মৌসুমি দাস পাত্র, নদিয়া: একসময় কালীপুজো হত ঘটে, যন্ত্রে, শিলাখণ্ডে। এ-বঙ্গের ঘরে ঘরে কৃষ্ণানন্দের হাত ধরেই প্রথম কালীমূর্তির পুজো শুরু হয়। কার্তিক মাসের দীপান্বিতা অমাবস্যায় দক্ষিণাকালীর পুজোর প্রবর্তক ছিলেন কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ। শাক্ত উপাসক হয়েও আগমবাগীশ বৈষ্ণবমতে কালীমূর্তির পুজো করেছিলেন। সেই মতো মদ ছাড়াই পুজো হয়। কৃষ্ণানন্দ তন্ত্রসাধনার আগম পদ্ধতিতে সিদ্ধিলাভ করেন। একইসঙ্গে আগমবাগীশ উপাধি পেয়ে কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ নামে খ্যাতিলাভ করেন।
আরও পড়ুন-১০০ দিনের কাজের টাকার দাবিতে, নলহাটিতে তৃণমূলের প্রতিবাদসভা
প্রায় ৩৭৩ বছরের প্রাচীন এই কালীপুজো ঘিরে উন্মাদনায় মেতেন ওঠেন নবদ্বীপের মানুষ। পঞ্চমুণ্ডির আসনে প্রতিষ্ঠিত কালী। তবে আজও দীপান্বিতা কালীপুজোয় মূর্তি তৈরি করে পুজো হয়। কৃষ্ণানন্দ বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-থাকা নানা গ্রন্থের সার বস্তু নিয়ে লিখেছিলেন ‘বৃহৎতন্ত্রসার।’ তাতেই প্রথম লিখিত হয় দক্ষিণাকালীর পুজোপদ্ধতি। চৈতন্যভূম নবদ্বীপ বৈষ্ণবতীর্থ হলেও শক্তিসাধনার ইতিহাসও বেশ প্রাচীন। চৈতন্য-পরবর্তী যুগে বৈষ্ণব ধর্ম নড়বড়ে হয়ে যায়। শুরু হয় অশুভ শক্তির চর্চা। এমনই সময়ে কৃষ্ণানন্দ তন্ত্রশাস্ত্র সংস্কারে হাত দেন। উদ্দেশ্য ছিল অশুভ শক্তির চর্চা ঠেকানো এবং সাধারণ মানুষের কাছে সহজ করে শক্তি আরাধনার দিকটি তুলে ধরা।
আরও পড়ুন-বিদায় ঘণ্টা শুনতে পাচ্ছে বিজেপি
নবদ্বীপে বংশপরম্পরায় এই পুজো করে আসছে সান্যাল পরিবার। পঞ্চমীতে তৈরি হয় পাঁচ পোয়া খড়ের মূর্তি। সেই মূর্তি মন্দিরে একাদশী পর্যন্ত পুজো হয়। একাদশীতে বড় প্রতিমার দক্ষিণ পা থেকে খড়বাঁধা শুরু হয়, তখন ছোট খড়ের মূর্তিটি বড় প্রতিমার বুকে প্রতিস্থাপিত হয়। প্রতিমার মাথা বসে চতুর্থীতে। চোখ আঁকা হয় অমাবস্যায়। অড়হর ডালের খিচুড়ি, কচুরশাক, এঁচোড়, মোচা আর চালতার টক ভোগ হিসাবে দেওয়া হয়। পরের দিন বেয়ারাদের কাঁধে চেপে বিসর্জনে যান দেবী।