প্রতিবেদন : রাজ্যপাল হয়ে আসার পর একের পর এক বিষয়ে এক্তিয়ার-বহির্ভূতভাবে হস্তক্ষেপ ও গাজোয়ারি করতে গিয়ে কার্যত অরাজকতা তৈরি করছেন তিনি। বারবার পর্যুদস্ত হওয়ার পরেও তাঁর আচার-আচরণ-কার্যকলাপে কোনও বদল আসেনি। শুক্রবার ৯ পাতার এক রিপোর্ট কার্ড পেশ করে আচার্যের ক্ষমতা বোঝাল রাজ্য। এদিন রাজ্যপালের ভূমিকা ও অযাচিত কার্যকলাপ নিয়ে তাঁকে ধুয়ে দিয়েছেন ব্রাত্য বসুও। তাঁর কথায়, পড়ুয়াদের কথা না ভেবেই তাদের ভবিষ্যৎকে কার্যত অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন রাজ্যপাল। ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। রাজ্যের এই ৯ পাতা রিপোর্ট কার্ড প্রকাশের পরেই প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি, অশান্তি নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যপাল। কিন্তু একজন রাজ্যপাল হিসেবে তিনি যে কাজ করতে পারেন আচার্য হিসেবে কি তিনি সেই কাজ আদৌ করতে পারেন? প্রশ্ন শিক্ষামন্ত্রীর।
আরও পড়ুন-মাদ্রাসা আইন বাতিল স্থগিত, সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা যোগীরাজ্যের
রাজ্যপালকে কটাক্ষ করে ব্র্যাত্য বলেন— আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শেখাও। যে-কথা ওঁর নিজের জন্য প্রযোজ্য, যে-কথা ওঁর আয়নার সামনে বলা উচিত সেখানে যদি উনি ভাবেন, আয়নার মধ্যে আমি দাঁড়িয়ে আছি বা আমার প্রতিবিম্ব আছে তা হলে সেটা তাঁর ভুল দেখা। বুধবার নবান্নে রিপোর্ট কার্ড পাঠিয়েছিল রাজভবন। এর উত্তরে ৯ পাতার চিঠি দিয়ে প্রতি ছত্রে রাজ্যপালের এক্তিয়ার স্মরণ করাল রাজ্য। চিঠিতে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাজ্যপাল ক্রমাগত সংবিধানিক সীমা লঙ্ঘন করছেন। বিধিবহির্ভূতভাবে উচ্চশিক্ষাকে ধ্বংস করছেন। পড়ুয়াদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। পড়ুয়াদের কথা না মেনে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন রাজ্যপাল, এটা ক্ষমতার অপব্যবহার। একইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আইন উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, আচার্য তাঁর ক্ষমতা পালনে ব্যর্থ। অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ বা স্থায়ী উপাচার্য— প্রতিটি ক্ষেত্রেই রাজ্যের আলোচনা বাধ্যতামূলক। রাজ্যপাল তা মানছেন না। সমান্তরাল সরকার চালাচ্ছেন তিনি।
এদিকে, এই চিঠি পাওয়ার পরেই ফের বালখিল্যের মতো কাজ করেছেন বোস। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরকে রাজনৈতিক ও ভোট প্রচারের উদ্দেশ্যে ব্যবহার নিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে ট্যুইট করে কার্যত তাঁর ক্ষমতা ফের স্মরণ করিয়েছেন ব্রাত্য বসু। শিক্ষামন্ত্রী লেখেন, এটি আকর্ষণীয় যে চ্যান্সেলর তথা রাজ্যপাল নির্বাচনী প্রচার, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পশ্চিমবঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দুর্নীতি এবং অপব্যবহার নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এখন আমরা সবাই জানি যে সরকার এক্স হ্যান্ডেল এবং ফেসবুকের মতো ভার্চুয়াল সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পরিচালিত হয় না। এই তদন্তের আদেশ সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যমের কাছে পৌঁছতে হবে। এখন প্রশ্ন হল, একজন আচার্য কি সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন যা রাজ্যপাল পারেন? এই নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
ব্রাত্য বলেন, কাল বলছেন সুপারিশ করছি সরিয়ে দেওয়ার জন্য আজ বলছেন করছি না। কোথায় সুপারিশ করবেন? মহাশূন্যে? জানি না। মুখ্যমন্ত্রীর নামটা হয়ত করেনি। সুপারিশ করলে কার কাছে করেছেন না করলে কার কাছে করছেন না। মালদার আসনগুলো কি বিজেপি হারতে চলেছে? তাই কি এই তাড়াহুড়ো। জোড়া ফুল ফুটবে উত্তর-দক্ষিণ কেন্দ্রে তাই এই বিষয়? আশা করব গতকালকের মতো ট্যুইট উইথড্র হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে যদি ধ্বংস করা হয়। কেউ যদি তলোয়ার দিয়ে একটা একটা করে গাছ কেটে নেয় আমার হাতে তো তলোয়ার নেই আমি দুটো কথা বলেছি। তাতে আঘাত পেয়ে থাকলে দুঃখিত। নিরস্ত্রকে অস্ত্র নিয়ে মারতে আসছেন। রাজনৈতিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ব্যবহার করছেন। কাগজ হাতে এলে বলতে পারব। সরকারি স্তরে একটা কাগজ দেখাক। ব্রাত্য বলেন, আমি যদি ট্যুইট করি আমি রাষ্ট্রপতির কাছে রাজ্যপালের অপসারণ চেয়ে চিঠি লিখেছি আমাকে চিঠির কপি দেখাতে হবে তো। গোটা ব্যাপারে একটা রহস্যের খাসমহল তৈরি করা হচ্ছে। যদি কেন্দ্রীয় স্তরে তদন্ত হয়, মিনি সন্দেশখালি রাজ্যের কোন বাড়ি প্রমাণ হবে। এ জিনিস অধ্যাপকদের পক্ষে ছাত্রদের পক্ষে লজ্জার। আচার্যের সত্তা না রাজ্যপালের সত্তা মিলে যাচ্ছে। সাফ কথা শিক্ষামন্ত্রীর।