পিচ-নাটকের মধ্যেই টেস্টের মহড়া

শেষবেলায় আলো কমে এল ঝুপ করে। ঘড়িতে তখন চারটে দশ। বিকেলের দিকে ইডেনে এটা হয়। তবে গম্ভীর-জমানায় সবকিছুতেই মানিয়ে নিতে হবে।

Must read

অলোক সরকার
শেষবেলায় আলো কমে এল ঝুপ করে। ঘড়িতে তখন চারটে দশ। বিকেলের দিকে ইডেনে এটা হয়। তবে গম্ভীর-জমানায় সবকিছুতেই মানিয়ে নিতে হবে। ফলে ভারতীয় নেট চলল তারপরও!
কিন্তু কোচের ব্যস্ততার শেষ নেই। তিনি দিনভর নেটের পিছনে ছোটাছুটি করলেন। নাকি ভুল হল? এই তো আর একবার সেন্টার পিচের জটলায় অংশ নিলেন। এই নিয়ে সাত-আটবার হবে। এই প্রায়ান্ধকার পরিস্থিতিতে যেমন লম্বা সময় মিটিং সেরে এলেন বোর্ড কিউরেটদের সঙ্গে। প্রেসবক্সে বসে মনে হল তাঁর আপত্তি ক্লাব হাউস প্রান্তের গুডলেংথ স্পট নিয়ে। সেখানে রঞ্জির সময় থেকে একদলা সবুজ ঘাস আছে। যা রাবাডাদের জন্য সেজেগুজে বসে আছে।

আরও পড়ুন-আরসিবি’র ম্যাচ হতে পারে পুণেতে, পদপিষ্টের জের

পরিস্থিতি গুরুতর দেখে ইডেন কিউরেটর বড়বড় পা ফেলে গম্ভীরকে কিছু বোঝাতে গেলেন। তাতে চিঁড়ে ভিজল বলে মনে হল না। মনে হল কোচ তাঁর নিজের যুক্তি ও উপলব্ধিতে অনড়। অতএব, তিনি নিজের কাজে মন দিলেন। শুধু এবার পিচ পর্যবেক্ষণে পাঠিয়ে দিলেন ব্যাটিং কোচ সিতাংশু কোটাককে। কে জানে, পায়ের কাছে ঘাস থাকলে রাবাডা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে সেটা হয়তো ব্যাটিং কোচ ভাল বুঝবেন!
ভারতীয় দল ইডেন ছেড়ে চলে যাওয়ার পর কর্তাদের অনেকেই জানার আগ্রহ দেখালেন যে গম্ভীরের আপত্তির কারণ কী ছিল। তিনি দোটানায় ভুগছেন? ধরা যাক ঘাস কোনও সমস্যা নয়। তাহলে কি বল ঘুরলে আপত্তি? নাকি বল জোরে এলে? এমনিতে বিদেশি দল ইডেনে নামলে তাদের ঘূর্ণী দিয়ে কাবু করাই দস্তুর। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা কোচ সুক্রি কনরাড নিজেদের স্পিনার ত্রয়ীকে নিয়ে এমন ‘দেখে নেব’ গোছের হুঙ্কার দিচ্ছেন যে কীসে শান্তি মিলবে কেউ জানে না! বল জোরে এলেও তো রাবাডা আছেন!
ভারতীয় দলের সহকারী কোচ রায়ান টেন দুশখাতে অবশ্য দুটো দিন পিচের চরিত্র দেখে বলে দিলেন, দেখে তো মনে হচ্ছে ভাল টেস্ট উইকেট। শুরুতে পেসাররা সুবিধ পাবে। পরে বল ঘুরবে। তাঁর কথাতেই বোঝা গেল ভারত ওয়াশিংটন, জাদেজা আর অক্ষরকে একসঙ্গে খেলাবে। তিন স্পিনার অলরাউন্ডারের সঙ্গে বুমরা ও সিরাজ। কিন্তু পরে পিচ দেখে সিদ্ধান্ত বদলে যাবে না তো? কুলদীপের মতো স্পিনারকে বাইরে রাখার ঝুঁকি গম্ভীর নেবেন? তবে ব্যাটিংয়ের লেজ ভারী করতে গেলে এটাই একমাত্র পথ।
ভারতীয় নেটে এদিন ব্যাটিং অর্ডার অনুযায়ী ব্যাট করলেন যশস্বী, রাহুল, সাই সুদর্শন, শুভমন, পন্থ, জুরেলরা। পন্থকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে অনেকগুলি নেটে স্পিন ও পেসের সামনে ব্যাট করানো হল। তিনি যথারীতি বিপজ্জনক শট মরলেন। এক পায়ের উপর দাঁড়িয়ে পুলও মারলেন দেদার। দেখে মনে হচ্ছিল তিনি চোট পেতে পারেন, কিন্তু অভ্যাস বদলাবেন না। বুমরা কখনও কম দৌড়ে, কখনও বেশি দৌড়ে অনেকক্ষণ বল করলেন। আর একটা জিনিসও লক্ষ্য করা গেল। ব্যাটিং-বোলিংয়ের আগে অনেকক্ষণ ফিল্ডিং হল। এটা এশিয়া কাপ ও অস্ট্রেলিয়ায় খারাপ ফিল্ডিংয়ের জন্য। অনেকগুলি ক্যাচ পড়েছে গত কয়েকটি ম্যাচে।

