নাজির হোসেন লস্কর: মগরাহাটের (Magrahat) হস্তশিল্পগুলিকে আরও প্রসারিত করতে উদ্যোগ নিল ব্লক প্রশাসন। মগরাহাট ২ ব্লক অধীনস্থ ডিহি কলস এবং উত্তর ধামুয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের অধিকাংশ হস্তশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। মূলত ডিহি কলস এলাকায় ৯০ শতাংশ পরিবার ঐতিহ্যবাহী পালক শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। অন্যদিকে উত্তর ধামুয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার অধিকাংশ পরিবার রৌপ্য শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। করোনা আবহে এইসব শিল্পের সঙ্গে যুক্ত পরিবারগুলির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি করুণ অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। ঠিক এমন সময় তৃতীয় পর্যায়ের দুয়ারে সরকারে নতুন প্রকল্প আর্টিজান ক্রেডিট কার্ড-এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক সুবিধা পৌঁছে দিতে হাজির ব্লক প্রশাসন।
আরও পড়ুন – জয় বাংলা এবার জাতীয় স্লোগান, ভাষাদিবসের আগে ঘোষণা বাংলাদেশ সরকারের
ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোগ ও বস্ত্র দফতরের নয়া প্রকল্প আর্টিজান ক্রেডিট কার্ড। এই কার্ডের মাধ্যমে উপভোক্তা কমপক্ষে ২৫ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মূলধন অথবা মেয়াদি ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন। রবিবার ডিহি কলস পঞ্চায়েতের উদোগের দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে নানা ধরনের পণ্য-সামগ্রী নিয়ে অংশ নিয়েছিল পালক হস্তশিল্পের সঙ্গে যুক্ত কারিগররা। উল্লেখ্য, মগরাহাটের (Magrahat) পালকজাত পণ্য রাজ্য-দেশের পাশাপাশি পাড়ি দেয় বিদেশেও। রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প বহু কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। ঘর, অনুষ্ঠান মঞ্চ সাজানো থেকে শুরু পুজোর আরতিতেও কাজে লাগে। দেশের সেনাবাহিনীরাও প্যারেডের সময় হ্যাকেলে ব্যবহার করে থাকে। বরের পাগড়ি-তাজ বা হিন্দিতে যাকে কলগি বলে থাকে সেখানেও ব্যবহার হয়ে থাকে পালকের নিপুন কাজ।
অন্যদিকে, উত্তর ধামুয়া পঞ্চায়েত এলাকার বহু মানুষ যুক্ত রৌপ্য গহনা ও সামগ্রী তৈরির কাজের সঙ্গে যুক্ত। ব্যবসায়িক সুবিধার্থে এলাকায় সরকারি উদ্যোগে বানিয়ে দেওয়া হয়েছে ক্লাস্টার। শীঘ্রই এই ক্লাস্টার উদ্বোধন হতে চলেছে।
করোনা আবহে এই হস্তশিল্পের যুক্ত কারিগররাও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি কারিগরদের কাঁচামাল আনার সময় হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশনে পুলিশি হয়রানি শিকার হতে হয়। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সামনে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন কারিগররা।
মগরাহাট ২-এর বিডিও সেখ আবদুল্লাহ বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন হস্তশিল্পগুলিকে প্রসার ও প্রশাসনিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য। তিনি বলেন, ডিহি কলস এলাকায় পালক শিল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ১০০ জন ও উত্তর ধামুয়া পঞ্চায়েত এলাকায় রৌপ্য গহনা সামগ্রী শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ১৫০ জনের মতো কারিগরদের আর্টিজান ক্রেডিট কার্ড-এর মাধ্যমে যাতে অর্থনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ব্লকের এই হস্তশিল্পগুলির প্রসারে জন্য জেলা প্রশাসনের এমএসএমই ও আইএসজিপিপি দফতর থেকে ৪ জনের প্রতিনিধি এসেছিলেন। যাঁরা ডকুমেন্টরি করার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে হস্তশিল্পীদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
এদিন স্থানীয় বিধায়ক নমিতা সাহা উপস্থিত ছিলেন ধামুয়ার ক্যাম্পে। তিনি বলেন, মগরাহাটের এই হস্তশিল্পগুলি বাংলার মুখ উজ্জ্বল করে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হস্তশিল্পকে সবসময গুরুত্ব সহকারে দেখে এসেছেন। ব্যবসায়ী কাজে লাগানোর জন্য এখানে সরকার একটি ক্লাস্টার বানিয়ে দিয়েছে। হস্তশিল্পগুলির প্রচার ও প্রসারের সরকার সবধরনের সহযোগিতা করবে।