শুভেন্দুকে চোর বললেন বিজেপির জেলা সভাপতিই

বহিষ্কারের খবর পাওয়ার পরেও সুরজিৎ কিন্তু তাঁর যুক্তিতে অনড় থেকেছেন।

Must read

প্রতিবেদন: শুভেন্দু অধিকারীকে চোর, তোলাবাজ বললেন দলেরই জেলা সভাপতি। বিস্ফোরক সেই মন্তব্যের পরেই হাওড়া জেলা সদরের সভাপতিকে দল থেকে বহিষ্কৃত করল বিজেপি। কিন্তু বহিষ্কারের পরেও অনড় বিজেপি নেতার সাফ কথা— প্রথমেই বলব, আমি নির্বাচিত সভাপতি। আমাকে এভাবে দল থেকে তাড়ানো যায় না। দ্বিতীয়ত, আমি বিজেপির বিরুদ্ধে কিছুই বলিনি। প্রশ্ন তুলেছি শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য নিয়ে। শুভেন্দু যে কাজ করেছেন তার যথাযথ ব্যাখ্যা চেয়েছি। এটা অন্যায় বা পার্টি-বিরোধী হল কীভাবে? যদিও বহিষ্কারের চিঠি তাঁর হাতে আসেনি বলে জানান সুরজিৎ।

আরও পড়ুন-‘শুভেন্দু হটাও’ আওয়াজ নন্দীগ্রাম জুড়ে

বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই রাজ্য বিজেপিতে আদি-নব্য লড়াই চরমে। দলবদলুদের বিরুদ্ধে দলের পুরনো কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ চরমে পৌঁছায়। পরপর দুটি নির্বাচনে ‘শূন্য হাতে ফিরি হে নাথ’ হওয়ার পর দলে কোন্দল প্রকাশ্যে আসা শুরু হয়। তথাগত রায় থেকে দিলীপ ঘোষ— বারেবারে মুখ খুলেছেন। তথাগত দলের নেতাদের টাকা-মহিলাসঙ্গ নিয়ে অভিযোগ তোলেন। দিলীপ ঘোষ দলবদলুদের ঘাড় ধরে দল থেকে বের করে দেওয়ার নিদানও দেন। এবার সুরজিৎ সাহা।

আরও পড়ুন-পুরীর আদলে লন্ডনে হবে জগন্নাথ মন্দির

ঘটনার সূত্রপাত হাওড়া পুর নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপির বৈঠক নিয়ে। মঙ্গলবার বৈঠক করতে হাওড়ায় যান শুভেন্দু অধিকারী। ওই বৈঠকে দলের একটা বড় অংশ বিদ্রোহ করে অনুপস্থিত ছিল। ১০ জন সদস্য মিটিং বয়কট করেন। সেখানেই শুভেন্দুর আলটপকা মন্তব্য, আপনারা ভোটে জিতবেন কী করে! বিধানসভা ভোটে তো অনেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। তৃণমূলের অরূপ রায়ের সঙ্গে তলে তলে যোগাযোগ রেখেছেন। এতেই ক্ষোভ ধরে রাখতে পারেননি সুরজিৎ। পালটা প্রশ্ন তোলেন—

১. বিজেপির কেউ কেউ তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন, শুভেন্দুকে প্রমাণ করতে হবে। যদি প্রমাণ করতে না পারেন তা হলে ক্ষমা চান প্রকাশ্যে।
২. ছ’মাস আগে দলে এসেছেন, তাঁর কাছে কে কত বড় বিজেপি তার সার্টিফিকেট হাওড়া বিজেপি নেবে না।
৩. আর উনি যদি সত্যি জানেন কারা যোগাযোগ রাখছে, সেটাও প্রমাণ করে আসলে ওঁর সঙ্গেই তৃণমূলের যোগাযোগটা বেশি।
৪. নারদার ক্যামেরায় দেখা গিয়েছে শুভেন্দু টাকা নিচ্ছেন। সারদা মামলায় তাঁর নাম রয়েছে। তিনি সৎ প্রমাণ করুন। হাওড়ার কোনও বিজেপি নেতাকে ক্যামেরায় টাকা নিতে দেখা যায়নি। তাই তাঁদের প্রমাণ করার দায়ও নেই।

আরও পড়ুন-ত্রিপুরায় তৃণমূলকে থামাতে গেরুয়া সন্ত্রাস চলছেই, তবু অবিচল প্রার্থীরা

৫. হাওড়া পুরসভার বিজেপির চেয়ারম্যান রথীন চক্রর্তীর বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, যিনি নিজের ওয়ার্ডে জিততে পারেন না, যার নামে ‘গদ্দার’ পোস্টার জেলা সভাপতিকে সরাতে হয়, সেই তৃণমূলের বি-টিমের নেতৃত্বে আমরা কাজ করব না।
৬. এখানেই থেমে থাকা নয়, সুরজিৎ সাহার কটাক্ষ, বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক আর রাজ্য সভাপতি শুভেন্দুর রিমোটে চলেন। ফলে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ওঁদের নয়, শুভেন্দুরই।
৭. দলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ এনে তথাগত রায়, দিলীপ ঘোষ, অনুপম হাজরা কিংবা সৌমিত্র খাঁকে যদি শো’কজের চিঠিও না দেয় তা হলে আমাকে কেন? নির্বাচিত সভাপতিকে সরাতে গেলে পদ্ধতি আছে। দলের সেই পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত।

আরও পড়ুন-বিজেপি থেকে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ গোয়ায়

বহিষ্কারের খবর পাওয়ার পরেও সুরজিৎ কিন্তু তাঁর যুক্তিতে অনড় থেকেছেন। যে প্রশ্ন তুলেছেন, তা বিজেপি নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলতে বাধ্য। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, বিজেপি বিধানসভা ভোটে জয়ের জায়গায় ছিল। মানুষ বিশ্বাসও করছিলেন। কিন্তু যেভাবে দলবেঁধে শাসক দলের নেতা-কর্মীদের নেওয়া হয়েছে তাতে মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মানুষ এটা বিজেপির তৃণমূলীকরণ হিসাবেই দেখেছে।
সুরজিতের বিস্ফোরণ নিশ্চিতভাবে দলে শুভেন্দু-বিরোধী বিশাল অংশকে উৎসাহিত করবে। হাওড়ায় বিজেপির ভোট-ভবিষ্যতের ছবিও এই ঘটনায় ক্রমশ পরিষ্কার হচ্ছে।

Latest article