ব্যাঙ্ক দেউলিয়ায় কপাল পুড়তে চলেছে গ্রাহকদের

দেশের প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ ব্যাঙ্ক দেউলিয়া নিয়ে ওকালতি করায় শঙ্কার মেঘ জমেছে মধ্যবিত্ত থেকে প্রায় সব গ্রাহকদের।

Must read

প্রতিবেদন : ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। রবিবার ব্যাঙ্ক ডিপোজিট ইন্সুরেন্স অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বললেন, দেশে কোনও ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হলে এবার গ্রাহকদের সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা বিমা বাবদ তিন মাসের মধ্যে দিতে হবে। দেশের প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ ব্যাঙ্ক দেউলিয়া নিয়ে ওকালতি করায় শঙ্কার মেঘ জমেছে মধ্যবিত্ত থেকে প্রায় সব গ্রাহকদের।

আরও পড়ুন-গোয়ায় নেত্রী ও অভিষেক, আজ প্রথম জনসভা

দেশজুড়ে গ্রাহকদের মনে প্রশ্ন উঠেছে, সরকার আর্থিক উন্নয়নের নামে নোটবন্দি থেকে শুরু করে একের পর এক ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণের নামে তুলে দিয়েছে। তারপরেও ব্যাঙ্ক দেউলিয়ার কথা কেন বলতে হচ্ছে? কেন দেশের আর্থিক উন্নয়নের নামে সরকারি সম্পত্তি বেচা হচ্ছে? এয়ারপোর্ট বেচা হচ্ছে। বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়ার মতো সংস্থাকে। আর্থিক শ্রীবৃদ্ধির নামে দেশের সম্পত্তি বেচে দেওয়াটাই যদি সরকারের টার্গেট হয়, তাহলে বিজেপি ক্ষমতায় থাকলে আগামিদিনে সরকারি সংস্থার অস্তিত্বই দেশে থাকবে না।

আরও পড়ুন-লজ্জা! বিজেপির উন্নয়ন দেখাতে বারবার নকল বাংলার প্রগতির ছবি

তৃণমূল কংগ্রেস-সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি বলছে, দেশের সরকারকে জনকল্যাণমূলক সরকার না বলে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি বলতে অসুবিধা কোথায়? তৃণমূল কংগ্রেস-সহ সমস্ত বিরোধী দলই তুমুল সমালোচনা করতে শুরু করেছে প্রধানমন্ত্রীর এই কথায়। অপদার্থ কেন্দ্রীয় সরকার দেশের আর্থিক উন্নয়নে ব্যর্থ হয়ে সহজ পথ— সম্পত্তি বেচে দেওয়ার রাস্তায় নেমেছে। প্রায় হাফ ডজন প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে, যার উত্তর নেই বিজেপির কাছে।

আরও পড়ুন-উদয়শঙ্কর নৃত্যোৎসব

প্রশ্ন এক, কেন ব্যাঙ্ক দেউলিয়ার কথা বলতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে? দেশের আর্থিক পরিস্থিতি কি কোনও সংকটের মুখে? যদি তা না হয়, তাহলে কেন ব্যাঙ্ক দেউলিয়ার বিষয় উত্থাপন করে গ্রাহকদের সর্বোচ্চ প্রাপ্য বিমার কথা বলতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে?
প্রশ্ন দুই, বিজেপি সরকার আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতির জন্য নোটবন্দি করেছিল। সেসব নিয়ে নানা ঢাক- ঢোল, ঢক্কা নিনাদের পর ব্যাঙ্ক দেউলিয়া? এর একটাই অর্থ, এসব করে আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি তো হয়ইনি, বরং অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে, দেশ করুণ আর্থিক পরিণতির দিকে এগোচ্ছে।

