মিষ্টি মুখের নায়িকা আয়েশা জুলকা। নয়ের দশকে তিনি ছিলেন বহু যুবকের ক্রাশ। পর্দায় তাঁর হাসিমুখ ভেসে উঠলে ঢেউ উঠত অনেকের বুকে। সলমন, আমির, অক্ষয়ের বিপরীতে বহু হিট ছবিতে অভিনয় করেছেন। তবে চল্লিশ পেরোতে না পেরোতেই হারিয়ে গিয়েছেন। কেউ তাঁকে মনে রাখেনি।
‘রোজা’র নায়িকা মধু। ‘ফুল অউর কাঁটে’ দিয়ে বলিউডে পা রাখেন। অজয় দেবগণের বিপরীতে। প্রথম ছবিই সুপারহিট। সেই সময় হেমা মালিনীর সঙ্গে তুলনা হত। ঝুলিতে আরও কয়েকটি ছবি। তবে দীর্ঘ হয়নি তাঁর কেরিয়ারও। চল্লিশ পেরোতেই গুরুত্বহীন হয়ে যান।
আরও পড়ুন-চারদিন পর চতুর্থ দফার ভোটের হার প্রকাশ কমিশনের, বাংলায় ভোটের হার বেড়েছে
উদাহরণ দেওয়া যায় আরও। প্রশ্ন হল, কেন এমনটা হয়? এঁরা প্রত্যেকেই দুর্দান্ত অভিনেত্রী। তবু একটা সময়ের পর হয়েছেন নির্মাতা, নির্দেশকদের উদাসীনতার শিকার। ক্ষোভে ফুঁসেছেন অনেকেই। তবে মুখ ফুটে কেউই বলতে পারেননি। হালে মুখ খুলেছেন কালকি কোয়েচিলিন। ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’র অভিনেত্রী কামান দেগেছেন, ‘‘চল্লিশ বছরের ঊর্ধ্বে মহিলাদের প্রতি মানুষ কঠোর। একটু বয়স হয়ে গেলেই তাঁদের কাজ কমিয়ে দেওয়া হয়।’’ এখানে না থেমে তিনি আরও বলেছেন, ‘‘আজ অনেক প্ল্যাটফর্ম পাওয়া গেলেও মানসম্মত কাজ পাওয়া বিরল। চল্লিশ বছরের বেশি বয়সি মহিলাদের পর্দায় দেখানোর জন্য কোনও গল্প নেই। এই বয়সি মহিলাদের জীবন সম্পর্কে দর্শকরা কিছুই জানেন না। তাঁরা জানেন না আমাদের শরীরে কী ঘটে, মনে কী ঘটে। নারী লেখক এবং পরিচালকদের আরও বেশি এগিয়ে আসা উচিত।’’
কালকিকে শেষবার বড়পর্দায় দেখা গিয়েছে ‘খো গয়ে হাম কাহাঁ’ ছবিতে। গত কয়েক বছরে তাঁর জীবনে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বিয়ে ভেঙেছে। নতুন সম্পর্কে জড়িয়েছেন। মা হয়েছেন। তাছাড়া তিনি কোনওদিনই খুব বেশি কাজের দিকে ঝোঁকেননি। হাতেগোনা কয়েকটি ছবিতেই সন্তুষ্ট থেকেছেন। কোয়ান্টিটির থেকে কোয়ালিটিতে বেশি বিশ্বাসী তিনি। মূল চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন খুব কম ছবিতেই। তবু ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আজ তাঁর এই উপলব্ধি।
আরও পড়ুন-পণ্ড ম্যাচ, তিনে সানরাইজার্স
সাধারণ নায়িকা বা অভিনেত্রীদের নাহয় করুণ অবস্থা, কিন্তু একটা সময় যাঁরা বছরের পর বছর পয়লা নম্বরে ছিলেন, চল্লিশ পেরোনোর পর তাঁদের কী দশা হয়েছে? নয়ের দশকে এক নম্বর নায়িকা মাধুরী দীক্ষিত। আটের শেষে তাঁর ‘তেজাব’ সুপারহিট হয়েছিল। সেই সময় টপে ছিলেন শ্রীদেবী। ধীরে ধীরে জায়গাটা নিজের দিকে টেনে নেন মাধুরী। ‘সাজন’, ‘খলনায়ক’, ‘রামলক্ষ্মণ’, ‘থানেদার’, ‘বেটা’, ‘হাম আপকে হ্যায় কৌন’, ‘রাজা’ প্রভৃতি ছবির দৌলতে তিনি হয়ে ওঠেন নম্বর ওয়ান। ‘দেবদাস’-এ যখন অভিনয় করেন, তখন তিনি ৩৫। তারপর দীর্ঘ বিরতি। তার মাঝেই ডুব দিয়েছেন সংসারে। বিয়ে, সন্তান ইত্যাদি। ২০০৭-এ কামব্যাক। ‘আজা নাচলে’ ছবির মাধ্যমে। তখন তিনি চল্লিশ। বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল ছবিটি। পরবর্তী সময়ে আরও কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। তবে সাফল্য পাননি। নিজেকে লাইম লাইটে রাখার জন্য এখন বিচারকের আসনে বসেন টেলিভিশনের রিয়েলিটি শোয়ে।
