উচ্চমাধ্যমিক পরবর্তী পর্যায়ে জীবনের দিক নির্দেশনা

উচ্চমাধ্যমিক ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে প্রথমেই বলব এই পরীক্ষা তোমাদের জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। এই পর্যায়ের অর্জিত জ্ঞান ঠিক করে দেবে ভবিষ্যতের গতিবিধি।

Must read

ড. পার্থ কর্মকার: জয়েন্ট ডিরেক্টর অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশন, হায়ার এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট, গভর্নমেন্ট অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল, অ্যান্ড অ্যাডভাইজার অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশন। প্রাক্তন উপসচিব শিক্ষা, পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ
উচ্চমাধ্যমিক ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে প্রথমেই বলব এই পরীক্ষা তোমাদের জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। এই পর্যায়ের অর্জিত জ্ঞান ঠিক করে দেবে ভবিষ্যতের গতিবিধি। এই সময় অত্যন্ত সচেতন ভাবে, চোখ খোলা রেখে শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং বিভিন্ন বিষয়ে যাঁরা পড়াশোনা করেছেন-জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে নিজের লক্ষ্য স্থির করে নিতে হবে। এই সময়ের সামান্য ভুল ভবিষ্যৎ জীবনের স্বাভাবিক ছন্দকে বিঘ্নিত করতে পারে। আমরা তা কখনও হতে দিতে পারি না। আর এই জন্যই আমাদের এই আলোচনা। আলোচনার দিকগুলি আমরা জেনারেল পড়াশোনার থেকে শুরু করি। কেননা আমাদের ছাত্রছাত্রীদের ৮০% জেনারেল লাইন নিয়ে পড়াশোনা করছে।

আরও পড়ুন-বেদ পড়ানোর ফতোয়া, কচিকাঁচাদের জন্য জরুরি!

অর্থাৎ প্রধানত সায়েন্স, কমার্স, আর্টস—এই তিনটি বিষয় নিয়ে পড়ছে। দেখা যাক উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর এই বিষয়গুলি নিয়ে পড়াশোনার কী কী দিক আছে এবং সেই পড়াশোনাগুলো করার মাধ্যমে আমরা কোন কোন জীবিকাতে প্রবেশ করতে পারি এবং জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারি। বিষয়ভিত্তিক কোন কোন কোর্স (যেমন বিজ্ঞান বা সায়েন্স, কলা বিভাগ বা হিউম্যানিটিস এবং বাণিজ্য বিভাগ বা কমার্স) গুলি আছে যা আমাদের জীবিকার সন্ধান দেয়। সেগুলো শুরু করার আগে প্রথমে আমরা সামগ্রিকভাবে একেকটা বিভাগ ধরে দেখে নিই কী কী কোর্স আমরা পড়তে পারি বা কোন পথে আমরা জীবিকার সন্ধানে অগ্রসর হতে পারি। আজ প্রথম পর্ব
প্রথমে আসা যাক আর্টস বা হিউম্যানিটিস বা কলা বিভাগের কথায়—
বেশিরভাগ সময়ই আমরা শুনতে পাই আর্টস নিয়ে পড়ে শুধু শিক্ষকতা পেশাকে নির্বাচন করা ছাড়া উপায় থাকে না। সেটা স্কুল বা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে। অনেক প্রতিযোগী তাই আর্টস বা হিউম্যানিটিস বা কলা বিভাগের কোনও ভবিষ্যৎ নেই। কিন্তু এগুলো ভ্রান্ত ধারণা। আমাদের এই আলোচনার উদ্দেশ্য হল ছাত্রছাত্রীদের এই বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেওয়া যে তারা ভালবেসে বিষয়টিকে পড়লে আন্তরিক ইচ্ছা এবং চেষ্টা থাকলে শুধু শিক্ষকতার কাজ নয়, এই বিষয়ের উপরে ভিত্তি করে যে সকল পেশা নির্বাচন করা যায় সেগুলো তারা ভবিষ্যতে বেছে নিতে পারবে।