আরও পড়ুন-বিরাট নিয়ে বিতর্কের আবহে সোজাসাপ্টা সৌরভ

প্রশ্ন তিন, একের পর এক ব্যাঙ্ক শিকেয় তুলে দিয়ে একসঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হল। কী না, এতে নাকি ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা আরও সুদৃঢ় হবে। ব্যাঙ্ক তুলে দিয়ে মার্জ করার ফসল কী হল? সরকারকে ব্যাঙ্ক দেউলিয়ার প্রোজেক্ট নিয়ে প্রকাশ্যে বলতে হচ্ছে।

প্রশ্ন চার, মানুষ কষ্ট করে উপার্জন থেকে সঞ্চয় করেন। ধরা যাক, কেউ ৩০ বছর ধরে ৩০ লাখ টাকা ব্যাঙ্কে রেখেছেন। সেই ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হল। গ্রাহক কত টাকা পাবেন? সর্বোচ্চ ৫ লাখ। অঙ্কটা ২-৩-৪ লাখ যে কোনও অঙ্ক হতে পারে। এখানে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, বাকি টাকা অর্থাৎ বাকি ২৫ লাখ টাকা কে আত্মসাৎ করল? কেন সেই টাকা গ্রাহক পাবেন না? সেই অর্থ কোন ট্রেজারিতে গিয়ে জমা হল? কেন গ্রাহক পাবেন না? সরাসরি গ্রাহকদের টাকা মেরে দেওয়া হবে? বাঃ! চমৎকার।

আরও পড়ুন-গেরুয়া আক্রমণে ব্রিগেডিয়ার কন্যা

প্রশ্ন পাঁচ, ব্যাঙ্ক দেউলিয়ার কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী। সারা বছর ব্যাঙ্কগুলি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকসহ এক ডজন কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলে। কোন ব্যাঙ্ক টাল খাচ্ছে অর্থাৎ দেউলিয়া হওয়ার দিকে এগোচ্ছে, সেটা তাঁরা কেন জানতে বা বুঝতে পারবেন না? কেন তাঁরা আগাম ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেবেন না? অর্থমন্ত্রীর পদটা কি শুধু ইউপিএ জমানার ভুল ধরার কাজেই ব্যস্ত থাকবে?
প্রশ্ন ছয়, দেশের প্রধানমন্ত্রী গর্ব ভরা বুকে বলছেন, আমরাই একমাত্র গ্রাহকদের কথা চিন্তা করি। তাই ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হলে গ্রাহকদের বিমার টাকা বাড়িয়ে এক লাখ করেছিলাম। এবার তা আরও করলাম ৫ লাখ টাকা।

আরও পড়ুন-পরীক্ষার পর রক্তারক্তি কাণ্ড!

পাল্টা মানুষ বলছেন, অর্থনীতিবিদের হাতে দেশ থাকায় ব্যাঙ্ক দেউলিয়ার কথা শুনতে হয়নি। তাই বিমার অঙ্ক নিয়ে মানুষের চিন্তা ছিল না। অধিকাংশই জানতেন না। আর কেন্দ্রের বিজেপি সরকার একটার পর একটা ব্যাঙ্কে তালা ঝোলাচ্ছে আর্থিক প্রগতির নামে। এখানেই শেষ না করে ব্যাঙ্ক দেউলিয়ার আতঙ্কও ছড়িয়ে দিচ্ছে মানুষকে পথে বসিয়ে।

প্রধানমন্ত্রীর আজকের বয়ানই বলে দিচ্ছে বিরাট আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রের সরকার। এয়ার ইন্ডিয়া বেচে, বিমানবন্দর বেচে, কারখানা বেচে, ব্যাঙ্ক বেচে আর্থিক প্রগতির ক্যানেস্তারা পেটাচ্ছে। দুঃখের কথা, সেই ক্যানেস্তারও ফুটো হয়ে গিয়েছে। তাই ব্যাঙ্ক দেউলিয়ার বিমা ঘোষণা করতে হচ্ছে। এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার এতটুকুও অধিকার নেই, বলছে তৃণমূল কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিজেপি যে পথে চলছে সেটা আসলে লোক দেখানো সমস্যা মেটানো। যত দিন যাবে সরকার তত গর্তে পড়বে।

Latest article