন। ম্যাচের ভাগ্যও তখনই প্রায় নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে। প্রেস বক্সে কে একজন বলে গেলেন, ইন্ডিয়া টিম মাইনাস বিরাট-রোহিত মানে গুয়াহাটি। উল্টোটা হলে রাঁচি। ভুল বলেননি। কে জানে রো-কোর হাত ধরে এই জয়ের পরও গৌতম গম্ভীরের ইসপিস কমবে কি না। তাঁর আর আগারকরের মহাতারকাদের বিচার সভায় বসার কথা। সেটা এখন এলাম-গেলাম গোছের হবে!
সেঞ্চুরির পর বিরাট যে লাফটা দিলেন সেটা দেখার জন্য ভক্তরা যে হাপিত্যেশ করে তাকিয়েছিল তার প্রমাণ পরের ঘটনায়। ততক্ষণে জায়ান্ট স্ক্রিনের নিচের গ্যালারি থেকে এক তরুণ লাফ দিয়ে মাঠে নেমে ছুটতে শুরু করেছে। পিছনে নিরাপত্তারক্ষীরা। ওঁরা যখন নাগাল পেলেন ততক্ষণে ভক্ত তার ভগবানের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। বিরাটের পায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়াও সারা। তাকে যখন পাকড়াও করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তখন গ্যালারি লাফাচ্ছে। সেটা ২২ গজে কোহলিচিত জবাবের জন্য নাকি চল্লিশ হাজার জনতার আবেগের বহিঃপ্রকাশ, সেটা নিয়ে অবশ্য ধন্দ থাকতে পারে।
বিরাট-রোহিতের ভবিষ্যৎ নিয়ে ক’দিন বাদে বোর্ড বৈঠকে বসবে। রবিবাসরীয় দুপুরে ওঁদের ব্যাটে সুনামি দেখে মনে হচ্ছিল এসব বৈঠক আসলে সময় নষ্ট। গুয়াহাটিতে দুমড়ে যাওয়া দলের মনোবল কী অবলীলায় ফেরত আনলেন রো-কো। দ্বিতীয় উইকেটে তুললেন ১৩৬ রান। সেটাও আফ্রিকান বোলারদের ঘাড়ে চেপে। এই দুই লোককে কেউ জিজ্ঞেস করে যে তাঁরা ২০২৭ বিশ্বকাপ পর্যন্ত আছেন কি না। এত কাণ্ডের পর গম্ভীর এখন আর্তনাদ করছেন একসঙ্গে ড্রেসিংরুম খালি হয়ে গেল বলে! কিন্তু এখন? গুয়াহাটি বিপর্যয়ের পর বড্ড বেসুরো বাজছেন ভারতীয় কোচ।
৪৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলার পর রোহিতের এই মাঠে ব্যাটিং রেকর্ড দেখে অনেকে অবাক হন। এর আগে চারবার রাঁচিতে খেলে করেছিলেন ৪৩ রান। এদিন ৫১ বলে ৫৭ করে এলবি জানসেনের বলে। লেগ স্ট্যাম্পের উপর আসা বল অনসাইডে খেলতে গিয়েছিলেন। লাইন মিস করলেন। ডিআরএস নিতে গিয়েও নিলেন না বিরাটের কথায়।
আরও পড়ুন-ফের বাংলাদেশি তকমা, বীরভূমের ৫ পরিযায়ী শ্রমিক ওড়িশায় আটক
সিডনিতে শেষ একদিনের ম্যাচে রোহিত ১২১ নট আউট ছিলেন। বিরাট ৮৪ নট আউট। অপরাজিত জুটিতে উঠেছিল ১৬৮ রান। এখানে সেখান থেকেই শুরু করেছিলেন দু’জনে। শুধু বিরাট সেঞ্চুরি করলেন। রোহিত হাফ সেঞ্চুরি। রোহিতের তাও ক্যাচ ফেললেন ডি জর্জি। কিন্তু বিরাট প্রথম বল থেকেই সাবলীল। ইদানীং স্ট্যান্স বদলেছেন। স্কোয়ার অন স্ট্যান্সে অফ সাইড ওপেন পাচ্ছেন। বেশির ভাগ শট খেললেন সেদিকে।
