ঠান্ডাই

গরম মানেই চাই ঠান্ডা-ঠান্ডা কুল-কুল ফিলিং আর ভরপুর হাইড্রেশন। আইসক্রিম বা কোল্ড ড্রিঙ্কস নয়, শরীরে কুলিং এফেক্ট পেতে হাতের কাছেই রয়েছে এমন অনেক কিছু যা খেলে শুধু শরীর আর পেট ঠান্ডাই হবে না, মিলবে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য-আশ্বাস। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

টকদই
এই গরমে বিকল্পহীন খাবার হল টকদই। আয়ুর্বেদে টকদইকে অমৃত বলা হয়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-৬, ভিটামিন বি-১২, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, সোডিয়ামের মতো উপাদান। টকদইয়ে থাকে অনেক ব্যাকটেরিয়া, মিনারেলস যা শরীরের জন্য উপকারি। টকদইকে বলা হয় ন্যাচারাল প্রোবায়োটিক। টকদইয়ে থাকা ল্যাকটোব্যাসিলাস নামের ব্যাকটেরিয়া দুধকে দইয়ে পরিণত করে। এই ব্যাকটেরিয়া দুধের ল্যাকটোজ সুগারকে ল্যাকটিক অ্যাসিডে পরিণত করে যা টকদইয়ের টেক্সচার ও অম্লস্বাদের জন্য দায়ী। দইয়ের মধ্যেই দুধের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি সময় ধরে বজায় থাকে। হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে টকদই। আইবিএস, গ্যাসট্রোইনটেস্টিনাল ডিজ-অর্ডার প্রতিরোধ করে। পেটব্যথা বা যে কোনওরকম সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। গরমে পেট এবং শরীর খুব ঠান্ডা রাখে। দেহকে টক্সিন-মুক্ত করে। টকদইয়ের (Yogurt- Thandai) লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স শরীরে ব্লাডসুগার লেভেলকে নিয়ন্ত্রণ করে। টকদই শরীরে এইচডিএল বা ভাল কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে, উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হাইপারটেনশন রোধ করে। হার্ট ডিজিজের সম্ভাবনা কমায়। অন্যান্য খাদ্য থেকে পুষ্টিগুণ শোষণ করতে সাহায্য করে টকদই। শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে, ওজন হ্রাস করে। দইয়ের মধ্যে বেশি পরিমাণে ক্যালোরি থাকে যা শরীরের এনার্জি বাড়িয়ে তোলে ফলে গরমে ক্লান্তি দূর হয়, চনমনে ভাব বজায় থাকে।

শসা
শসায় রয়েছে জল, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ভিটামিন-সি, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ফোলেট, লিউটিন, জিয়াজ্যানথিন, ভিটামিন-কে, বিটা ক্যারোটিন এবং প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তাই তীব্র দাবদাহে প্রতিদিন ভাতপাতে শসা রাখলে শরীর সুস্থ থাকে। গরমে শরীরে জলের ঘাটতি পূরণ করে দেহের ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স ঠিক রাখে শসা (Cucumber- Thandai)। শরীর ডি-হাইড্রেশন মুক্ত থাকে।
গরমে পেটের সমস্যা, বদহজম, গ্যাস, অ্যাসিডিটি, পেটফাঁপা নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। নিয়মিত শসা খেলে এই ধরনের পেটের যে কোনও সমস্যা থাকে না। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার যা আমাদের অন্ত্রকে সুস্থ রাখে। শসায় রয়েছে ভরপুর ভিটামিন-কে। এই ভিটামিন ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। ফলে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম হাড়ে সরবরাহ হয়। এটি ব্লাডসুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। কোলেস্টেরল বাড়তে দেয় না। শরীরকে টক্সিন-মুক্ত করে।

আরও পড়ুন: কর্নাটকের ফলাফল কী শিক্ষা দিল?