আরও পড়ুন-ঝড়ে বিমান, তদন্তের নির্দেশ

আর্টস নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন করলে আর্টসের প্রধানত তিনটি বিষয়ের চিন্তা করতে হবে ছাত্রছাত্রীদের, যেমন—
ব্যাচেলর অফ আর্টস (B.A. General), B.A.(Hons.) এবং ব্যাচেলর ইন রুরাল স্টাডিজ। অন্যগুলো জানলেও ছাত্রছাত্রীদের কাছে এটা কিছুটা নতুন। ব্যাচেলর ডিগ্রি যেটা ব্যাচেলর ইন রুরাল স্টাডিজ—এটি শুধুমাত্র বিশ্বভারতীতে পড়ানো হয়। তিন বছরের কোর্স। রুরাল ইকনোমি, স্ট্যাটিসটিক্স, কো-অপরেশন পঞ্চায়েত, অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি, হর্টিকালচার, এগ্রিকালচার, এন্টারপ্রেনিউরশিপ এই সকল বিষয় নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা পড়তে পারে।
গ্র্যাজুয়েশন ইন আর্টস-এর ক্ষেত্রে আমরা যে বিষয়গুলি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে পাই সেগুলো হল ইতিহাস, হোম ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ফ্যামিলি রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, জার্নালিজম, মাস কমিউনিকেশন, নিউট্রিশন, ফিজিওলজি, অ্যানথ্রোপলজি, স্যোশিওলজি বা সমাজতত্ত্ব, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা পলিটিক্যাল সায়েন্স, মিউজিক, ভূগোল, দর্শন, পরিবেশ বিজ্ঞান, কৃষি, শিক্ষা, ফিজিক্যাল এডুকেশন, সংস্কৃতি এবং সাহিত্য। এবার দেখে নেওয়া যাক এই সকল বিষয়গুলি পড়ে আমরা কোন ধরনের জীবিকা বেছে নিতে পারি।

বাংলা (Bengali) ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে—
ভাষা যোগাযোগের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এটি ব্যক্তিগত কথা আদান-প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করার জন্য সঠিক ভাষা শিক্ষা আমাদের জন্য জরুরি। স্নাতক স্তরে বাংলা বিষয় নিয়ে পড়ার জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়ার পদ্ধতি আছে। সাহিত্যের ইতিহাস রচনার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীর সাহিত্যের প্রতি উৎসাহ, লেখার দক্ষতা ও সাহিত্যবোধ যাচাই করা হয়। যারা বাংলা অনার্স পড়তে চাও উচ্চমাধ্যমিকের সংস্কৃত ইতিহাস দর্শন এই বিষয়গুলি সঙ্গে থাকলে অনেকটা সুবিধা হয়। এছাড়াও এডুকেশন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সঙ্গে থাকতে পারে তবে যেকোনও বিভাগ থেকে বাংলা অনার্স নিতে পারা যায়।

আরও পড়ুন-ডাকঘরের গাফিলতি ভোগান্তি সাধারণের

ভুল ধারণা দূর করে দাও:
অনেক সময় বন্ধুদের কাছে একটি কথা শোনা যায় কোনও কিছুতে চান্স পায়নি তাই বাংলা/ আর্টস নিয়ে পড়ছে। এটা কখনওই সঠিক কথা নয়। বিষয়ের প্রতি শিক্ষার্থীর আন্তরিক ভালবাসা, অপরিসীম ধৈর্য, অধ্যবসায় এই বিষয় নিয়েই তাকে পৌঁছে দিয়েছে উন্নতির চরম শিখরে। আমাদের দেশে নোবেলজয়ী কবি, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে অনেক জ্ঞানীগুণী মানুষ এই আর্টস নিয়ে পড়াশোনা করেই উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছেছেন।
কোন পথে যাবে বাংলা সাহিত্য পড়ে!
১) বাংলা ভাষার চর্চা ও গবেষণা গোটা বিশ্বে অত্যন্ত উদ্দীপনার সঙ্গে চলছে। একথা স্বীকার করতেই হয় যে বাংলা সাহিত্য পড়ে স্নাতক হওয়ার পর স্নাতকোত্তর কম্পারেটিভ লিটারেচার পড়ার সুযোগ থাকে। এই কোর্সগুলি পড়লে জার্নালিজম, মাস কমিউনিকেশন-এর পথ খোলা থাকে।
২) বাংলায় স্নাতক হওয়ার পর ভাষাতত্ত্ব উচ্চশিক্ষার জগৎ সম্ভাবনায় ভরপুর থাকে। ভাষাতত্ত্বে গবেষণা করা যায়।
২) বাংলা ভাষা সাহিত্য নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করলে শিক্ষকতার সুযোগ রয়েছে- প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের চাকরি।
৩) স্নাতকোত্তর পরীক্ষার পর NET/ SET পরীক্ষায় বসতে পারে শিক্ষার্থীরা। উত্তীর্ণ হলে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ানোর সুযোগ থাকে।
৪) নানা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসার সুযোগ থাকবে ।
৫) সাংবাদিকতার কাজে বাংলা ভাষার গুরুত্ব (বিশেষ করে বাংলা সংবাদমাধ্যমের ক্ষেত্রে) সকলেরই জানা। শুধু তাই নয়, সংবাদপত্রের বিভিন্ন শাখায় বাংলা ভাষার শিক্ষার্থীরা কাজের সুযোগ পায়। সম্পাদনা, প্রতিবেদন রচনা, প্রকাশনায়, প্রুফ রিডার, এডিটর হিসাবে বাংলা ভাষা ও সৃজনশীল কর্ম যেমন – সাহিত্য বিষয়ক লেখালিখি, চলচ্চিত্র, নাটক বা সিরিয়ালের চিত্রনাট্য লেখা ইত্যাদিতে সাহিত্যের ছাত্রছাত্রীরা সুযোগ পেয়ে থাকে। ভাষা ও সাহিত্যে পড়াশোনা থাকলে বিজ্ঞাপন সংস্থারও চাকরি পাওয়া যায়। এছাড়া বাংলা ভাষায় সঙ্গে অন্যান্য ভাষা জানা থাকলে অনুবাদকের কাজ পাওয়া যায়।
বাংলা পড়ানো হয় এমন কতগুলি উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:
494 affiliated colleges are there with Bengali Department in West Bengal. Out of West Bengal: Delhi University, JNU, BHU, Bhagalpur University, Ranchi University, Assam Silchar Central University, Tripura Central University with eminent Bengali Departments.
Out of India: All over Bangladesh, Tokyo University, Japan; Chicago University, states, Harvard University; SOAS University, UK etc.

