প্রতিবেদন : পরীক্ষা বানচাল করতে বিরোধীদের সমস্ত ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে সসম্মানে টেট (TET- West Bengal) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হল রাজ্য সরকার। নজিরবিহীন নিরাপত্তা আর প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় প্রায় ঘটনাবিহীন ভাবে এ-যাবৎ কালের সর্ববৃহৎ পরীক্ষার আয়োজন করার নিরিখে সসম্মানে উত্তীর্ণ রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। বিরোধীরা পেলেন মুখের মতো জবাব। যদিও এদিন সকাল থেকে সরকারের মুখরক্ষার লড়াই শুধুমাত্র প্রাথমিক শিক্ষক পদে উপযুক্ত প্রার্থী খোঁজাই নয়, এবারের প্রাথমিকের টেট পরীক্ষাই ছিল রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ তথা সরকারের কাছে মুখরক্ষার লড়াই। শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে একাধিক দুর্নীতির এবং অনিয়মের অভিযোগের পাশাপাশি ছিল প্রশ্নফাঁসের আশঙ্কা। পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে টেট পরীক্ষা বানচালের চেষ্টা করা হতে পারে। সর্বোপরি আদালত আর রাজ্যের আপামর মানুষের নজর ছিল এই পরীক্ষার উপরে। এরই মধ্যে দাঁড়িয়ে সারা রাজ্যে দেড় হাজারের কাছাকাছি কেন্দ্রে প্রায় ৭ লক্ষ পরীক্ষার্থীকে নিয়ে টেট পরীক্ষা আয়োজনের চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল পর্ষদ। যদিও শেষ পর্যন্ত নির্বিঘ্নেই হয়েছে পরীক্ষা। দিনের শেষে বড় কোনও ঘটনা ছাড়াই প্রায়-নির্ঝঞ্ঝাটে টেট পরীক্ষা সম্পন্ন করে অনেকটাই স্বস্তিতে পর্ষদ তথা রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা। পর্ষদের হিসাবে ৯২% পরীক্ষার্থী এদিন পরীক্ষায় বসেছেন।
আরও পড়ুন-আজ মেঘালয়ে তৃণমূলনেত্রী, সঙ্গে অভিষেক
পরীক্ষা বানচাল করার একটা চেষ্টা অবশ্য সকালের দিকে চোখে পড়েছিল। টেট (TET- West Bengal) শুরু হওয়ার আগেই সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে একটি প্রশ্নপত্র। যা এদিনের টেট পরীক্ষার বলে দাবি তোলা হয়। অবশ্য তার কিছুক্ষণ পরেই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়ে দেন ওই প্রশ্নপত্র ভুয়ো। যে বা যারা এই কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ তুলেছিলেন সিপিএমের বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যও। তবে বেলা যত গড়িয়েছে তত চুপ করে গেছে বিরোধী শিবির। চাকরি প্রার্থীরা টেট প্রক্রিয়ায় শামিল হয়েছেন উৎসবের মেজাজে। যানবাহন থেকে পুলিশি বন্দোবস্ত— সবই ছিল মসৃণ। যথাসময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে কোনও অসুবিধা হয়নি পরীক্ষার্থীদের। যেখানে পরীক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়েছেন সর্বত্র প্রশাসন সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। পরীক্ষার্থীদের মুখের দিকে তাকিয়ে কোথাও কোথাও নির্ধারিত সময়ের পরেও তাঁদের পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। প্রশ্নপত্র নিয়েও খুশি পরীক্ষার্থীরা। এবার তাঁরা নিজেদের ওএমআর শিট বা উত্তরপত্রের কপি বাড়ি নিয়ে যেতে পেরেছেন। এই ব্যবস্থাও চাকরিপ্রার্থীদের পরীক্ষার স্বচ্ছতার বিষয়ে বাড়তি ভরসা জুগিয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল পরীক্ষা শেষে মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী-সহ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাঁদের সহায়তার জন্য। ২০২২ সালের টেট নিয়ে যাতে সরকার ও পর্ষদকে প্রশ্নের মুখে পড়তে না হয় সেইজন্য কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করে, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে টেট। নির্বিঘ্নে টেট সম্পন্ন করার জন্য তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু-সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান পর্ষদ সভাপতি।
প্রকৃতপক্ষে পরীক্ষা নিয়ে যাতে নতুন করে কোনও অভিযোগ না ওঠে সেজন্য টেট নিয়ে এবার প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে লাগাতার নজরদারি রাখা হয়েছিল। বিকাশ ভবনের পাশাপাশি জেলায় জেলায় খোলা হয়েছিল কন্ট্রোল রুম। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু নিজে দপ্তরে থেকে আগাগোড়া পরিস্থিতির ওপরে নজরদারি রেখেছেন। পরীক্ষার নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে পরীক্ষা কেন্দ্রের পৌঁছানোর যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখা, সার্বিক প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে চালাতে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তর সমন্বয়ের সঙ্গে কাজ করেছে। তবে এখানেই শেষ নয়। ত্রুটিমুক্ত মেধাতালিকা প্রকাশ, সফল প্রার্থীদের ইন্টারভিউ এবং সবশেষে সুষ্ঠুভাবে শিক্ষক পদে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ শেষ করতে পারলে তবেই সর্বতোভাবে এই চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব বলে পর্ষদ কর্তাদের অভিমত।