শ্রীদেবীর ক্ষেত্রেও ঘটেছে একই ঘটনা। চল্লিশ পেরোনোর পর বড়পর্দায় খুব বেশি কাজ করেননি। প্রযোজক স্বামীও তাঁকে কেন্দ্র করে ছবি তৈরির কথা ভাবেননি। যদিও চল্লিশ পেরোনোর পরেই শ্রীদেবী ‘ইংলিশ ভিংলিশ’-এ অভিনয় করেছিলেন। তাঁর কাজ উচ্চপ্রশংসিত হয়েছিল। যদিও সেটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
শ্রীদেবী-মাধুরীর পর বলিউডে যাঁর নামটি সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়, তিনি জুহি চাওলা। তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ থেকে। তারপর একে একে দর্শকদের উপহার দিয়েছেন ‘বোল রাধা বোল’, ‘রাজু বন গয়া জেন্টলম্যান’, ‘ডর’, ‘হাম হ্যায় রাহি পেয়ার কে’, ‘ইয়েস বস’, ‘দিওয়ানা মস্তানা’ প্রভৃতি হিট ছবি। তারপর একটা সময় আবদ্ধ হন বিবাহবন্ধনে। কমে যায় ছবির কাজ। পরবর্তী সময়ে কিছু ছবিতে তাঁকে দেখা গিয়েছে। তবে আগের মতো সাফল্য পাননি। চল্লিশ পেরোতেই পা রেখেছেন ব্যবসায়। বর্তমানে তিনি আইপিএলের কলকাতা নাইট রাইডার্স দলের মালকিন।
আরও পড়ুন-বিজেপি বাংলাকে ভালবাসে না এবার ওদের বদলে দিন : নেত্রী
কাজল, করিশ্মা, শিল্পা, টাবু, রবিনা, ঊর্মিলা, সোনালি, মনীষা, রানি প্রমুখ নয়ের দশকের নায়িকারাও চল্লিশ পেরোনোর পর বড় পর্দা থেকে প্রায় হারিয়ে গিয়েছেন। এঁদের অনেকেই বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছেন ছোটপর্দা। কেউ কেউ কামব্যাক করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। এঁদের ক্ষেত্রে সমস্যা হল, এঁরা সবাই ছিলেন টিপিক্যাল হিরোইন। নায়ক-প্রধান ছবিতে এঁদের শো-পিস হিসেবে ব্যবহার করা হত। মূলত রোম্যান্টিক দৃশ্যে এবং গানে। এঁদের যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে খুব কম ছবিই তৈরি হয়েছে। যেগুলো হয়েছে সেগুলো আহামরি চলেনি। চল্লিশ পেরিয়ে যাওয়ার পর এঁদের রোম্যান্টিক চরিত্রে বেমানান লেগেছে। অন্য ধরনের চরিত্রেও দর্শকরা মেনে নিতে পারেননি। ফলে কমেছে চাহিদা। ধীরে ধীরে আউট হয়ে গিয়েছেন মূল ধারার ছবি থেকে। বর্তমানে ছোটপর্দার রিয়েলিটি শোগুলো এঁদের নাম এবং ফেস ভ্যালু কাজে লাগাচ্ছে।
নয়ের দশকের বলিউড নায়িকারা যেটা পারেননি, সেটা কিন্তু করে দেখিয়েছেন বাংলার ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। চল্লিশ পেরোনোর পরেও তাঁকে ভেবে লেখা হচ্ছে নতুন স্ক্রিপ্ট। গত কয়েক বছরে তিনি অভিনয় করেছেন ‘রাজকাহিনী’, ‘প্রাক্তন’, ‘দৃষ্টিকোণ’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ছবিতে। এই ছবিগুলোর কোনওটাতেই তিনি কম বয়সি চরিত্রে অভিনয় করেননি। ফুটিয়ে তুলেছেন নিজের বয়সের চরিত্র। পেয়েছেন সাফল্য। বাংলায় আরও কেউ কেউ চল্লিশের পর সাফল্য পেয়েছেন।
