টেলি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড

জগদ্ধাত্রী এবং অনুরাগের ছোঁয়া’র হাতেই সেরা জনপ্রিয় ধারাবাহিকের খেতাব। অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মাকে মরণোত্তর বিশেষ কৃতী সম্মান প্রদান। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ৪১টি ক্যাটাগরিতে ৬৬ জন শিল্পীকে সম্মান জানানোর মাধ্যমে নাচে গানে জমজমাট এ-বছরের পশ্চিমবঙ্গ টেলি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড ২০২৩, জানালেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

টেলিভিশনের ধারাবাহিকের চরিত্রগুলি যেন ঠিক আমাদের পাশের বাড়ির সদস্যটি। বাঙালির ড্রয়িং রুম থেকে ডাইনিং রুম চর্চার অন্যতম রসদ তাঁরা। দর্শকরা যেমন এই সব মেগা ধারাবাহিকগুলো দেখে আনন্দ পান ঠিক তেমনই শিল্পীরাও অক্লান্ত পরিশ্রম করে, নানা টানাপোড়েন সামলে হাসিমুখে দর্শকদের আনন্দ দিয়ে থাকেন। তাই দর্শকদের প্রশংসা যেমন তাঁদের কাছে শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি তেমনই কাজের স্বীকৃতি পাওয়াটাও তাঁদের কাছে সমান মর্যাদার। সেই স্বীকৃতিই হল পশ্চিমবঙ্গ টেলি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড (Tele Academy Award) যা রাজ্যসরকার দেয় টেলি ইন্ডাস্ট্রিকে। এর পিছনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি তিনি হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা টেলিভিশন দুনিয়ার অন্যতম সেরা সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান এটি। বাংলা টেলিভিশনের সঙ্গে যুক্ত শিল্পীদের সম্মান জানাতে, রাজ্যের সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় এই অ্যাওয়ার্ডের। ২০১২ সালে গঠিত হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ টেলি অ্যাকাডেমি। ২০১৪ সাল থেকে প্রতি বছর প্রদান করা হয় টেলি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড (Tele Academy Award)।

এ-বছর মোট ৪১টি ক্যাটেগরিতে ৬৬ জনকে এই সম্মান জানানো হল। সেই তালিকায় অন্যতম নাম স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর। বৃহস্পতিবার ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে হাজির ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের শুভসূচনা করেন। মাননীয়া শুধু এই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত নন, যেসব ধারাবাহিকগুলি সম্প্রচারিত হয় তিনি নিজে সেগুলো দেখেন, এই বিষয়ে তাঁর নিজস্ব মতামতও রয়েছে। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমাদের শিল্পীদের এত গুণ, যে আমার বিশ্বাস খুব তাড়াতাড়ি আমাদের শিল্পীরা মুম্বইয়ের মতো বড় ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে নেবে। তাঁরা আমাদের সত্যিই গর্বের। তিনি এও বলেন, পছন্দের ধারাবাহিক একদিন না দেখতে পেলে ভাবতে থাকি পরের দিন কী দেখাবে।

আরও পড়ুন-পুলিশ আবাসনের ঘর থেকে উদ্ধার ট্রাফিক সার্জেন্টের ঝুলন্ত দেহ

টেলি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের জন্য মুখিয়ে থাকেন বাংলা টেলিভিশনের শিল্পী, কলকুশলীরা সেই সঙ্গে অনুরাগীরাও অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন জানার জন্য কে হবেন সেরার সেরা। প্রত্যাশা মতোই
এই মুহূর্তে বাংলা টেলিভিশনের সবচেয়ে চর্চিত এসভিএফ এবং ব্লুজ প্রোডাকশনের দুই মেগা সিরিয়াল ‘অনুরাগের ছোঁয়া’ এবং ‘জগদ্ধাত্রী’র হাতেই উঠল সেরার সম্মান। পাশাপাশি অনুষ্ঠানের বড় পুরস্কারগুলি ছিনিয়ে নিল এই দুই সিরিয়ালের কলাকুশীলবেরাও। সেরা জুটির পুরস্কার যৌথভাবে ছিনিয়ে নিয়েছেন ‘অনুরাগের ছোঁয়া’র সূর্য-দীপা এবং ‘বাংলা মিডিয়াম’-এর বিক্রম-ইন্দিরা। সেরা অভিনেত্রী ‘জগদ্ধাত্রী’র অঙ্কিতা, সেরা অভিনেতা ‘অনুরাগের ছোঁয়া’র সূর্য অর্থাৎ দিব্যজ্যোতি দত্ত। গুড্ডি ও জগদ্ধাত্রী ধারাবাহিকের গীতিকার ও সুরকার হিসাবে টেলি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড পান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও তিনি সেটা নেননি। এড়িয়ে গেছেন মজার ছলে।
গত বছর ২০ নভেম্বর না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। কিন্তু, শিল্পীর কাজই তাঁর স্বীকৃতি। বৃহস্পতিবার অভিনেত্রীকে মরণোত্তর বিশেষ কৃতী সম্মান প্রদান করা হয়। অভিনেত্রীর বাবা-মা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। শিল্পী ঐন্দ্রিলা শর্মার এই সম্মান প্রাপ্তি নিয়ে বন্ধু সব্যসাচী জানালেন ‘২৫ বছর সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই ও চলে গেল। এর মধ্যে ও যে ক’টা কাজ করেছে তাতে ওকে মানুষ মনে রেখেছে। একজন শিল্পী হিসাবে এটা বিরাট প্রাপ্তি। ওর বাবা-মা এসেছিলেন। এটা তাঁদের কাছে একদিকে যেমন কষ্টের মুহূর্ত, তেমন গর্বেরও বটে।’ আবার অভিনেতা সব্যসাচী চৌধুরীর ‘রামপ্রসাদ’-ধারাবাহিকে তাঁর অভিনয় নিয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘রামপ্রসাদ সব্যসাচীর তুলনা হয় না।’ সব্যসাচীও পেয়েছেন পুরস্কার। সেরা অভিনয় ক্যাটেগরিতে জয়ী হয়েছেন অভিনেতা কৌশিক সেন। প্রিয় ছেলে বিভাগে এবার যুগ্মভাবে জয়ী হয়েছেন ‘হরগৌরী পাইস হোটেল’ ধারাবাহিকের শঙ্কর ওরফে রাহুল মজুমদার এবং ‘গাঁটছড়া’র ঋদ্ধি তথা অভিনেতা গৌরব চট্টোপাধ্যায়। অপরদিকে প্রত্যাশা মতোই প্রিয় বৌমার খেতাব জিতেছে ‘অনুরাগের ছোঁয়া’র দীপা অভিনেত্রী স্বস্তিকা ঘোষ। সেরা মা বিভাগে পুরস্কার জিতে নিয়েছেন অভিনেত্রী জুন মালিয়া (গাঁটছড়া)। টেলি অ্যাকাডেমির বিশেষ সম্মানে সম্মানিত অভিনেতা ও কবি নিমাই ঘোষ। আজীবন অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পুরস্কৃত হয়েছেন অভিনেতা সুমন্ত মুখোপাধ্যায়।

Latest article