আরও পড়ুন-বন থেকে আয়ের লভ্যাংশ পাচ্ছেন বনরক্ষকরা, রাজ্য বন দফতরের অভিনব উদ্যোগ

ইংরেজি (English) ভাষা সাহিত্যের ক্ষেত্রে—
১) সরকারি প্রায় সমস্ত কলেজেই ইংরেজি নিয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি আছে। কোনও কোনও কলেজে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার ডিগ্রি আছে। বিদ্যালয়, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগদান করা যায়।
২) জার্নালিজম, মাস কমিউনিকেশন, কনটেন্ট রাইটিং, ট্রান্সলেটর, এডিটর, কপিরাইটার, প্রুফরিডার, স্ক্রিপ্ট রাইটার ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংবাদপত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি দফতরে চাকরির সুযোগ রয়েছে।
৩) লাইব্রেরি সায়েন্স এবং অ্যাপ্লায়েড আর্টসের সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য বা জাতীয় স্তরের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সফল হওয়ার সুযোগ বেশি থাকে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়লে।
৪) ইংরেজি সাহিত্য পড়াশোনা করলে অন্যান্য ভাষার সাহিত্য, ভাষাতত্ত্ব, নিউরো লিঙ্গুইস্টিকস আর্ট এবং আর্কিটেকচার, জেন্ডার, শিশু সাহিত্য, গল্প সাহিত্য, থিয়োলজি, দলিত সাহিত্য কালচার, স্টাডি ইত্যাদি নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে জাতীয় স্তরে থেকে আন্তর্জাতিক স্তরে অনেক দফতরে চাকরির সুযোগ আসে।
৫) বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসার সুযোগ রয়েছে।
৬) ইংরেজি কমিউনিকেশন ল্যাঙ্গুয়েজ হওয়ায় কর্পোরেট কমিউনিকেশন, বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থায় ইংরেজির প্রয়োগ শিক্ষণ, বাণিজ্যিক সংস্থায় কনটেন্ট রাইটিং বা ইংরেজি জানা ব্যক্তিবর্গের জন্য সিনেমার পরিচালনা, সম্পাদনা, সিনেমাটোগ্রাফি, স্ক্রিপ্ট লিখন, অভিনয়, ফিল্ম রিভিউ, গ্রাফিক ডিজাইন, ফ্যাশন শিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রেও কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে।
প্রায় অনেক ডিগ্রি কলেজে ইংরেজি পড়ানো হয়। তার মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হল—
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, আশুতোষ কলেজ, স্কটিশ চার্চ কলেজ, বেথুন কলেজ, মৌলানা আজাদ কলেজ ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে গিয়ে সবরকম তথ্য দেখে নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করার পর আবেদন করতে হবে।

Latest article