প্রতিবেদন : এই নড়বড়ে সরকার বেশিদিন টিকবে না। সরকার গড়বে ইন্ডিয়া। আমরা লক্ষ্য রাখছি, অপেক্ষা করছি। পরিবর্তন হবেই। শনিবার নবনির্বাচিত সাংসদদের নিয়ে বৈঠকের পর বললেন আত্মবিশ্বাসী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সাফ কথা, দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই বিজেপির। নিজেদেরও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। মোদিজির উচিত ছিল অন্য কাউকে ছেড়ে দেওয়া। দেশের মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ভোট দেননি। এই সরকার অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও বেআইনি। আমরা দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাই বিজেপিকে ভোট না দেওয়ার জন্য। নেত্রীর সংযোজন, এখন শুধু ভয় দেখিয়ে, ধমকে- চমকে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখিয়ে ১৪৭ জনকে তাড়িয়ে দিয়ে যেকোনও বিল পাশ করিয়ে নিতে পারবে না।
আরও পড়ুন-আজ দিল্লিতে শপথে এনডিএ
বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগে নেত্রী বলেন, নতুন সরকারের কাছে আমাদের সংসদরা এনআরসি নিয়ে আলোচনা চাইবে। এনআরসি বাতিল করতে হবে। এরপরই তিনি বলেন, নতুন সরকার মানে তো ইন্ডিয়ার সরকার। তবু যে ক’টা দিন থাকে চালাতে দিন। একটু দেখতে দিন নিজেদের কাকে কতটা সন্তুষ্ট রাখতে পারছে। নেত্রী বলেন, এখন আর গায়ের জোরে কোনও বিল পাশ করা যাবে না। এনআরসি, সিএএ, ইউফর্ম সিভিল কোড বাতিল করতে হবে। এই সরকার টিকবে না, ভেঙে যাবে। নিজেদের লোকেরাই ভেঙে বেরিয়ে যাবে। তাঁর কথায়, এনডিএ ও ইন্ডিয়ার মধ্যে পার্থক্য হল— এনডিএ-তে অনেক চাওয়া-পাওয়া আছে আর আমরা ইন্ডিয়া কিছু চাই না। মানুষের পাশে থাকতে চাই, দেশের ভাল করতে চাই। শেয়ার বাজারের কথা উল্লেখ করে নেত্রী বলেন, ফলপ্রকাশের দিন ও তার আগে-পরে শেয়ার বাজারে বড় কেলেঙ্কারি হয়েছে। এর যথাযথ তদন্ত হওয়া দরকার। বাংলায় তৃণমূলের কথা বলতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা ২৯টি আসনে জিতলেও আসলে জিতেছি ৩৫টি আসনে। কারণ আরও তিন-চারটি আসনে আমাদের হারানো হয়েছে, ভোট লুট হয়েছে। একের পর এক আইএএস, আইপিএস, আইসি বদল করা হয়েছে। একটি জেলার এসপি ৪৫ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করায় তাকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এভাবেই নির্বাচন কমিশন কাজ করেছে। ক্ষোভ নেত্রীর। তাঁর সংযোজন, কেন্দ্রীয় বাহিনী, পর্যবেক্ষক, টাকা সবকিছু দিয়ে ভোট লুট করা হয়েছে। তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে আমরা ১৯২টি আসনে এগিয়ে আছি। বিজেপি ৯০টিতে। ২০১৯-এ সংখ্যাটা ছিল তৃণমূল ১৬১ আর বিজেপি ১২১ । এই প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমের একাংশের বিরুদ্ধে তোপ দেগে নেত্রীর বক্তব্য, আশা করি আপনারা সত্যি কথাটা বলবেন।
আরও পড়ুন-হেরে বিজেপির মিথ্যাচার শুরু, তৃণমূল এগিয়ে ১৯২টি কেন্দ্রে
নতুন সরকারের প্রতি তাঁর বার্তা, এই সরকার ভঙ্গুর, দুর্বল, অসাংবিধানিক, বেআইনি। তাই এই সরকারকে শুভেচ্ছা জানানো যাচ্ছে না। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাফ কথা, যেসব রাজ্যের বকেয়া পাওনা আছে তার সবটুকু দ্রুত মিটিয়ে দিতে হবে।
এদিন সংবাদ মাধ্যমকে তুলোধোনা করে নেত্রী বলেন, আপনারা ভুয়ো এক্সিট পোল দেখিয়েছেন। এটা ক্রাইম। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের এই বিপুল জয়কে আগামী ২১ জুলাই মানুষের জয় হিসেবে উৎসর্গ করে ওই দিনটিকে (শহিদ দিবস) ধন্যবাদ-জ্ঞাপন দিবস হিসেবে পালন করবে দল। নেত্রী জানিয়েছেন, তিনি এখনই দিল্লি যাচ্ছেন না। সাংসদদের শপথগ্রহণের পর্ব সাঙ্গ হলে একবার যাবেন। তবে ইন্ডিয়া ব্লকের নেতৃত্বকে বাংলায় স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন-চুলচেরা খবর রয়েছে তাঁর কাছে, বোঝালেন নেত্রী
হরিয়ানায় কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে দলের রাজ্যসভার ৪ সাংসদকে সেখানে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন নেত্রী। ডেরেক ও’ব্রায়েন, সাগরিকা ঘোষ, দোলা সেন ও নাদিমুল হক এই ৪ সাংসদ হরিয়ানায় কৃষকদের সঙ্গে দেখা করবেন, কথা বলবেন এবং তাঁদের দাবি-দাওয়া সম্পর্কে তৃণমূলের সমর্থন ও সহানুভূতি জানাবেন। এদিন সংসদের দলনেতা-সহ সংসদীয় টিম তৈরি করে দেন নেত্রী। চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা করা হয়েছে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে, ডেপুটি লিডার কাকলি ঘোষ দস্তিদার। চিফ হুইপ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যসভায় দলনেতা করা হয়েছে ডেরেক ও’ব্রায়েনকে। ডেপুটি লিডার হয়েছেন সাগরিকা ঘোষ ও চিফ হুইপ নাদিমুল হক।