কাঁচা আম
গরম মানেই দিনে রাতে কাঁচা আমের টক ডাল, আমের টক, আম-আদার ঝোল। কাঁচা আম শরীর পেট ঠান্ডার রাখতে অপরিহার্য। কাঁচা আমে রয়েছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ই, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি৩, ভিটামিন-বি৫, ভিটামন-বি৬, ভিটামিন-বি২, ভিটামিন-বি১, ফসফরাস, সোডিয়াম, ফোলেট, পটাশিয়াম, কপার, আয়রন, জিঙ্ক, বিটা ক্যারোটিন। কাঁচা আমের পটাশিয়াম প্রচণ্ড গরমে শরীর ঠান্ডা রাখে। অতিরিক্ত ঘাম বা ঘামাচির হাত থেকে কাঁচা আম সুরক্ষা দেয়। খুব বেশি ঘাম হলে শরীর থেকে সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং আয়রন বেরিয়ে যায়। শরীরের এই ঘাটতি কাঁচা আম পূরণ করে। নিয়মিত কাঁচা আম খেলে গরমকালে লু লাগে না। এতে রয়েছে অ্যামাইলেস নামের একটি এনজাইম যা শরীরে পুষ্টি শোষণে সহায়ক। কাঁচা আম হিট অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে।
কাঁচা আমে রয়েছে লুটেইন ও জিয়াজ্যান্থিন। চোখের রেটিনার স্বাস্থ্য রক্ষায় এই দুটি অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট খুবই উপযোগী। পাশাপাশি এতে থাকা ভিটামিন-এ চোখ ভাল রাখে। কাঁচা আমে থাকা বিটা ক্যারোটিন শরীরে রোগ-প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে এবং আয়রন থাকে বলে রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করে। এতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্যে খুব সহায়ক। ভিটামিন-সি থাকায় সর্দিগর্মি লাগার ভয় থাকে না। কাঁচা আম অ্যালকালাইন-যুক্ত খাবার তাই অ্যাসিডিটি কমাতে একনম্বর। এতে রয়েছে অ্যান্টি ভাইরাস, অ্যান্টি ক্যানসারাস উপাদান। কাঁচা আমে রয়েছে ম্যাঙ্গিফেরিন নামে একটি উপাদান যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এটি আমাদের হার্টের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখে। কাঁচা আমের ভিটামিন এবং খনিজ উচ্চরক্তচাপ কমায়। শরীরকে ডি-টক্সিফিকেশনে সাহায্য করে। ওজন এবং কোলেস্টেরল দুই-ই কমায়।

তরমুজ
প্রচণ্ড গরমে জলের বদলে একটা বড় টুকরো তরমুজ (Watermelon- Thandai) খেলেই ডি-হাইড্রেশন মুক্তি। শরীরে জলের ঘাটতি পূরণে অনবদ্য তরমুজ। এতে রয়েছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার ভিটামিন-সি, পটাশিয়াম, কপার, ভিটামিন-বি ফাইভ ও সিক্স, ভিটামিন-এ, অ্যামাইনো অ্যাসিড। আর রয়েছে লাইকোপিন নামক শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এই লাইকোপিন স্বাস্থ্যের মহৌষধি। তরমুজ শরীরকে ঠান্ডা করতে একনম্বর। তরমুজের ভিটামিন-সি আর বি-৬, শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলে। প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোকের হাত থেকে রক্ষা করে, হাইব্লাডপ্রেশার কমায়, পেশি মজবুত করে। শরীরকে টক্সিন-মুক্ত করে এবং এনার্জি বৃদ্ধি করে। তরমুজ রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে ফলে হার্ট ব্লকেজের সম্ভাবনা কমে যায়। তরমুজে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যারটিনয়েড, ট্রিটেপেনইডিস এবং ফেনোলিক-এর মতো যৌগ। এগুলো শরীরের ব্যথা, যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করে। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট স্ট্রেস কমায়।

ডাব
ডাবের আসল উপাদানই হল জল (Thandai)। গরমে শরীরে জলের ঘাটতি হয় চরমভাবে। অতিরিক্ত ঘাম ও গরমের তীব্রতায় শরীর থেকে ঘামের সঙ্গে সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও বাইকার্বোনেট লবণ বেরিয়ে যায় ফলে ডি-হাইড্রেশন হতে সময় লাগে না। ডাবের জল মুহূর্তে সেই ঘাটতি পূরণ করে। ডাবের জলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, খনিজ পদার্থ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এবং ফসফরাস। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল যৌগের সমৃদ্ধ উৎস হল ডাবের জল। ডাবের জল শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স ঠিক রাখে। শরীরকে ডি-টক্সিফাই করে। পেটের সমস্যা হতে দেয় না। খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ হ্রাস করে এইচডিএল অথবা ভাল কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। ফলে হার্টের অসুখের ঝুঁকি কমে যায়। ডাবের জলে রয়েছে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, ক্যাফেইক অ্যাসিড এবং বিভিন্ন ধরনের ফেনোলিক যৌগ, যেগুলি শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি-র‍্যাডিকলসগুলিকে বের করে দিতে সাহায্য করে।

Latest article