পৃথিবীতে ফেরার লড়াই

দশদিনের জন্য মহাকাশে গিয়ে আটকে আছেন সুনীতা উইলিয়ামস। সঙ্গী বুচ উইলমারকে নিয়ে। মহাকাশ থেকে দিব্যি খোশমেজাজে লাইভ করছেন। জানাচ্ছেন মহাকাশের নানা বিরল অভিজ্ঞতা। ঘূর্ণিঝড়, হ্যারিকেনের কেমন রোমাঞ্চ মহাকাশের, সব জানাচ্ছেন। কিন্তু জানাতে পারছেন না যে কবে ঘরে ফিরবেন। কবে ফিরবেন পৃথিবীতে। বারবার স্মৃতিতে খালি ভেসে আসছে কল্পনা চাওলার ওডিসির কথা, না ওটা তো দুঃস্বপ্ন। পৃথিবীতে ফিরে মহাকাশের মহাকাব্য লিখবেন সুনীতা। এটাই এখন স্বপ্ন ভারতবাসীর, বিশ্ববাসীর। সেই মহাকাব্যের কয়েক অধ্যায় ঘুরে দেখলেন বিশ্বজিৎ দাস

Must read

দু’জন মানুষ ঘর করে
চারিদিকে অন্ধকার। বুকের মধ্যে শুধু আলো জ্বলছে। দু’জন মানুষ হেঁটে চলেছেন মহাশূন্যে— মহাকাশে। কিছুটা হেঁটে ক্লান্ত। সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর খুঁজছেন জল। বুদবুদের মতো মহাকাশে এখানে সেখানে উড়ে বেড়ায় জল। একটু হাত-মুখ ধোয়ার জন্য ভাসমান বুদবুদ ধরতে গেলে জামা-কাপড় ভিজে যায়। কিন্তু মহাকাশে গেছেন বলে কি খাওয়াদাওয়া বন্ধ থাকবে? মহাকাশে নভশ্চরদের খাওয়ার জন্যে কোনও ডাইনিং টেবিল নেই। খাবার সময় সমস্ত মহাকাশচারীরা ডাইনিং রুমে যান সেখানে উড়ন্ত খাবারের প্যাকেট থাকে। সেগুলো ধরে ধরে খেতে হয়!

