প্রথম দিনেই কয়েক লক্ষ কোটির লগ্নি নিশ্চিত করলেন শিল্পপতিরা

সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মুখ্যমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। ছিলেন সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বরা।

Must read

মণীশ কীর্তনিয়া: মুকেশ আম্বানি বলছেন, আসুন বাংলায় বিনিয়োগ করুন। দিদি (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) কার্পেট বিছিয়ে আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। বাংলায় একজন বিনিয়োগকারী হিসেবে আমি বলতে পারি বাণিজ্যের সেরা গন্তব্য এখন বাংলা। সজ্জন জিন্দাল বলছেন দেশের অনেক জায়গায় গিয়েছি, কিন্তু কোথাও এমন ব্যবসার সুযোগ-সুবিধা পাইনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে এই বদলে যাওয়া বাংলায় আমরা বিনিয়োগ করেছি, আপনারাও করুন। সঞ্জীব গোয়েঙ্কা বলছেন, এখানে জন্মেছি, বড় হয়েছি, যদি বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে যাই ক্ষমা করবেন। বিশ্বাস করুন, গত ১৪ বছর ধরে যে মুখ্যমন্ত্রীকে দেখছি, সেই মুখ্যমন্ত্রী যে কোনও সমস্যার সমাধান খুব দ্রুত করেন। হর্ষ নেওটিয়া বলছেন, এখানে ব্যবসার জন্য যে সহযোগিতা পাওয়া যায়, তা অভূতপূর্ব। মুখ্যমন্ত্রী এবং আমলারা সবসময় সবক্ষেত্রেই সহযোগিতা করে থাকেন। শুরুটা হয়েছিল আইটিসি সঞ্জীব পুরিকে দিয়ে। এরপর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় থেকে শুরু করে শিল্পপতিরা সকলেই একবাক্যে মানলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বদলে দিয়েছেন বাংলাকে। নিশ্চিন্তে নির্ভয়ে এই বাংলায় এখন লগ্নি করা যায়। নিজের রাজ্যের কথা তুলে ধরে শেষে বাংলার সঙ্গে একসঙ্গে তাঁদের কাঁধ মিলিয়ে চলার কথা বললেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনও। বুধবার দুপুরের নিউ টাউনে উপচে-পড়া বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারের প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত সকলে চাক্ষুষ করলেন কাকে বলে মমতা-ম্যাজিক! সেইসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া-টেলিভিশনের পর্দায় সেই ম্যাজিক দেখল দেশ-সহ গোটা বিশ্ব। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পৌঁছে যাচ্ছে একটাই বার্তা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে এক নতুন বাংলা। যে বাংলার হয়ে একসুরে বিনিয়োগের কথা বলেন সজ্জন জিন্দালেরা। কথা বলতে গিয়ে কার্যত তাঁদেরকেই মনে হল এই বাংলার বাণিজ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। অষ্টম বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের প্রথম দিনেই ঘোষিত হল কয়েক লক্ষ কোটি টাকার লগ্নি। মুকেশ আম্বানি থেকে সাতজন একের পর এক লগ্নির ঘোষণা করে গেলেন। এসবের ফাঁকেই মুকেশ আম্বানির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আধঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়।

আরও পড়ুন-মহারাষ্ট্রে মহাপ্রসাদে বিষক্রিয়ার ফলে অসুস্থ ২৫৫

এদিন নিজের বক্তব্য রাখতে গিয়ে আপ্লুত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সকলকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন, বাংলাকে ভুলে যাবেন না, বাংলাও আপনাদের ভুলবে না। সেই সঙ্গে জানিয়ে দিলেন, বাংলায় শিল্পনীতি সংক্রান্ত বিষয় গড়ে তুলতে গিয়ে কোন বিষয়গুলিকে তাঁর সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ৫ হাজার একর জমি এই মুহূর্তে রাজ্যে রয়েছে শিল্পস্থাপনের জন্য। বেসরকারি সংস্থা যাতে শিল্পতালুক তৈরি করতে পারে আমরা তার জন্য নীতি তৈরি করেছি। আমাদের রাজ্যে এখন ২০০টি শিল্পতালুক রয়েছে। আগেই ওয়ান উইন্ডো সিস্টেম তৈরি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শিল্পের সহায়তায় বুধবার ঘোষণা করলেন, নিউ স্টেট লেভেল ইনভেস্টমেন্ট সিনার্জি কমিটি। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যাতে কোথাও কোনও সমস্যা বা দেরি না হয়, সেই বিষয়ে খেয়াল রাখবে এই কমিটি। এর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সদর্প ঘোষণা, দেউচা-পাঁচামিতে আগামী কাল থেকেই কয়লা উত্তোলন শুরু হবে। তিনি বলেন, এখানে যা কয়লা রয়েছে তাতে আগামী ১০০ বছর বিদ্যুতের অভাব হবে না। সেইসঙ্গে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কোনও শিল্প সংস্থা এখানে বিনিয়োগ করতে চাইলে মুখ্যসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। জানিয়ে দিলেন, ২৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালিতে। এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে ৭৫ হাজার। ২৮০০ আইটি কোম্পানি এই মুহূর্তে সেখানে কাজ করছে। এছাড়াও সিমেন্ট থেকে পর্যটন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য— সমস্ত ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ রয়েছে বাংলায়।

আরও পড়ুন-মুছে গেল ইতিহাস, ফোর্ট উইলিয়ামের নতুন নামকরণ কেন্দ্রের

সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মুখ্যমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। ছিলেন সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বরা। দেশ-বিদেশের শিল্পপতি-অভ্যাগতরা ছাড়াও ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ও আমলারা। প্রথম পর্বের অনুষ্ঠান-শেষে অমিত মিত্রের পরিচালনায় শুরু হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল সেশন। যেখানে বিনিয়োগ প্রস্তাবের আদান-প্রদান চলছে দেশ-বিদেশের অতিথিদের সঙ্গে।

Latest article