প্রতিবেদন : প্রবল বৃষ্টিতে জেরবার জনজীবন। সোমবার রাতে ৫ ঘণ্টার রেকর্ডভাঙা বৃষ্টিতে সকাল থেকে গোটা শহর বিপর্যস্ত। মঙ্গলবার ভোররাত থেকেই তৎপরতার সঙ্গে দ্রুত বিভিন্ন এলাকায় জমা জল নামানোর কাজ শুরু করেছে কলকাতা পুরসভা। শহরের বিভিন্ন নিচু ও অত্যন্ত প্লাবনপ্রবণ এলাকার পাশাপাশি যেসব অঞ্চলে কোনওদিনই জল জমেনি, সেখানেও এদিনের বৃষ্টিতে ঢেউ খেলেছে হাঁটু কিংবা কোমর-জল। সকাল থেকে নিকাশি বিভাগের কর্মীরা বিভিন্ন স্টেশন থেকে ও স্থানীয়ভাবে পাম্প চালিয়ে সেই জল বের করেন। পুরসভার কন্ট্রোল রুমে বসে সামগ্রিক পরিস্থিতির উপর নজর রাখেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম, নিকাশি বিভাগের মেয়র পারিষদ তারক সিং এবং পুর-কমিশনার ধবল জৈন। আবার বালিগঞ্জে একটি দোকানে আগুন লাগার খবর পেয়ে জলের মধ্যেই সেখানে ছুটে যান মেয়র। বিকেলের দিকে সাংবাদিক বৈঠক করে মহানাগরিক জানিয়েছেন, এটা একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। এর আগে ১৮০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে শহরে। কিন্তু এদিন ৩০০ মিমি’রও বেশি বৃষ্টি হয়েছে। পুরসভা সকাল থেকে পাম্প বসিয়ে জল নামানোর চেষ্টা করেছে। সকালবেলা যে পরিমাণ জল ছিল, সেটা অনেকটাই কমেছে। দু-একটি রাস্তা ছাড়া বেশিরভাগ জায়গা থেকেই জল নেমে গিয়েছে। এখনও কন্ট্রোল রুম থেকে নজরদারি চলছে। রাতের মধ্যেই সমাধানের চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
পুরসভা সূত্রে খবর, রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টে পর্যন্ত গঙ্গায় লকগেট বন্ধ ছিল। আর সেইসময়েই গড়ে ২৫০ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। তাই পরিস্থিতি এতটা খারাপ হয়েছে। তবে মঙ্গলবার ভোর ৫টায় লকগেট খুলে দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকেই পুরসভার সমস্ত আপৎকালীন পরিষেবাকে হাই অ্যালার্টে রাখা হয়েছে। পুরকর্মীরা শহর জুড়ে দ্রুত জল নামিয়ে জনজীবন স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন। সোমবার রাতে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর নিকাশি বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে শহরে জমা জলের পরিস্থিতির খোঁজখবর নেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। মঙ্গলবার সকাল প্রায় ৮টা নাগাদ পুরসভার কন্ট্রোল রুমে পৌঁছে শহরের হালহকিকত খতিয়ে দেখেন তিনি। তাঁর কথায়, জমা জল নিকাশির কাজ চলছে। এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, জানা ছিল না। গঙ্গায় জলস্তর বাড়ায় এবং খালগুলিও ভরে যাওয়ায় ড্রেনেজ ব্যবস্থায় ব্যাকফ্লো হচ্ছে। ফলে পাম্প চালিয়েও জল নামছে না। কলকাতার পাম্পিং স্টেশনগুলি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০ মিমি জল তুলতে পারে, কিন্তু এক রাতেই ৩০০ মিমি বৃষ্টি হওয়ায় সময় লাগছে।
মেয়র আরও বলেন, জন্মের পর এতবছরে এরকম রেকর্ড-বৃষ্টি কলকাতায় আগে কখনও দেখিনি। অল্প সময়ের মধ্যে রেকর্ড বৃষ্টিতে শহরের অনেক রাস্তাতেই জল জমেছে। আর একফোঁটাও বৃষ্টি না হলে রাতের মধ্যে সব জল নেমে জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, সোমবার রাতে কলকাতায় ৫ ঘণ্টায় গড়ে কলকাতায় ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা রেকর্ড। কলকাতা পুরসভার তথ্য অনুযায়ী, ৫ ঘণ্টার ব্যবধানে কখনও এত পরিমাণ বৃষ্টি নথিবদ্ধ হয়নি। হাওয়া অফিস বলছে, ১৯৭৮ এবং ১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বরের পর একরাতে এত বৃষ্টি আর হয়নি। এদিন সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়ায়, ৩৩২ মিলিমিটার! তালিকায় দ্বিতীয় যোধপুর পার্কে বৃষ্টির পরিমাণ ২৮৫ মিলিমিটার!