আরও পড়ুন-পুজোর আগে বর্ষায় দুর্দশাগ্রস্ত মৃৎশিল্পীদের বিকল্প জায়গা দেবে পুরসভা

মহাকাশে যাওয়া-আসা
সুনীতার মহাকাশে যাওয়া এই প্রথম নয়, এর আগেও বার দুয়েক তিনি মহাকাশে গেছেন। অবশ্য সুনীতার আগে এ-দেশ থেকে মহাকাশে গেছেন কল্পনা চাওলা। সুনীতা দিনে দিনে নিজেকে তৈরি করেছেন। ৩০ ধরনের ফাইটার এয়ার ক্রাফ্টে ৩ হাজার ঘণ্টার বেশি ওড়ানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। ইউ এস নেভাল অ্যাকাডেমি থেকে স্নাতক হওয়া সুনীতা উইলিয়ামস ফাইটার প্লেনও উড়িয়েছেন। ১৯৯৮ সালে তিনি নাসাতে একজন মহাকাশচারী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। বাবার অনুপ্রেরণা তাঁর কাজে লেগেছে। এর আগে ৫৯ বছর বয়সি সুনীতা ২০০৬ এবং ২০১২ সালে মহাকাশে গেছেন। মহাকাশে কাটিয়েছেন মোট ৩২২ দিন। ২০০৬ সালে ১৯৫ দিন ২০১২-তে ১২৭ দিন। ২০১২-র মিশনে সুনীতা ৩ বার মহাকাশে হেঁটেছিলেন। মহাকাশে এই স্পেস ওয়াক করার সময় স্পেস স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসতে হয়। প্রথম মিশনে তিনি হেঁটেছিলেন চারবার। এই প্রথমবার সুনীতা মহাকাশে গেছেন বোয়িং-এর স্টারলাইনার মহাকাশ যানে। সঙ্গে বুচ উইলমোর। প্রথমবার এই স্টারলাইনারে মহাকাশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে Boe-OFT এবং ২০২২ সালে Boe-OFT 2 চালু হয়েছিল। স্টারলাইনারের এই মিশনে খরচ হয়েছিল ১ বিলিয়ন ডলার। তারা ভেবেছিল এই অভিযান সফল হলে মহাকাশ গবেষণায় বড় সাফল্য পাবে ভারত। নাসার তৈরি স্পেস শাটল ফ্লিট অবসর নিয়েছে ২০১১ সালে। এরপরে নাসা কমার্শিয়াল ক্রু প্রোগ্রাম চালু করে। যার অধীনে ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেস এক্স এবং বোয়িং মহাকাশযান তৈরি করেছেন।
যে আশা নিয়ে সুনীতা মহাকাশে গেলেন তা যদি সফল হয় তাহলে বোয়িং-এর স্টারলাইন বিমানও মহাকাশ অভিযানের জন্য অনুমোদিত হবে। ২০২০ সালে অবশ্য স্পেস এক্স বিমানে মহাকাশচারী পাঠিয়েছিল। সুনীতা যদি নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসেন তাহলে তাঁর স্বপ্ন দেখা সফল হবে। সুনীতা প্রত্যয়ী কণ্ঠে বলে গেছেন, ‘‘এবার আমি যখন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছব তখন বাড়ি যাওয়ার মতো হবে।’’ সত্যিই তো মহাকাশই এখন সুনীতার ঘরবাড়ি। প্রতি মুহূর্তে লড়াই জারি রেখেছেন পৃথিবীতে ফিরে আসার। মহাকাশে তিনি এখন বন্দি। আপাতত ফিরতে পারছেন না সঙ্গে ব্যারি বুচ উইলমোরও। সুনীতা উইলিয়ামস বর্তমানে তাঁর সঙ্গীর সঙ্গে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ভাল আছেন, নিরাপদে রয়েছেন। তবে দীর্ঘ সময় মহাকাশে থাকা তাঁর পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। মূলত, মহাকাশচারীরা যখন মহাকাশে যান তখন সেখানকার পরিবেশ পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়। সমস্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম থাকা সত্ত্বেও কেউ মহাকাশে বেশিদিন থাকতে পারে না। কারণ মহাকাশে মাইক্রোগ্র্যাভিটি এবং বিকিরণের বিষয়টি মানব স্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হয়।

আরও পড়ুন-থাকছে না বুকিং কাউন্টার, মেট্রোর আধুনিকীকরণে বিপাকে পড়তে চলেছেন ৩ স্টেশনের নিত্যযাত্রীরা

তবু স্বপ্ন দেখি
মহাকাশে দীর্ঘ সময় থাকার সবচেয়ে বড় অসুবিধা হল সেখানে কোনও মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। তাই এর অভাবে শরীরের তরলগুলো ওপরের দিকে যেতে শুরু করে। ফলে মুখ ফুলে যায়। নাক বন্ধ হতে থাকে। পায়ে তরলের অভাব ঘটতে থাকে। শরীরে রক্তের অভাব দেখা দেয় এবং রক্তচাপের ব্যাঘাত ঘটে। পৃথিবীতে ফিরে আসার পর তাদের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। অনেক সময় তারা মাটিতে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারেনি। তারা অজ্ঞান হয়ে যান। মাইক্রোগ্র্যাভিটিও পেশিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলে যার ফলে তাদের পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। পা এবং পিঠ সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আসলে যান্ত্রিক চাপ কমার কারণে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়।
শরীরখানা গড়ো
তবে আরও একটা কথা জানিয়ে রাখা ভাল মহাকাশচারীরা স্পেস স্টেশনে নিয়মিত ব্যায়াম করেন। তাঁদের প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্যে। শরীরের তরল পদার্থের সমবণ্টনের অভাবে মূত্রে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
কিন্তু এসব চিন্তা এখন সুনীতা বা ব্যারিকে খুব একটা ভাবাচ্ছে না। তাঁদের লড়াই সুস্থভাবে পৃথিবীতে ফিরে আসার। প্রাথমিক ভাবে তাঁদের মিশন ছিল মাত্র ৮ দিনের। কিন্তু ৫ জুন বোয়িং স্টারলাইনারের উড়ানে যাত্রা শুরু করে এখনও ফিরে আসা হয়নি সুনীতাদের।

