মণীশ কীর্তনিয়া: বাংলাকে অশান্ত করার জন্য গোপন ষড়যন্ত্র সামনে এনে বিজেপির ঘৃণ্য রাজনীতিকে বেআব্রু করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। শুধুমাত্র বাংলা দখলের জন্য রাজ্যের বিভিন্ন জনজাতি গোষ্ঠীর মধ্যে গন্ডগোল বাধানো থেকে ধর্মের ভিত্তিতে তাদের ভাগ করে ভোটে ফায়দা লোটার গভীর চক্রান্ত করেছে। আর এই চক্রান্ত হয়েছে দিল্লিতে। দিনকয়েক আগে এরাজ্যের তিন-চারজন বিজেপি নেতা দিল্লিতে আরএসএসের নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেই বাংলাকে অগ্নিগর্ভ করার চূড়ান্ত পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের (Panchayat Election) ওপর আলোচনায় জবাবি ভাষণ দিতে গিয়ে কার্যত বিজেপির হাটে হাঁড়ি ভেঙেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লিতে আরএসএসের গোপন বৈঠকের সব গোপন তথ্য হাতে এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর। তা তুলে ধরে তিনি বলেন, ১. জাতি এবং ধর্মের ভিত্তিতে বাংলার সমাজকে ভাগ করে দাও। তাতে আমরা আগামী নির্বাচনগুলিতে ফায়দা নিতে পারি। ২. মহিলা ও তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধকে বেশি করে হাইলাইট করতে হবে। যাতে তাদের সমবেদনা পাওয়া যায়। ৩. এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে যাতে বাংলার সরকারের অবস্থা খুব খারাপ হয়। ৪. রাজবংশী, আদিবাসী, গোর্খা, মতুয়া— এই বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করো। গন্ডগোল বাধাও। ৫. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে হবে। যাতে ২০২৪-এ এর ফায়দা তুলতে পারি আমরা। ৬. এমন দলকে ফান্ডিং করো যারা তৃণমূলের ভোট ভাগ করতে পারবে। বিজেপির এই ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা ফাঁস করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এরা বাংলায় আগুন জ্বালাতে চাইছে। তাঁর সংযোজন, রাজ্যে ১০টি কেন্দ্রীয় দল পাঠিয়ে স্টিং অপারেশন করার চেষ্টা করছে বিজেপি। সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্বের মনোনয়ন, নির্বাচন ও তার পরবর্তী অধ্যায়ের তথ্য তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষের আশীর্বাদে আমরা জিতেছি। ওরা হার মানতে না পেরে কুৎসা করছে। এদিন নন্দীগ্রাম সহ পূর্ব মেদিনীপুরে পঞ্চায়েতে হারের বিষয়টি উল্লেখ করে গদ্দারকেও তীব্র কটাক্ষ করেছেন। বলেন, নিজের জেলায় জিততে পারে না সে আবার নিজেকে বিরাট বড় নেতা বলে।
এদিন ১৯৯৩ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাম আমলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে মৃত্যুর পরিসংখ্যান তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই রক্তাক্ত ইতিহাস আমরা ভুলিনি। ইচ্ছে করে বাংলাকে বদনাম করার চেষ্টা করছে বিজেপি। এমনকী সর্বভারতীয় রেকর্ড থেকে তথ্য তুলে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখিয়ে দেন, ধর্ষণের ঘটনা বাংলাতেই সবচেয়ে কম।
আরও পড়ুন- ২৫-২৬ অগাস্ট হতে পারে ইন্ডিয়ার বৈঠক
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বলেন, বিজেপি গণতন্ত্র-জুডিশিয়ারিতে বিশ্বাস করে না। অনেক বিচারপতিরা ভয় পান। তাঁদের বলা হয় এই অর্ডার না দিলে তোমাকে দিল্লি পাঠানো হবে না। মিডিয়ার লোকের চাকরি খেয়ে নিয়েছে। উত্তরপ্রদেশে ১১ হাজার এনকাউন্টার। ত্রিপুরায় পঞ্চায়েত ভোটে ৯৫ শতাংশ আসন তো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে। অথচ বাংলায় পঞ্চায়েতে ২ লাখ ৩৬ হাজার নমিনেশন হয়েছে। তাঁর সংযোজন, সংবাদমাধ্যমকে এখানে আমরা স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দিই। ২ লাখ ৩৯ হাজার নমিনেশন হয়েছে। এর মধ্যে টিএমসি ৮৪৩৪৪, বিজেপি ৫৪৬২০, কংগ্রেস ১৭৭০২, বাম, ২৭৭৮৭টি। ২০১৮ তে নমিশেন সাবমিট ছিল ৬৫.০৮, এবার ৮৭.০৮। এবারে ৫ লাখ পোলিং অফিসার দেওয়া হয়েছে। ৩৮৯ জন অবজার্ভার। ৮০.৯৬ শতাংশ ভোট হয়েছে। ৬৯৬টি বুথে রিপোল হয়েছে। গন্ডগোল হয়েছে বলছে! ব্যালট বাক্স নিয়ে জলে ফেলেছিল কারা? ফেলতে বলেছিল কে? রোজ বলছে ৩৫৫, ৩৫৬ করব। কার্পেট বম্বিং করবে বলেছিল। আর তো ৬ মাস আয়ু। কাকে বম্বিং করবেন? মানুষকে? আমাকে বলার আগে মণিপুর বাঁচান। বিধায়করা গিয়ে বলুন প্রধানমন্ত্রীকে বাঁচাতে। কাশ্মীর, নাগালান্ড জ্বলছে। এরা বাংলার বদনাম করছে। আর প্রধানমন্ত্রী ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ইন্ডিয়া টিম যাচ্ছে।
পঞ্চায়েতে কিছু ঘটনা ঘটেছে। একদিনে বদল হবে না। এই কারণেই নবজোয়ার কর্মসূচি করা হয়েছিল মানুষকে বোঝাতে। তাই শান্তিতে ভোট হয়েছে। কোচবিহার, মুর্শিদাবাদ, রেজিনগর, ডোমকলে হয়েছে। ভাঙড়ে গন্ডগোল হয়েছে, আমরা করিনি। রামধনু জোট করেছে। কুলতলিতে হয়েছে। বর্ধমানের আউশগ্রামে হয়েছে। আর বাকি কোথাও গন্ডগোল হয়নি। সেগুলি তো বলল না! পূর্ব মেদিনীপুরে খেজুরিতে ঘর পোড়াল কারা? নন্দীগ্রামে অত্যাচার, মারধর করেছিল কারা? ঘর-বাড়ি পুড়িয়েছে। কারা করেছে এসব? চোখ নষ্ট করে দিয়েছে একজনের। এরা বাইরে থেকে গুন্ডা ভাড়া করে এনেছে। ৭টি জায়গায় গন্ডগোল হয়েছে। সেটা দেখিয়ে বলছে ২২টা জেলায় গন্ডগোল হয়েছে! আমরা মানবিক। দলমত নির্বিশেষে ২ লাখ টাকা করে দিয়েছি, যারা মারা গিয়েছে তাদের পরিবারের হাতে।