পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রছাত্রীদের জন্য যে-কটি স্কলারশিপ চালু করা হয়েছে, তা মধ্যে অন্যতম একটি স্কলারশিপ হল ঐক্যশ্রী স্কলারশিপ (Aikyashree Scholarship 2023)। রাজ্যের সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের জন্য ঐক্যশ্রী স্কলারশিপ চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু উন্নয়ন এবং অর্থ নিগম দফতর (WBMDFC)। সংখ্যালঘু শ্রেণিভক্ত পড়ুয়া, অর্থাৎ মুসলিম, খ্রিস্টান, বুদ্ধ, পার্সি এবং জৈন পড়ুয়াদের জন্য এই স্কলারশিপ চালু করা হয়েছে। এই স্কলারশিপ প্রোগ্রামে সংখ্যালঘু পড়ুয়া ছাড়া অন্য কোনও পড়ুয়ারা আবেদন করতে পারবেন না। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দপ্তর এবং আদিবাসী উন্নয়ন পিছিয়ে থাকা পরিবারের এসসি বা এসটি বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বার্ষিক বৃত্তির ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছে এক প্রকল্প যার নাম ‘শিক্ষাশ্রী প্রকল্প’।
আরও পড়ুন-পড়ুয়ারাই গড়ল বাগদেবীকে, দিল আলপনা
পশ্চিমবঙ্গের তফসিলি জাতি ও আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীদের বছরে ৮০০ টাকা স্কলারশিপ দেওয়া হয় এই প্রকল্পের মাধ্যমে। মেধাশ্রী স্কলারশিপ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ বিভাগের অন্তর্গত একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল, ওবিসি সম্প্রদায়ের পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের উৎসাহ দেওয়া। এতে পড়ুয়াদের আর্থিক সাহায্য করা হয়। এর ফলে তাদের স্কুল ছাড়ার প্রবণতা কমবে। মেধাশ্রী স্কলারশিপের মাধ্যমে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের বছরে ৮০০ টাকা দেওয়া হয় রাজ্য সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। শুধুমাত্র অর্থের অভাব যে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার পথে বাধা হচ্ছে তাদের জন্য মানবিক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যবস্থা করেছেন আশীর্বাদস্বরূপ ‘স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড’। স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা কোনও গ্যারান্টার ছাড়াই ব্যাঙ্ক থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন পেয়ে যাবে, এক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের হয়ে গ্যারান্টার থাকবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
আরও পড়ুন-এবার টিকটকে এলেন বাইডেন
চলতি বছরে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর হাত ধরে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ছাত্র-ছাত্রীদের আধুনিক বিষয়ে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছে। দুটি নতুন বিষয় আর্টিফিশিয়াল- ইনটেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর ডেটা সায়েন্স। এই বিষয়টি নবাগতদের জন্য খুবই ভাল। যেসব বিদ্যালয়ে এই বিষয়টি পড়ানো হবে সেই সমস্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষিকাদের ১৬ দিনের ট্রেনিং করানো হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স ডিপার্টমেন্টে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে সমগ্র শিক্ষা মিশনে বাংলাকে কেন্দ্রের দেওয়া বরাদ্দের প্রস্তাব ছিল ১৭৪৫.৭৯ কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবচিত্র তার ধারে কাছেও পৌঁছয়নি। মাত্র ৩১১.২৯ কোটি টাকা। বাংলাকে দিয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। অর্থাৎ বাংলার বকেয়ার পরিমাণ ১৪৩৫.৫০ কোটি টাকা। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের অন্তর্বর্তী বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ না বাড়ানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক ব্রাত্য বসু। ১০০ দিনের কাজ আবাস যোজনা ও শিক্ষাক্ষেত্রে টাকা না দেওয়ায় বাংলার প্রতি বঞ্চনার জবাব দেবেন বাংলার সাধারণ ভোটার।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
