সুমন করাতি হুগলি: কালীপুজোকে ঘিরে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম কাহিনি কথিত রয়েছে। এইরকমই হুগলির বাঁশবেরিয়ার হংসেশ্বরী মন্দির নিয়েও রয়েছে নানান ইতিহাস। বিগ্রহের থেকেও এই মন্দিরের স্থাপত্য নিয়ে রয়েছে দারুণ কাহিনী। পুজোর দিন মা হংসেশ্বরী এখানে পূজিতা হন কালী রূপে। নিজ গুণে এই মন্দির এবং দেবীর মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়েছিল অতি দ্রুত। মা হংসেশ্বরীর টানে রামকৃষ্ণদেব থেকে শুরু করে অনেক বড় বড় সাধকরাও এখানে ছুটে এসেছেন।
আরও পড়ুন-আবাসের সমীক্ষা শুরু, স্পট থেকে ছবি ও তথ্য আপলোড
ইতিহাস আর পুরাতত্ত্বের এক অদ্ভুত মিশেল ঘটেছে প্রখ্যাত কবি পিনাকী ঠাকুর ও নগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের এই জন্মভিটে বাঁশবেড়িয়ায়। ২০৯ বছরের পুরনো হংসেশ্বরী এখানে বিপত্তারিণী।
ইতিহাস বলে, তান্ত্রিক সাধনা ষঠচক্রভেদের তত্ত্বকে অনুসরণ করে এই মন্দিরটি তৈরি করা হয়েছিল। মানুষের শরীরে সুষুম্নাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে রয়েছে ইড়া, পিঙ্গলা, বজ্রাক্ষ, সুষুম্না এবং চিত্রিণী নামে মোট পাঁচটি নাড়ি এবং সুষুম্নাকাণ্ড বরাবর ৬টি চক্র বা ষড়চক্র। সর্বনিম্ন চক্রটির নাম মূলাধার চক্র। এই মূলাধার চক্রেই সুপ্ত থাকে সর্পাকৃতি কুলকুণ্ডলিনী। রাজা রামেশ্বর রায়ের প্রপৌত্র নৃসিংহদেব রায় এই কুলকুণ্ডলিনী তত্ত্বকেই হংসেশ্বরী মন্দিরের স্থাপত্য কারুকার্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছিলেন।
আরও পড়ুন-কানাডা-ভারত দ্বৈরথের মাঝে মুম্বই হামলার চক্রীকে প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া শুরু
১৮০২ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরের কাজ অসম্পূর্ণ রেখে নৃসিংহদেব মারা যান। ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে নৃসিংহদেবের দ্বিতীয় স্ত্রী রানি শঙ্করী অসমাপ্ত কাজটি সম্পন্ন করেন। মন্দিরটি তৈরির জন্য উত্তরপ্রদেশের চুনার থেকে পাথর এবং রাজস্থানের জয়পুর থেকে কারিগরদের নিয়ে আসা হয়। ১৩টি চূড়া, তিনতলায় কষ্টিপাথরের ১২টি শিবলিঙ্গ, গর্ভগৃহে পাথরের বেদির উপর খোদাই করে সহস্রদল ও অষ্টদল পদ্ম। তার উপরে শায়িত শিব। তাঁর হৃদয় থেকে উত্থিত পদ্মাসনে অধিষ্ঠান করছেন মা হংসেশ্বরী। মন্দিরের গর্ভগৃহকে ধরা হয় মূলাধার। এই মূলাধারে সহস্রদল পদ্মের উপর রয়েছে অষ্টদল পদ্ম। তন্ত্রমতে মানবদেহের পাঁচটি নাড়ির মতো এই মন্দিরে রয়েছে পাঁচটি সিঁড়ি। মা এখানে করুণাময়ী, তাই চলতি বছর থেকে পশুবলি প্রথা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে রাজ পরিবারের তরফে।