আরও পড়ুন-বাংলার বিরুদ্ধে কেন্দ্রের বঞ্চনা,  সংসদে সোচ্চার ঝাড়গ্রাম, বর্ধমানের সাংসদ

নাসা জানিয়েছে দীর্ঘ সময় ওখানে থাকতে হবে সুনীতাদের। ২১ দিন পরে ফেরার কথা পরেই রয়ে গেছে। নাসার ইঞ্জিনিয়াররা বোয়িং ক্যাপসুলের সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করছেন। এখনও কিছু বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাকি রয়েছে। সবটা সেরে, তাঁদের চোখে মহাকাশচারীরা নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত নাসা ফেরার তারিখ নির্ধারণ করেনি। এ-প্রসঙ্গে নাসার কমার্শিয়াল ক্রু প্রোগ্রাম ম্যানেজার স্টিভ স্টিচ জানান, মহাকাশচারীদের ফিরিয়ে আনার জন্য কোনও তাড়াহুড়ো নেই। নাসা স্টারলাইনারের মিশনের সর্বাধিক সময়কাল বাড়ানোর কথা ভাবছে। যেটা ৪৫ দিন ছিল সেটা ৯০ দিন পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। তবে তার মধ্যে ত্রুটিমুক্ত স্টারলাইনার তৈরি করতে হবে। মহাকাশ গবেষক এবং মানুষদের মধ্যে উৎসাহ বাড়ছে যে, কেন আটকে রইলেন সুনীতা। স্টারলাইনার ওড়ার আগে রকেটে হিলিয়াম লিকেজের সমস্যা ধরা পড়েছিল। ফ্লাইট চলাকালীন আরও বেশ কিছু ত্রুটি লক্ষ্য করা গিয়েছে। আর যেহেতু, হিলিয়াম থ্রাস্টার জ্বালানি চাপ দিতে ব্যবহৃত হয়। তাই এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। কিন্তু হঠাৎ কেন এমন সমস্যার সৃষ্টি হল, সেটাই বোঝার চেষ্টা করছে নাসা এবং বোয়িং। জানা গিয়েছে, পাঁচটি ক্ষতিগ্রস্ত থ্রাস্টারের মধ্যে ইতিমধ্যেই চারটি মেরামত করা হয়েছে। কিন্তু আশঙ্কার কথা ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের ভেতরে বিজ্ঞানীরা একটি সুপার বাগের দেখা দেখা পেয়েছে। যার ব্যাকটেরিয়া কোনও ওষুধ দিয়েই মারা যায় না। মাল্টি ড্র্যাগ রেজিস্ট্রেন্ট। মহাকাশ স্টেশনের বদ্ধ পরিবেশে তারা বেড়ে উঠেছে। ভয়ঙ্কর এই ব্যাকটেরিয়ার খোঁজ পেয়ে তারা আতঙ্কিত। এই ব্যাকটেরিয়া সরাসরি আক্রমণ করে আমাদের শ্বাসতন্ত্রে। আইএসএস-এ সুপারবাগের উপস্থিতি সম্পর্কে, নাসা সম্প্রতি জানিয়েছিল যে এটি এন্টারোব্যাক্টর বুগানডেনসিস নামে পরিচিত এমনই একটি ব্যাকটেরিয়া, যা অনেক ওষুধ দ্বারাই প্রভাবিত হয় না। এই পরিস্থিতি দেখে বলা যেতে পারে যে আইএসএস-এ উপস্থিত এই সুপারবাগগুলি এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।

