সাত মাসের শিশুকে যৌন নির্যাতনে ফাঁসি, তদন্ত বিচার-সহ সাজা ঘোষণা শেষ হল মাত্র ৭৮ দিনে

গত ৩০ নভেম্বর বড়তলার ফুটপাথ থেকে শিশু নিখোঁজের অভিযোগ ওঠে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শিশুটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

Must read

প্রতিবেদন : ৭৮ দিনের মধ্যে ন্যায়বিচার! ইতিহাস গড়ল কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police)! ঐতিহাসিক দিন রাজ্যের বিচারব্যবস্থার জন্যও! মঙ্গলবার বড়তলার ফুটপাথবাসী সাতমাসের শিশুকে যৌন নির্যাতনে মূল কালপ্রিটকে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড শোনাল ব্যাঙ্কশাল আদালত। মূলত পকসো আইনের ৬ নং ধারা অনুযায়ী ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়েছে। এক দুধের শিশুর উপর যেভাবে অকথ্য যৌন নির্যাতন চালানো হয়েছে, সেই পাশবিকতার উপর ভিত্তি করে এই ঘটনাকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন নগর দায়রা আদালতের বিচারক। একইসঙ্গে শিশুর পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে আদালতের তরফে।

আরও পড়ুন-দিনের কবিতা

সোমবারই বড়তলা-কাণ্ডের মূল দোষী রাজীব ঘোষ ওরফে গোবরাকে শিশু নির্যাতনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করেছিল বিশেষ পকসো আদালত। মঙ্গলবার সমস্ত সাক্ষ্য ও তথ্যপ্রমাণের উপর ভিত্তি করে ফাঁসির সাজা শোনালেন বিচারক। আদালতের পর্যবেক্ষণ, যেভাবে সাতমাসের এক দুধের শিশুর উপর নির্মম অত্যাচার হয়েছে, সেখানে দোষীর বেঁচে থাকার কোনও অধিকার নেই! চূড়ান্ত রায়দানের পর সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানান, এটা একটা ঐতিহাসিক রায় বাংলার বিচারব্যবস্থায়। কারণ, এই ধরনের মামলায় যেখানে নির্যাতিতা এখনও বেঁচে আছে, সেখানে অতীতে ফাঁসির সাজার কোনও নজির নেই।
আইনজীবী আরও বলেন, যে যে ধারায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছিল তার মধ্যে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৩৭(২) নং ধারায় ৬ বছরের কারাবাস ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা, ১৪০(১) নং ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানা, ১৪০(৪) নং ধারায় ৯ বছরের কারাবাস ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা, ১১৮ নং ধারায় ২ বছরের কারাবাস ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা হয়েছে। তবে বিএনএস-এর ৬৫ (২) নং ধারা এবং পকসো আইনের ৬ নং ধারা, দুটিতেই ফাঁসির সাজা হয়েছে। তবে সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে পকসো আইনের মৃত্যুদণ্ডকেই ধরা হয়েছে। তবে যেহেতু নগর দায়রা আদালত ফাঁসির সাজা দিতে পারে না, তাই এই রায় নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের অনুমতি প্রয়োজন।
রায়দানের পর কলকাতা পুলিশের ডিসি (নর্থ) দীপক সরকার তদন্তপ্রক্রিয়া নিয়ে জানিয়েছেন, ঘটনার অভিযোগ পেয়েই কলকাতা পুলিশ সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দু’তিনদিনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। বিভিন্ন ফুটেজে অভিযুক্তের ওয়াকিং প্যাটার্ন মিলিয়ে দেখে তাকে শনাক্ত করা হয়। তারপর লোকেশন ট্র্যাক করে ঝাড়গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। নির্যাতিতার দেহে পাওয়া ডিএনএ-এর সঙ্গে অভিযুক্তের জামায় পাওয়া রক্তের ডিএনএ মিলে যায়। গুগল আর্থ ম্যাপিং প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে আদলতে দেখানো হয় ঠিক কীভাবে ক্রাইম ঘটেছিল। ড্রোন ফটোগ্রাফিরও ব্যবহার হয়। সব দেখেই বিচারক এটাকে বিরল থেকে বিরলতম ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কলকাতা পুলিশের তরফে একটাই বক্তব্য, আমরাও পারি!

আরও পড়ুন-আজ শুরু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, আত্মবিশ্বাসী রিজওয়ান, ছিটকে গেলেন ফার্গুসন

গত ৩০ নভেম্বর বড়তলার ফুটপাথ থেকে শিশু নিখোঁজের অভিযোগ ওঠে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শিশুটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ঘটনার ৫ দিনের মধ্যে ৪ ডিসেম্বর ঝাড়গ্রাম থেকে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘটনার ২৬ দিনের মাথায় আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। তারপর ৭৮ দিনের মাথায় এই ঐতিহাসিক সাজা! তবে নির্যাতিতা শিশু এখনও আরজি কর হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। সংশয়ে একরত্তির জীবনমৃত্যু!

Latest article