১০২ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন বিরাট। প্রত্যেকটা শটে ঠিকরে বেরিয়েছে গুয়াহাটির জবাব। শেষমেশ ১২০ বলে ১৩৫। কিছুটা অধৈর্য হয়ে দূর থেকে বার্গারকে মিড অফের উপরে ওড়াতে গিয়েছিলেন। দৌড়ে ক্যাচ ধরলেন রিকেলটন। বিরাট রাজার প্রবেশের সময় গ্যালারির যে উচ্ছ্বাস ছিল, প্রস্থানে সেটা দশগুণ বেড়ে গেল। জনতা লাফাচ্ছে আর তিনি মাঠের চারদিকে ব্যাট দেখাচ্ছেন। এই মাঠে আগে দুটি সেঞ্চুরি করেছিলেন। প্রচুর রান আছে। যেভাবে বিদায় নিলেন তাতে হয়তো ধোনির শহরকে এটাই শেষ বলে গেলেন।
৫০ ওভারে ৩৪৯/৮ তুলেছে ভারত। রো-কো ছাড়া রান পেলেন রাহুল (৬০) ও জাদেজা (৩২)। শুরুতে জয়সওয়াল (১৮) ও পরে ঋতুরাজ (৮), ওয়াশিংটন (১৩) ব্যর্থ। অর্শদীপও ০। লোয়ার অর্ডার খেললে রানটা ৩৫০ পেরোত। পরে বোঝা গেল এটাই যথেষ্ট। ১১ রানে ৩ উইকেট চলে যাওয়ার পর জানসেনকে (৭০) নিয়ে ব্রিজ লড়লেন। পাশে ছিলেন জর্জি (৩৯), বশ ও ব্রেভিস (৩৭)। তাও সাড়ে তিনশো তোলা সম্ভব ছিল না। দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৯.২ ওভারে থামল ৩৩২ রানে।
স্কোরবোর্ড
ভারত: যশস্বী ক ডি’কক বো বার্গার ১৮ (১৬), রোহিত এলবিডব্লু বো জানসেন ৫৭ (৫১), বিরাট ক রিকেলটন বো বার্গার ১৩৫ (১২০), ঋতুরাজ ক ব্রেভিস বো বার্টম্যান ৮ (১৪), ওয়াশিংটন ক বশ বো বার্টম্যান ১৩ (১৯), রাহুল ক ডি’কক বো জানসেন ৬০ (৫৬), জাদেজা ক মার্করাম বো বশ ৩২ (২০), হর্ষিত নট আউট ৩ (২), অর্শদীপ বোল্ড বশ ০ (১), কুলদীপ নট আউট ০ (১)। অতিরিক্ত: ২৩। মোট (৫০ ওভারে ৮ উইকেটে): ৩৪৯ রান। বোলিং: জানসেন ১০-০-৭৬-২, বার্গার ১০-০-৬৫-২, বশ ১০-০-৬৬-২, বার্টম্যান ১০-০-৬০-২, সুব্রায়েন ১০-০-৭৩-০,
দক্ষিণ আফ্রিকা: মার্করাম ক রাহুল বো অর্শদীপ ৭ (১৫), রিকেলটন বোল্ড হর্ষিত ০ (১), ডি’কক ক রাহুল বো হর্ষিত ০ (২), ব্রিৎজকে ক বিরাট বো কুলদীপ ৭২ (৮০), ডি’জর্জি এলবিডব্লু বো কুলদীপ ৩৯ (৩৫), ব্রেভিস ক ঋতুরাজ বো হর্ষিত ৩৭ (২৮), জানসেন ক জাদেজা বো কুলদীপ ৭০ (৩৯), বশ ক রোহিত বো প্রসিধ ৬৭ (৫১), সুব্রায়েন ক রাহুল বো কুলদীপ ১৭ (১৬), বার্গার ক রাহুল বো অর্শদীপ ১৭ (২৩), বার্টম্যান নট আউট ০ (৬)। অতিরিক্ত: ৬। মোট (৪৯.২ ওভারে অল আউট): ৩৩২ রান। বোলিং: অর্শদীপ ১০-১-৬৪-২, হর্ষিত ১০-০-৬৫-৩, ওয়াশিংটন ৩-০-১৮-০, প্রসিধ ৭.২-১-৪৮-১, কুলদীপ ১০-০-৬৮-৪, জাদেজা ৯-০-৬৬-০।
ভারত ১৭ রানে জয়ী।