আরও পড়ুন-জলবন্টন নিয়ে আলোচনার দাবি, ইন্দো-ভুটান যৌথ নদী কমিশন তৈরির প্রস্তাব

স্পেস বাগে আক্রান্ত
এই স্পেস বাগ কোনও স্থলজ প্রাণী নয়। এটি পৃথিবীর একটি সাধারণ বাগ যা পৃথিবী থেকে মহাকাশে এসেছে, মহাকাশচারীদের হাত ধরেই। এবং তারপরে এগুলো সেখানে এসে রূপান্তরিত হয়েছিল। নাসা বলেছে যে এটি পৃথিবীতে পাওয়া ব্যাকটেরিয়া থেকে সম্পূর্ণ আলাদা রূপ ধারণ করেছে এখন।
উত্তরণের পথে
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি মাদ্রাজ এবং নাসা জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির গবেষকরা এই ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে একটি গবেষণা করেছেন। স্টেশনের বিভিন্ন স্থানে এই সুপারবাগের ১৩টি স্ট্রেন পাওয়া গিয়েছে। বাগ যদিও সাধারণ, সর্বত্রই এর চলাচল। কিন্তু আইএসএস-এ তাদের উপস্থিতি আরও বেশি উদ্বেগজনক কারণ আইএসএসের একটি নির্দিষ্ট বায়ুমণ্ডল রয়েছে এবং ওষুধের সুবিধারও সীমিত পরিষেবা রয়েছে। নাসার মতে, ব্যাকটেরিয়ার স্ট্রেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিবর্তিত হয়েছে এবং অন্যান্য অণুজীবের সঙ্গে বসবাস করছে। সম্প্রতি, ক্যালিফোর্নিয়ার নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির প্রেসিডেন্ট ডক্টর কস্তুরী ভেঙ্কটেশ্বর এই সুপারবাগ সম্পর্কে অনেক তথ্য দিয়েছেন। বিজ্ঞানীদের মতে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কারও জন্যই জীবন সহজ নয়। এখানে উপস্থিত ব্যক্তিদের অনেক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, যার কারণে তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পৃথিবীর তুলনায় কম হয়ে যায়।
যদিও এই বিষয়টি মাথায় রেখে আরও একটি নতুন গবেষণা করেছে নাসা। নাসার বিজ্ঞানী ডক্টর কস্তুরী ভেঙ্কটেশ্বরণ বলেছেন, আমাদের গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে কীভাবে কিছু অণুজীব আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মানব প্যাথোজেন, ই বুগানডেনসিসকে মানিয়ে নিতে এবং বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। এই গবেষণা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা চরম পরিবেশে মাইক্রোবিয়ালের উপস্থিতি, আচরণ এবং এগুলোর বেড়ে ওঠার বিষয়গুলো ভাল করে বুঝে, এই ভয়ানক রোগজীবাণু নির্মূল করার জন্য আমাদের সাহায্য করবে। এইভাবে মহাকাশচারীদেরও স্বাস্থ্য রক্ষা করা সম্ভব।

আরও পড়ুন-তাঁতি ও হস্তশিল্পীদের উন্নয়ন-কর্মসংস্থানে বাস্তবায়নের পথে মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্প, নদিয়ায় হবে প্রথম ‘বাংলার শাড়ি’ হাব

মহাকাশের মহাদর্শন
মহাকাশ থেকে ঘরে ফেরা নিয়ে সবচেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী সুনীতা নিজেই। সুনীতা জানিয়েছেন— সবদিক খতিয়ে দেখেছি আমরা। আমি আশাবাদী যে মহাকাশযানটি আমাদের নিশ্চিত ভাবে ঘরে ফেরাবে। কোনও সমস্যা নেই। পৃথিবী অভিমুখে রওনা দেওয়ার আগে সব বিষয়ে নিশ্চিন্ত হতে চাইছেন তাঁরা। প্রতিকূল পরিস্থিতি দেখা দিলে, কী করণীয়, সব বিশদে বুঝে নিচ্ছেন। নিরাপদে ঘরে ফেরা নিয়ে আশাবাদী তাঁরা। সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরাও নাসার মাধ্যমে সুনীতা এবং ব্যারির সাথে কথা বলেন। বোয়িং স্টারলাইনার-এর অবস্থান নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে ব্যারি বলেন— উৎক্ষেপণ অসম্ভব ভাল হয়েছিল। প্রত্যাশার চেয়েও ভাল পারফর্ম করে মহাকাশযানটি। এটি পরীক্ষামূলক উড়ান ছিল, যাতে ভবিষ্যৎ মহাকাশ অভিযানের পথ সহজ হয়। ভুলভ্রান্তি যাতে ঠিক করে নেওয়া যায়, সেই প্রচেষ্টাই ছিল। সুনীতা তো মহাকাশে বেশ খোশমেজাজে আছেন— এখানে ভালই সময় কাটছে আমাদের। আগেও এসেছি আমরা। তাই মনে হচ্ছে বাড়িতেই আছি। মহাকাশে ভেসে বেড়াতে ভাল লাগছে। আমার অন্তত কোনও অভিযোগ নেই। লাইভে কথা বলার সময় নিজের একটু অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেন সুনীতা। একটি ঘূর্ণিঝড়কে পক্ষপথ থেকে হ্যারিকেনে রূপান্তরিত হতে দেখার কথা— হারিকেনটি বেশ চিত্তাকর্ষক। আমি আসলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবের প্রায় দেড় সপ্তাহ আগে আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে একটি ঝড়ের ছবি তুলেছিলাম এবং আমি প্রায় ৯৮ শতাংশ নিশ্চিত যে এটিই বিরল ছিল। সুনীতার সহযোগী বুচ উইলমারকেও লাইভে খুব প্রাণবন্ত দেখিয়েছে। আত্মপ্রত্যয়ী বুচ বলেন— এই উৎক্ষেপণটি দর্শনীয় ছিল এবং মহাকাশযানটি অবিশ্বাস্যভাবে ভাল পারফর্ম করেছে। এটি একটি পরীক্ষামূলক ফ্লাইট ছিল। আমরা আমাদের দলের সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছি। 3D-প্রিন্টেড মুন মাইক্রোস্কোপ এবং জিন সিকোয়েন্সিং ব্যবহার করে বিজ্ঞানের পরীক্ষা-নিরীক্ষা আমাদের অভিযানে শামিল করা হয়েছে।