আরও পড়ুন-এখনই জাঁকিয়ে শীত নয়

ছ’বছর বাদে ইডেনে টেস্ট ম্যাচ হচ্ছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গোলাপি টেস্টের পর এই দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট। আফ্রিকানদের সঙ্গে ইডেনের একটা নাড়ির যোগ আছে। বর্ণ বৈষম্যের থেকে কেপলার ওয়েসেলস, অ্যালান ডোনাল্ডদের শাপমুক্তি ঘটেছিল এই ইডেনে। ডোনাল্ডকে বলা হত হোয়াইট লাইটনিং। পুরনো দিনের লোকেরা এখনও মসৃণ রান-আপের কথা মনে করতে পারছেন। রাবাডার অবশ্য ডোনাল্ডের গতি নেই। কিন্তু সকালের গঙ্গার হাওয়ায় তিনিও বিপজ্জনক চেহারা নিতে পারেন।
দিল্লির ঘটনার পর ইডেনে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার বলয় তৈরি হয়েছে। এতটাই যে ক্রিকেটাররা যতক্ষণ ইডেনে ছিলেন, অ্যাক্রিডেশন কার্ড গলায় ঝোলানো সত্ত্বেও সাংবাদিকদের প্রেস কনফারেন্স ছাড়া ক্লাব হাউসের অন্দরে যেতে দেওয়া হয়নি। গম্ভীররা বেরিয়ে যাওয়ার পর মিডিয়ার জন্য দ্বার উন্মুক্ত হল। শোনা যাচ্ছে ভারতীয় কোচও নাকি যাতায়াতের পথে মিডিয়ার থেকে দূরে থাকতে চেয়েছেন। কে জানে, হয়তো পিচ নিয়ে এত লেখালেখি পছন্দ হচ্ছে না বলে! অথচ কেকেআরের কোচ ও প্লেয়ার থাকার সময় এই ইডেন তাঁর ঘরবাড়ির মতো ছিল। মিডিয়ার সঙ্গেও সুসম্পর্ক ছিল।
দুপুরে টিম বাস যখন ক্লাব হাউসের গেটে দাঁড়াল, তখন পুরনো ছবি। প্লেয়াররা নামছেন আর তাঁদের জন্য চিৎকার। বেশি হইহই হল বুমরা ও পন্থের বেলায়। আকাশ দীপও অনেক হাততালি পেলেন। তবে আকাশের এই ম্যাচে খেলার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু তাতে যাতে দমে না যান, গম্ভীরকে আলাদা করে আকাশের ক্লাস নিতে হল। নীতীশেরও। তাঁকে ইডেনে খেলানো হবে না বলে রঞ্জি খেলতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। নীতীশ কিন্তু মর্নি মর্কেলের ক্লাসে অনেকক্ষণ বল করলেন আলাদা করে।

Latest article