নবনীতা মণ্ডল, নয়াদিল্লি : মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবরই জানিয়ে এসেছেন, মোদি জমানায় দেশকে বেচে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। গ্রেট ইন্ডিয়ান লুঠ বলে তোপও দেগেছেন দিল্লিকে। তাঁর সেই দাবিই আরও শক্ত হচ্ছে কেন্দ্রের সাম্প্রতিক একটি পদক্ষেপে। যার জেরে দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বলে আদৌ কিছু থাকবে কি না, সেই প্রশ্ন ক্রমশ জোরাল হচ্ছে। অর্থনীতিবদদের মনেও জাঁকিয়ে বসছে সংশয় আর আতঙ্ক।
আরও পড়ুন-মহিলা ও বিদেশি সাংবাদিকদের ছাড়তে হবে বাংলো, কেন্দ্রের নির্দেশ
বিএসএনএল, ভারত পেট্রোলিয়াম, এয়ার ইন্ডিয়া, এলআইসির পর এবার নিলামে উঠতে চলেছে আরও একটি সরকারি সাধারণ বিমা সংস্থা। জানা যাচ্ছে, ন্যাশনাল ইনসিওরেন্স, ইউনাইটেড ইনসিওরেন্স এবং ওরিয়েন্টাল ইনসিওরেন্স— এই তিনটি রাষ্ট্রয়ত্ত বিমা সংস্থার মধ্যে একটির বিলগ্নিকরণের চিন্তাভাবনা শুরু করেছে মোদি সরকার। অনেকেই মনে করছেন, এভাবেই মোদি সরকার একের পর এক লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেসরকারি হাতে তুলে দিয়ে দেশটাকেই বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছে। জানা গিয়েছে, এই তিন বিমা সংস্থার মধ্যে ইউনাইটেড ইন্ডিয়া ইনসিওরেন্সের বেসরকারিকরণ করতে চায় কেন্দ্র। খুব শীঘ্রই এ ব্যাপারে বিলগ্নিকরণ সম্পর্কিত কমিটির কাছে সুপারিশ পাঠাতে চলেছে নীতি আয়োগ। কমিটি এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। কেন্দ্রের যুক্তি, ইউনাইটেড ইন্ডিয়ার আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে এই বিমা সংস্থার লোকসান হয়েছে ১ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা। যদিও ২০২০-২১ অর্থবর্ষে সেই লোকসান কমে হয় ৯৮৫ কোটি টাকা। কিন্তু তারপরে এই সংস্থার বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত থেকে সরছে না মোদি সরকার। যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চলতি অর্থবর্ষে এই বিমা সংস্থার লোকসানের পরিমাণ আরও কমতে চলেছে।
আরও পড়ুন-কমেছে গর্ভধারণের হার, জানাল কেন্দ্র
এই বিষয়ে গত বাজেট অধিবেশনের জবাবি ভাষণে সংসদে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ শতাব্দী রায় প্রশ্ন তুলেছিলেন, লোকসানের অজুহাতে যদি সরকারি সংস্থাকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে সেই সংস্থাকে সরকার নিজে কেন পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করছে না? উল্লেখ্য, বিমাসংস্থাগুলির আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতির জন্য ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে তিন বিমা সংস্থাকে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। তারমধ্যে ন্যাশাল ইনসিওরেন্সকে দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, ওরিয়েন্টাল ইউসিওরেন্সে বরাদ্দ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং ইউনাইটেড ইনসিওরেন্সে দেওয়া হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। সাধারণত ভবিষ্যতের জন্য আমজনতা বিমা করে থাকেন। কিন্তু মোদি সরকার সাধারণ মানুষের ভবিষ্যত নিয়েই ছিনিমিনি খেলতে চাইছে।