জঙ্গলমহলে প্রশাসনিক কাজে যাওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখতে পান বাচ্চারা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ি ফিরছে। আশ্চর্য হয়ে কারণ অনুসন্ধান করে জানতে পারেন অত্যধিক গরমে রাস্তার পিচ গলে গেছে। ছাত্রছাত্রীরা সব নিম্নবিত্ত পরিবারের। পায়ে জুতো নেই। তাই হাঁটতে পারছে না। তখনই নির্দেশ দেন বিনামূল্যে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের জুতো প্রদান করার ব্যবস্থা করতে। এই প্রকল্পের জন্য ৫১ লক্ষ ৫০ হাজার ৭৬৭ জোড়া জুতো প্রদান করা হয় এবং সরকারের খরচ হয় ২১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা। টাকার অভাবে যাতে পড়াশোনা বন্ধ না হয় সেকথা চিন্তা করে সরকার ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে বই দেওয়ার ব্যবস্থা করে আর এ-জন্য খরচ হয় ১০৯ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা। ২০১১ সাল থেকে ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার জন্য এবং বৈষম্য দূর করার জন্য স্কুল ব্যাগ বিনামূল্যে প্রদান করা হয় । ২০২২ সালে ১২ লক্ষ ৮১ হাজার ৭৯১টি ব্যাগ দেওয়া হয়, এই জন্য সরকারের খরচ হয় ১ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা। বিনামূল্যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীকে স্কুল ইউনিফর্মের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং এক্ষেত্রে সরকারের খরচ হয়েছে ১১ কোটি ৯৯ লক্ষ ।
আরও পড়ুন-লুকিয়ে থাকা প্রাচীন শহর
ভারতবর্ষকে বলা হয় পৃথিবীর একটি ছোট্ট সংস্করণ এবং পশ্চিমবঙ্গকে বলা হয় ভারতবর্ষের একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ। বহুভাষাভাষী মানুষ এখানে বসবাস করেন এবং সব ভাষাকেই মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। উত্তরবঙ্গের একটি প্রধান ভাষা হল রাজবংশী বা কামতাপুরী ভাষা। আর এই ভাষাকে মর্যাদা দিতে কামতাপুরী বা রাজবংশী ভাষায় ২০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরি করা হয়েছে। রাজ্যের পিছিয়ে পড়া এলাকার বাচ্চাদের মূল স্রোতের বাচ্চাদের সাথে প্রতিযোগিতায় আনার জন্য ৩৮টি BRGF স্কুল তৈরি করা হয়েছে। ৭৬৫টি জুনিয়র স্কুলকে মাধ্যমিক স্কুলে রূপান্তরিত করা হয়েছে। ২ হাজার ১৩১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উত্তীর্ণ করা হয়েছে। ১০৮১টি নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরি করা হয়েছে যাতে বাচ্চাদের দু থেকে তিন কিলোমিটার কষ্ট করে যেতে না হয়। টিউশন-কোচিং ক্লাসে যেতেও সময় লাগে। তাদের সুবিধার্থে। এ-ছাড়াও মেয়েদের বাবা-মায়েরা দূরের স্কুলে পাঠাতে চায় না। তাই ৬ হাজার ৭০টি উচ্চপ্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। নতুন করে ২ লক্ষ ১৬ হাজার শ্রেণিকক্ষ তৈরি করা হয়েছে যাতে শ্রেণিকক্ষে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় থাকে। ২০১০-১১ সালে মোট বিদ্যালয় ছিল ৬০৮৭৩টি বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৬৩ হাজার ৯০২। ২০১১-২৩ সাল পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের যাতে পঠন পাঠনে সুবিধা হয় সেজন্য ৯ হাজার ৭৯৮টি স্কুলে ল্যাবরেটরি তৈরির জন্য গ্র্যান্ট দেওয়া হয়েছে এবং ৭ হাজার ৯৭০টি বিদ্যালয়ে লাইব্রেরি তৈরির জন্য সরকার গ্র্যান্ট দিয়েছে। ২০১১-২২ সালে ১০০ শতাংশ বিদ্যালয়ে শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ৯৯.৯১ শতাংশ বিদ্যালয়ে, উচ্চ-প্রাথমিকের ক্ষেত্রে ৯৯.৯৩ শতাংশ বিদ্যালয়ে, মাধ্যমিকে ৯৯.৯২ শতাংশ বিদ্যালয়ে এবং উচ্চমাধ্যমিকের ৯৯.৯৪ শতাংশ বিদ্যালয়ে পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্টুডেন্ট ক্লাসরুম রেশিও উচ্চপ্রাথমিকে ২০১১ সালে ছিল ৪৫ এবং ২০২২ সালে তা কমে হয় ২৯, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ২০১১ সালে ছিল ৮১ কিন্তু ২০২২ সালে তা কমে হয় ৬১, একইভাবে উচ্চমাধ্যমিকের ক্ষেত্রেও কমে ২০১১ সালে ছিল ৮০ কিন্তু ২০২২ সালে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে হয় ৫৫।
(পরবর্তী অংশ আগামীকাল)