আরও পড়ুন-দুই ভারতীয় মশলায় নিষেধাজ্ঞা নেপালে, এভারেস্ট ও এমডিএইচ সংস্থার পণ্য
এই দেশের চলচ্চিত্র জগৎ নিঃসন্দেহে পুরুষতান্ত্রিক। বরাবরই। মাঝবয়সি নায়করাও চান তাঁদের বিপরীতে তরুণীদের কাস্ট করা হোক। বেশি বয়সি মহিলাদের জন্য খুব বেশি চরিত্র লেখা হয় না। চল্লিশোর্ধ্ব অভিনেত্রী মানেই তাঁদের জন্য বরাদ্দ পার্শ্বচরিত্র। সৌন্দর্যকে সবসময় ধরা হয় যৌবনের সমানুপাতিক হিসাবে। এই পরিস্থিতিতে বুদ্ধি খাটিয়ে নিজেদের বদলাতে হয়। যে-সমস্ত অভিনেত্রী সেটা পারেন, তাঁরা টিকে যান। বছরের পর বছর। বাকিরা হারিয়ে যান।
চল্লিশের আগে সফল ছিলেন অপর্ণা সেন। চল্লিশের পরেও তিনি সফল। অভিনেত্রী এবং পরিচালক হিসেবে। বলিউডে ওয়াহিদা রেহমান, শাবানা আজমি, রাখি গুলজার, জয়া বচ্চন, হেমা মালিনী, রেখা— দুটি পর্বেই নিজেদের সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। যদিও কমিয়েছেন ছবির সংখ্যা। কিরণ খের মূল ধারার ছবিতে এসেছেন মোটামুটি চল্লিশ পেরোনোর পর।
আরও পড়ুন-দুই ভারতীয় মশলায় নিষেধাজ্ঞা নেপালে, এভারেস্ট ও এমডিএইচ সংস্থার পণ্য
মহানায়িকা সুচিত্রা সেন ‘সাত পাকে বাঁধা’ এবং ‘উত্তর ফাল্গুনী’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন চল্লিশ ছুঁই-ছুঁই বয়সে। চল্লিশের পর তাঁকে দেখা গেছে ‘দেবী চৌধুরানী’, ‘মমতা’ ছবিতে। বলিউডে তাঁর হিট ‘আঁধি’ তৈরির সময় তিনি চলে গিয়েছিলেন পঞ্চাশের কোটায়। ফলে তাঁর সাফল্যেও বয়স বাধা হয়নি। এই পর্বে তিনি অভিনয় করেছেন মূলত নিজের বয়সি চরিত্রেই। বিদেশে বহু অভিনেত্রীই কেরিয়ার শুরু করেন চল্লিশের পর। এই বয়সে নারী-শরীরে নব বসন্ত লাগে। অন্যরকম সৌন্দর্যের জন্ম হয়। ফুটে ওঠে ব্যক্তিত্ব। সৌন্দর্য এবং ব্যক্তিত্বের সংমিশ্রণে নারীর সেই রূপ হয়ে ওঠে মোহময়ী। তবে যথার্থভাবে উপস্থাপন করা দরকার। সেটা অনেক সময়ই হয়ে ওঠে না। তাই কারও কারও মনে হতাশার জন্ম হয়। শোনা যায় হাহাকার।
এই মুহূর্তে বাংলায় বেশ কয়েকজন চল্লিশোর্ধ্ব অভিনেত্রী বিনোদন জগতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে একজন রূপাঞ্জনা মিত্র। তাঁর মতে, ‘‘এখন কিন্তু চল্লিশোর্ধ্ব অভিনেত্রীদের জয়জয়কার চলছে। বিদেশি অভিনেত্রীদের কাছে ফর্টি হল নিউ টোয়েন্টি। সব দেশের, সব ভাষার, সব ধরনের ছবিতে চল্লিশোর্ধ্ব অভিনেত্রীদের যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘চরিত্রের বয়স হয়। প্রয়োজন হয় সেই বয়সি অভিনেত্রীর। ফলে অভিনেত্রীদের বয়স চল্লিশ পেরিয়ে গেলে গুরুত্ব কমে যাচ্ছে, মান্ধাতার আমলের এই ধ্যানধারণা দূর করতে হবে।’’
আরও পড়ুন-মোদিজি! বিদায়ের সুর তুমি শুনতে কি পাও…
