তারান্নুম সুলতানা মির (Tarannum Sultana Mir) রাজনৈতিক পরিবেশে বড় হয়েছেন। পরপর তিনবারের জেলা পরিষদের সদস্য হওয়া তারান্নুম সামলেছেন বিভিন্ন দায়িত্ব। সামলেছেন কৃষি কর্মাধ্যক্ষর মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও। মানুষের ভালবাসা নিয়ে তৃতীয়বার তারান্নুম জেলা পরিষদের প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করার পর তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব আর দেরি না করে সভাধিপতির মতো গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছে। স্বামী সন্তান নিয়ে সংসার সামলানোর পাশাপাশি সফল ভাবে তিনি রাজনীতিও করে চলেছেন।
নতুন প্রজন্মকে কৃষিমুখী করাই লক্ষ্য
গড়ে উঠেছে মানুষের পঞ্চায়েত। তাঁদের আশীর্বাদ নিয়ে ২০টি জেলা পরিষদেই তৃণমূলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। উঠে এসেছেন একঝাঁক নতুন মুখ। যার মধ্যে বেশিরভাগই মহিলা। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবর নারীদের সামনের সারিতে রেখেছেন। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আজ তাঁদের অনেকেই জেলা পরিষদের সভাধিপতি। আছে অনেক পুরনো মুখও। আমরা কথা বলেছি তাঁদের সঙ্গে। বাংলার মানুষের জন্য জেলা পরিষদ কীভাবে উন্নয়নের কাজ করবে, সেই ভাবনা সদ্য দায়িত্ব নেওয়া সভাধিপতিরা ভাগ করে নিয়েছেন জাগোবাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে। আজ নদিয়া জেলা…
সভাধিপতি হয়ে কেমন লাগছে?
উঃ এটা ভাষায় কী ভাবে বলব। দায়িত্ব অনেক বেড়েছে। এটা একটা নতুন অনুভূতি।
নদিয়া নিয়ে কী ভাবছেন?
উঃ নদিয়াবাসীদের ভাল রাখা আমার কর্তব্য। তাঁদের উন্নয়নমূলক দাবিদাওয়াগুলি পূরণ করব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে উন্নয়ন শুরু করেছে সারা বাংলা জুড়ে তার বাইরে নদীয়া নয়। নদিয়ার মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি-সহ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে উন্নয়ন করেছে তা সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া এটা আমার কর্তব্য।
এতবড় দায়িত্ব। চিন্তা হয়?
উঃ আমি রাজনীতি পরিবারের মেয়ে। আমার বাবা দাদু মামা ঠাকুরদা প্রত্যেকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । আমি কলেজ থেকে রাজনীতি শুরু। ২০০৩ সালে আমি পঞ্চায়েতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। রাজনীতি মানুষের জন্য কিছু করার জন্য এটা একটা ভাল প্ল্যাটফর্ম। ২০১৩ সালে জেলা পরিষদের প্রথম প্রার্থী হই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতি আদর্শকে অনুসরণ করি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন যুব কংগ্রেস করতেন তখন থেকেই ওনার নীতি আদর্শকে অনুসরণ করি। কয়েকটি মিটিংয়েও আমি গিয়েছিলাম। সেই থেকে রাজনীতিতে আমি আকৃষ্ট হয়েছি। এখন তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। আমাদের গর্বের। আমার উঠে আসাটাও এর মধ্যে থেকে। একেবারে নিচ থেকেই।
আরও পড়ুন- অর্জিত জ্ঞানের প্রজন্মান্তরে প্রসারণই হল শিক্ষা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গে কী বলবেন?
উঃ এক কথায় বলব উন্নয়নের কাণ্ডারি। স্বাধীনতার পর এমন এক মানবিক মুখ্যমন্ত্রীকে আমরা পেয়েছি। যিনি আপামর বাংলার মানুষের জন্য ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে কাজ করার চেষ্টা করছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার সম্প্রীতি, রবীন্দ্রনাথ নজরুলের বাংলাকে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন ধরে রাখার।
জেলায় কোন সমস্যাকে প্রথম গুরুত্ব দিচ্ছেন?
উঃ জেলায় পানীয় জল বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে। সেই জল পৌঁছে দেওয়ার কাজটা সুনিশ্চিত করার কাজটাকে আমি গুরুত্ব দিচ্ছি।
কৃষি নিয়ে কী ভাবনা?
উঃ আমি কৃষি কর্মাধ্যক্ষ ছিলাম। ৭০ ভাগ মানুষই কৃষির উপর নির্ভরশীল। কৃষিতে অগ্রগতি হয়েছে। আগামী দিনে আমার প্রচেষ্টা থাকবে কৃষকদের জন্য যে বিভিন্ন প্রকল্প সরকার চালু করেছে সেগুলো যাতে সঠিক ভাবে পাই। সরকারি যে প্রকল্প আছে, কৃষকরা যাতে ন্যায্য মূল্য পাই সেটাই চেষ্টা করব। কিসান ক্রেডিট কার্ড, কৃষি পেনশান, কৃষি বীজ দেওয়া বা কৃষকদের মানবিক যে বিষয়গুলি সরকার চালু করেছে সেগুলো পৌঁছান যায়। একইসঙ্গে কৃষকদের আরও যাতে উন্নতি করা যায় সেগুলি দেখব।
সভাধিপতি হয়ে কীভাবে কাজ করতে চাইছেন?
উঃ আজকে আমি সভাধিপতি হয়েছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এটা একটা বড় গুরু দায়িত্ব দিয়েছেন। সেই বিশ্বাস ধরে রাখার। তাঁরা আস্থা রেখেছেন। আজকে কাজ মানে আমি কিন্তু একা নয়। কাজ মানে একটা টিম। আমার রাজনৈতিক অভিভাবক যারা আছেন তাঁদের প্রত্যেকের সুপরামর্শ নিয়ে আমি কাজ করব।
নদিয়া নিয়ে বিশেষ কী ভাবনা আছে?
উঃ নদিয়াকে একটা জায়গায় পৌঁছানো আমার লক্ষ্য। তার জন্য সবার সঙ্গে কথা বলব। নদীয়া যাতে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠা পায় সেই চেষ্টা করব।
উন্নয়নের কাজের ভাবনা কী?
উঃ আমি একটা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ঠিকই, কিন্ত সবার উপরে আমি জনপ্রতিনিধি। আমার এটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত সমস্ত মানুষের জন্য কাজ করা। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সাড়ে দশ কোটি মানুষের জন্য কাজ করছেন সেখানে তিনি ভাবেন না কে কোন দলের। তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
আমি জেলায় কাজ করার দায়িত্ব পেয়েছি। আমার উচিত সকলের জন্য কাজ করার। আমি সেই কাজটাই করব।
জেলার কর্মসংস্থান নিয়ে কী ভাবছেন?
উঃ উন্নত প্রযুক্তি এসেছে। সেই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের কৃষি কাজে আনা যায় কিনা সেটা আমরা চেষ্টা করব।