আরও পড়ুন-গাছের পরিচর্যা করলেই মিলবে নগদ ২৫ হাজার

ঘরে ফেরার গান
সুনীতারা মনে করাচ্ছেন কল্পনা চাওলার ওই স্পেস ওডিসির কথা। ১৯৯৭ সালে কল্পনার মহাকাশ ওডিসি দেশের হাজার মেয়ের স্বপ্নকে উসকে দিয়েছিল। ৭ জন সঙ্গী নিয়ে ২০০৩ সালে চাওলার মহাকাশ যান কলম্বিয়া বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার সময় ভেঙে পড়ে। গোটা দেশ শোকে ডুবে যায়। এই দুর্ঘটনার পর নাসা তার শাটল ফ্লাইট ২ বছরের জন্য বন্ধ রেখেছিল। ২০০৫ সাল থেকে পুনরায় আবার মহাকাশ ফ্লাইটগুলি চালু করে। পৃথিবীর মাত্র ৬০ কিলোমিটার উপরে এসেও ছোট্ট একটু ভুলের জন্যে ঘরে ফিরতে পারেনি কল্পনা। এবার কিন্তু লড়াইটা আরও কঠিন। ঘরে ফিরতেই হবে সুনীতাদের।
১৪০ কোটির স্বপ্ন
পৃথিবীতে ফেরার জন্যে বোয়িং স্টারলাইনারের মহাকাশযানের থ্রাস্টার হিসেবে ২৮টি ছোট ছোট রকেট ব্যবহার করার কথা ছিল। কিন্তু উড়ানের ২৫ ঘণ্টার মধ্যেই ওই রকেটগুলো থেকে বারবার হিলিয়াম বেরিয়ে আসতে শুরু করে। এখনও পর্যন্ত ৫ বার এমন ঘটনা ঘটেছে। পৃথিবীতে নিরাপদে ফিরতে ১৪টি থ্রাস্টার ঠিক থাকা প্রয়োজন। নাসা অবশ্য আত্মবিশ্বাসী। ত্রুটিগুলো খতিয়ে দেখছে। মেরামতির আপ্রাণ চেষ্টাও করছে। ফলে আরও কিছুদিন মহাকাশে ঘুরে ফিরে সময় কাটাতে হবে সুনীতা আর ব্যারিকে। নাসা ঘরে ফেরার দিন এখনও জানাতে পারেনি। ১৪০ কোটি ভারতবাসী স্বপ্ন দেখছেন, কালই হয়তো সুনীতা আর ব্যারি ফিরে আসবে পৃথিবীতে। সুনীতাদের এই সাফল্য মহাকাশ বিজ্ঞানের মানচিত্রে নতুন দিক নির্দেশ করবে এই প্রত্যাশা সকলের।

Latest article