‘এক আকাশের নিচে’র ‘পাখি’ অভিনেত্রী কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটা সময় বহু ধারাবাহিক এবং সিনেমায় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। বর্তমানে সংসার সামলানোর পাশাপাশি চুটিয়ে কাজ করছেন। বিভিন্ন ছবিতে তাঁকে দেখা যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে। তিনি কথায় কথায় জানালেন, চল্লিশ পেরিয়ে গেলে কাজ পাওয়া যায় না, এটা পুরোনো ধারণা। এখন সময় অনেক বদলেছে। আমার বিশ্বাস আরও বদলাবে। এই সময়ে যে কোনও বয়সের অভিনেত্রীই কাজ পেতে পারেন। চল্লিশোর্ধ্ব অভিনেত্রীর জনপ্রিয়তা নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘একজন কমবয়সি অভিনেত্রীর যতটা ফ্যান ফলোয়ার হয়, চল্লিশোর্ধ্ব অভিনেত্রীর ততটা হয় না। হওয়া সম্ভবও নয়। বিশেষত যাঁর বিয়ে এবং সন্তান হয়ে গেছে। সংসার জীবনে আবদ্ধ। যদিও বিদেশে ঘটনাটা অন্যরকম। জেনিফার লোপেজ এই বয়সেও দারুণ জনপ্রিয়। তাঁর হাতে প্রচুর কাজ।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের মানসিকতা বদলাতে একটু সময় লাগবে। যদিও আগের থেকে পরিস্থিতি অনেক ভাল হয়েছে। কম বয়সি মেয়েদের পাশাপাশি এখন বয়স্কা মহিলাদের নিয়ে প্রচুর ছবি হচ্ছে। তুলে ধরা হচ্ছে তাঁদের জীবনের গল্প, সমস্যর গল্প। বলিউডে তো বটেই, আমাদের এখানেও।’’
আটের দশকে ছোটপর্দার ‘তেরোপার্বণ’ ধারাবাহিকের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন খেয়ালী দস্তিদার। চল্লিশ পেরিয়েছেন কবেই। আজও দাপিয়ে কাজ করছেন মঞ্চ, টেলিভিশন, সিনেমায়। তিনি জানালেন, চল্লিশ পেরিয়ে গেলে কাজ পাওয়া যায় না, মুম্বই বা বিদেশের প্রেক্ষিতে কথাটার কোনও ভিত্তি নেই। নানা বয়সে নানা ধরনের চরিত্র হয়। বরং আমাদের এখানে বয়স হয়ে গেলে অভিনেত্রীদের কাজ পেতে বা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র পেতে সমস্যা হয়। যেগুলো পাওয়া যায় সেগুলো হল কাকিমা, জেঠিমা, ঠাকুমা, দিদিমার চরিত্র। পয়সা রোজগার হয়। কিন্তু লিড বা চ্যালেঞ্জিং রোল একেবারেই পাওয়া যায় না। যদিও কিছু ব্যতিক্রম আছে। সেগুলো হাতেগোনা। তিনি আরও বলেন, ‘‘এখানে আরেকটা বিষয় দেখা যায়। কম বয়সিরা বেশি বয়সের চরিত্রে অভিনয় করেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি মঞ্চে প্রচুর কাজ করি। সঙ্গে লিখি। পর্দায় কিন্তু খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র এখন আর পাই না। একবার ঠাকুমার চরিত্রে অভিনয় করেছি তো ওই ধরনের চরিত্রই আসতে থাকছে। কমে গেছে বৈচিত্র।’’ আক্ষেপ ঝরে পড়ল তাঁর গলায়, যত সমস্যা মেয়েদের। ছেলেদের বয়স হয়ে গেলেও কাজ পেতে খুব একটা সমস্যা হয় না। কারণ হিরের আংটি কখনও বেঁকে না। বিদেশে বয়স অনুযায়ী নারী ও পুরুষ ভাল চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। বিদেশের মতো না হলেও, বলিউডে আমাদের এখানকার থেকে পরিস্থিতি কিছুটা ভাল। তবে খুব যে ভাল সেটা বলব না। বহু অভিনেত্রীই ইদানীং ভয় পাচ্ছেন। আশ্রয় নিচ্ছেন প্লাস্টিক সার্জারির।
