নবি মুম্বই, ১ নভেম্বর : ইতিহাসের অপেক্ষায় অর্ধেক আকাশ! ভুল হল, অর্ধেক নয় পুরো আকাশ।
রবিবার রাতে হরমনপ্রীত কৌরের হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছে গোটা ভারত। মেয়েদের ফাইনাল নিয়ে উত্তেজনার পারদ ইতিমধ্যেই আকাশছোঁয়া। টিকিট নিয়ে চলছে হাহাকার। ক্রিকেটপ্রেমীদের একাংশের অভিযোগ, ফাইনালের টিকিট বিক্রি নিয়ে চূড়ান্ত অব্যবস্থা চলছে।
এর আগে দুবার বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠেও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে ভারতের মেয়েদের। ২০০৫ ও ২০১৭ সালে। প্রথমবার প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয়বার ইংল্যান্ড। লর্ডসের সেই ফাইনালে ঝুলন গোস্বামীর দুরন্ত বোলিংয়ের সৌজন্যে ইংল্যান্ডকে মাত্র ২২৮ রানে আটকে রেখেছিল ভারত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ম্যাচ হারতে হয়েছিল মাত্র ৯ রানে। হরমনপ্রীত ওই ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করেও দলকে জেতাতে পারেননি। সেই আক্ষেপ কি রবিবার সুদে আসলে পুষিয়ে দেবেন?
আরও পড়ুন-SIR-এর আতঙ্কে বিষ খেয়ে ‘আত্মঘাতী’ পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের প্রৌঢ়
ভারতের মতো প্রথমবার একদিনের বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে দক্ষিণ আফ্রিকাও। হরমনের মতো লরা উলভার্টও মুখিয়ে রয়েছে কাপ মুঠোয় নেওয়ার জন্য। তবে একটা বিষয় পরিষ্কার যে দলই জিতুক, রবিবার একদিনের ক্রিকেটে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেতে চলেছে মেয়েদের ক্রিকেট।
লিগ পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে হেরেছিল ভারত। রবিবার তাই হরমনদের বদলা নেওয়ার ম্যাচ। সবথেকে বড় কথা, সেমিফাইনালে সাতবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সাড়ে তিনশোর কাছাকাছি রান তাড়া করে জয়, ভারতীয় শিবরের ছবিটাই পাল্টে দিয়েছে। দেশের মাটিতে প্রথমবার বিশ্বকাপ জিততে মরিয়া দেখাচ্ছে জেমাইমা রডরিগেজ, স্মৃতি মান্ধানাদের।
ভারতের মূল শক্তি ব্যাটিং। ইতিমধ্যেই একটি সেঞ্চুরি ও দুটি হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন স্মৃতি। ৮ ম্যাচে ৩৮৯ রান করে তিনি আপাতত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। সেমিফাইনালে রান পাননি। তাই ফাইনালে রান পেতে মরিয়া দেখাচ্ছে স্মৃতিকে। এবং জেমাইমা। সেমিফাইনালে ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরির পর এবার ফাইনালেও নিজের সেরাটা দিতে মুখিয়ে রয়েছেন জেমাইমা। অধিনায়ক হরমনপ্রীতও চেনা ফর্মে ফিরেছেন। এবার যদি শেফালি ভার্মা ব্যাট হাতে ছন্দে থাকেন, তাহলে স্কোরবোর্ডে বড় রান উঠবেই।
তবে বোলিং ও ফিল্ডিং নিয়ে চিন্তা থাকছে। প্রতি ম্যাচেই নিয়ম করে ক্যাচ মিস করছেন ভারতীয়রা। অহেতুক ওভার থ্রো করে বিপক্ষকে বাড়তি রানও উপহার দিচ্ছেন। দীপ্তি শর্মা ১৭ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপের যুগ্ম সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হলেও, প্রচুর রান দিচ্ছেন। আরেক স্পিনার শ্রী চারানি অবশ্য বেশ ভাল ফর্মে। কিন্তু বাকিদের আরও নিয়ন্ত্রিত বোলিং করতে হবে।
পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং ও বোলিং দুটোই শক্তিশালী। ফিল্ডিংয়ে তো নিঃসন্দেহে এগিয়ে। রয়েছেন উলভার্ট। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অসাধারণ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন তিনি। ৮ ম্যাচে ৪৭০ রান করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও উলভার্ট। এছাড়া আছেন মারিজেন কাপের মতো অলরাউন্ডার। যিনি সেমিফাইনালে ব্যাটে-বলে অনবদ্য পারফরমেন্স করেছিলেন। রয়েছেন ক্লার্ক। যিনি লিগ পর্বে ভারতের মুঠো থেকে জয় ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।
এদিকে, হরমনপ্রীতদের কাপ জয়ে কাটা হতে পারে বৃষ্টি। রবিবার বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা ৬৩ শতাংশ! মহারাষ্ট্র জুড়ে হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ফাইনাল শুরু বিকেল তিনটেয়। আর স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বিকেল চারটে থেকে সন্ধে সাতটার মধ্যে বৃষ্টির সম্ভবনা ৫০ শতাংশ। শেষ পর্যন্ত যদি বৃষ্টিতে রবিবার খেলা ভেস্তে যায়, তাহলে সোমবার রিজার্ভ ডে রাখা হয়েছে। তবে সেদিনও বৃষ্টির সম্ভবনা ৫৫ শতাংশ। যদি দুটো দিনই খেলা বৃষ্টিতে ভেস্তে যায়, সেক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকাকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘোষণা করা হবে। কারণ রাউন্ড রবিন লিগে দক্ষিণ আফ্রিকা বেশি পয়েন্ট পেয়েছিল ভারতের থেকে।
২০১১-র ২ এপ্রিল এই মুম্বইয়ে এমএস ধোনির হাতে বিশ্বকাপ দেখেছিল ভারত। ঘটনাচক্রে সেই ২ তারিখেই আজ কাপ ফাইনালে নামছেন হরমনপ্রীতরা। মাঝে শুধু ১৪ বছর কেটে গিয়েছে। আর এক মায়াবি রাতের অপেক্ষায় আরব সাগরের তীরের শহর। হরমনপ্রীতরা কাপ জিতলে আনন্দে পাগল হবে গোটা দেশ।

