প্রতিবেদন : দুই জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক। সেই বৈঠক থেকেই একদিকে শিল্পায়নের গতি বাড়াতে উৎসাহ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী, অন্যদিকে কর্মসংস্থান কীভাবে বাড়ানো যায় তার রুটম্যাপ তৈরি করে দিলেন। সেইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী নজির তৈরি করে বিড়ি শ্রমিকদের জন্য পৃথক হাসপাতালের কথা বলেছেন। পর্যটনে উৎসাহ দিয়ে সরকারি আয় বাড়ানোর প্রশ্নেও দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। মালদহ এবং মুর্শিদাবাদে দুই বৈঠকের শেষে নিট ফল এটাই, চাঙ্গা প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে নেমে পড়লেন আধিকারিকরা। জনপ্রতিনিধিরাও মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ‘ফার্স্ট প্রায়োরিটি বেসিস’-এ কাজ শুরু দিতে চান।
আরও পড়ুন-KMC 107: এবার তৃণমূলের বাজি লিপিকা
দুপুরে মালদহের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর ফোকাস পয়েন্ট ছিল শিল্পের দিকে। একাধিক শিল্প গড়ে তোলার কথা মঞ্চ থেকে ঘোষণা করলেন। নতুন মালদহ গড়ার ডাক দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, জেলার ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে হবে ম্যাঙ্গো হাব, ১৫ হাজার জমিতে পোল্ট্রি ফার্ম, পাকুয়াহাটে তৈরি হবে ডিম উৎপাদন কেন্দ্র। একইসঙ্গে কার্পেট ও সিল্কপার্ক ক্লাস্টার হবে। ইথাইল প্ল্যান্ট তৈরির কারখানার কাজ চলছে জেলায়। ৪৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। ২৩০০ কর্মসংস্থান হবে। মালদহের আম নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রতি বছর ৩ লক্ষ ৩ হাজার মেট্রিকটন আম উৎপাদন হয়। তাই রাজ্যের উদ্যোগে জেলায় আর একটি ম্যাঙ্গো হাব হবে।
আরও পড়ুন-BSF নিয়ে কৃষ্ণনগরে নজরদারির নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর
গঙ্গা ভাঙন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এদিন ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কেন্দ্রের এনিয়ে ন্যূনতম ভাবনা নেই বলে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর। অবিলম্বে প্রশাসনকে ভাঙন কবলিত দুর্গতদের পুনর্বাসনের নির্দেশ দেন। উন্নয়নের ধারা যাতে ব্যাহত না হয় তাই মালদহ জেলা পরিষদে কোনও সভাধিপতি নেই জেনেই রিপোর্ট চান। অবিলম্বে সভাধিপতি নির্বাচন হবে বলে জানান। মালদহে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, খুব শীঘ্রই ছোট বিমানবন্দর হবে। বহুদিনের সমস্যা মিটবে। গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের মাঝেই মালদহে ক্ষীরকদম্বের প্রসঙ্গ উত্থাপন করতে ভোলেননি।
আরও পড়ুন-Sayantika Banerjee: জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনার কবলে সায়ন্তিকা
জোড়া প্রশাসনিক সভার দ্বিতীয়টি ছিল মুর্শিদাবাদে। বিকেল পাঁচটায় শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী ৩৮৪ কোটি টাকার প্রস্তাবিত অর্থমূল্যের ৩৬টি জনমুখী শিলান্যাস করেন। এছাড়া পানীয়জল প্রকল্পে ১৬০ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। মুর্শিদাবাদ মানেই ইতিহাসের শহর। তাই জেলার গাইডদের স্বীকৃতি দিতে ট্যুরিজম সেন্টার তৈরি হবে। ঐতিহাসিক স্থানের প্রচার সেখান থেকে হবে। রেজিনগরে হবে ২০০ কোটি টাকার পেঁয়াজ সংরক্ষণ প্রকল্প।
আরও পড়ুন-বিপিন রাওয়াত (১৯৫৮–২০২১)
মুর্শিদাবাদে অসংখ্য বিড়ি শ্রমিকের কথা মাথায় রেখে মুখ্যমন্ত্রী পৃথক হাসপাতাল তৈরির প্রতিশ্রুতি দেন। জেলার সবচেয়ে বড় সমস্যা, দিল্লি যাওয়ার রেল-সড়কপথ রেল দফতর শেষ করছে না। কাজ আটকে রয়েছে কয়েকটি পরিবারের জন্য। স্থানীয় নেতৃত্বকে বলেন অবিলম্বে আলোচনায় বসে সমস্যা মেটাতে। নসিপুর রেলব্রিজের ৯৫ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে। কয়েক একর জমির জন্য কাজ শেষ হচ্ছে না। তাই মুখ্যমন্ত্রী অবিলম্বে বিষয়টিতে নজর দিতে বলেছেন।
আরও পড়ুন-২৬ কোটির উন্নয়ন, ঘরে ঘরে জল, আলো
মুর্শিদাবাদেও আম ও লিচু সংরক্ষণের জন্য নতুন কেন্দ্র তৈরির কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। অবিলম্বে জমি খুঁজে বের করার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। ভাঙন মুর্শিদাবাদের বড় সমস্যা। স্থানীয় সরকারি আধিকারিক এবং জনপ্রতিনিধিদের মাস্টার প্ল্যান তৈরি করতে বলেছেন। যা মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের কাছে পাঠাবেন। তবে মুখ্যমন্ত্রী ভাঙনের স্থায়ী সমাধানের পথ স্থানীয়ভাবেই খুঁজতে নির্দেশ দিয়েছেন।