আরও পড়ুন-আজ ঠিক হবে প্লে-অফের চতুর্থ দল
এই মুহূর্তে শহরের কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহ এবং ওটিটি প্লাটফর্মে চলছে ‘চালচিত্র এখন’। এই ছবির মাধ্যমে শতবর্ষে স্মরণ করা হচ্ছে মৃণাল সেনকে। ছবিতে গীতা সেনের চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন বিদীপ্তা চক্রবর্তী। যদিও তাঁর চরিত্রের নাম রাখা হয়েছে সীতা। কথা হল এই অভিনেত্রীর সঙ্গে। তিনি জানালেন, চল্লিশ বছর পেরিয়ে গেলে কেউ কেউ হয়তো ঠিকমতো কাজ পান না। তবে আমার অভিজ্ঞতা অন্যরকম। আমি নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। এটা ঠিক, কম বয়সে নায়িকার চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ থাকে। সিরিয়াল বা সিনেমায়। চল্লিশ পেরিয়ে গেলে সেটা পাওয়া যায় না। আসে পার্শ্বচরিত্র। আমি বরাবর পার্শ্বচরিত্রেই বেশি অভিনয় করেছি। আজও করে চলেছি। চল্লিশ পেরিয়ে যাওয়ার বহু বছর পরেও। ফলে সমস্যা হয় না। কাজ পেতেও খুব একটা অসুবিধা হয় না। এরপর তিনি যোগ করেন, তবে তাঁদের ক্ষেত্রে সমস্যা, যাঁরা একটা সময় নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করতেন। চল্লিশ পেরিয়ে গেলে হঠাৎ তাঁদের কাজ কমে যায়। বয়স পঞ্চাশের আশপাশে হলে মা, কাকিমা, জেঠিমার চরিত্রের জন্য ডাক আসতে থাকে। সেটা অনেকেই মেনে নিতে পারেন না। চল্লিশ বছর বয়সে অনেক অভিনেত্রীই সংসারে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিয়ে হয়, সন্তান হয়। এই ব্যস্ততার কারণেও অনেক সময় কাজ কমে যায়। আমি কিন্তু কাজ এবং সংসার দুটোই একসঙ্গে সামলেছি। পেয়েছি পরিবারের সমর্থন। তাই সবকিছু ঠিকঠাক এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি। আসলে সারা দিনের মধ্যে সময়টা ভাগ করে নিলে কোনও সমস্যা থাকে না। হলিউডে বয়সটা কোনও ফ্যাক্টর নয়। বহু অভিনেত্রীই পঞ্চাশ বছর বয়সে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাচ্ছেন। বলিউডেও তাই। কিন্তু আমাদের এখানে বয়স হয়ে গেলে সামগ্রিকভাবে অভিনেত্রীদের কাজের সুযোগ কমে যায়। ভবিষ্যতে হয়তো পরিস্থিতি বদলাবে। তার জন্য আরও কিছুটা সময় লাগবে।
আরও পড়ুন-আজ ঠিক হবে প্লে-অফের চতুর্থ দল
ফেরা যাক কালকি কোয়েচিলিন প্রসঙ্গে। তাঁর মন্তব্য নিয়ে বিস্তর কাটাছেঁড়া চলছে। পক্ষে এবং বিপক্ষে মত প্রকাশ করছেন অনেকেই। মনে রাখতে হবে, তিনি কিন্তু ব্যক্তি সমস্যার কথা বলেননি, বলেছেন সামগ্রিক সমস্যার কথা। এই সমস্যা দূর হলে আয়ু বাড়বে একজন অভিনেত্রীর। ব্যক্তি-জীবনের আয়ু নয়, শিল্পী-জীবনের আয়ু। মনে রাখতে হবে, কোনও দক্ষ অভিনেত্রী বয়সের কারণে হারিয়ে গেলে কিন্তু শিল্পের ক্ষতি। সেটা যাতে না হয় তার জন্য সচেতন হতে হবে সবাইকে। এই দায়িত্ব নির্মাতা, নির্দেশকের যতটা, ততটাই একজন সাধারণ দর্শকের। তার জন্য ঘটাতে হবে মানসিকতার বিকাশ।