নাজির হোসেন লস্কর, মগরাহাট: স্বপ্ন যেন ধীরে ধীরে সত্যি হতে চলেছে সুফিয়ানের৷ আর তাঁর স্বপ্নকে শিখরে পৌঁছতে দরাজহস্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মা–মাটি–মানুষের সরকার দিয়েছে যথাযোগ্য সম্মান, সরকারি চাকরি৷ এই উচ্চ সম্মান ও চাকরির জন্য মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন সুফিয়ান৷ আজ, শনিবার এএসআই পদে যোগ দেবেন৷
ডিসেম্বরের শেষ দিনে নিজামের শহরে কেরলকে হারিয়ে বাংলা সন্তোষ ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ভারতসেরা এই দলের কনিষ্ঠ ফুটবলার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মগরাহাটের কুলদিয়ার আবু সুফিয়ান সেখ৷ বছর একুশের সুফিয়ানের স্বপ্ন দেশের জার্সি গায়ে প্রতিনিধিত্ব করার৷ আর সেই স্বপ্ন যেন ধীরে ধীরে শিখরে নিয়ে যাচ্ছে তাঁদের সাফল্যে৷ পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার কথা ভেবে চারুচন্দ্র কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সুফিয়ান একসময় ফুটবল খেলা ছাড়তে বসেছিলেন৷ সুফিয়ানের কথায়, বাবা–মা ও সাত ভাইবোনকে নিয়ে বড় সংসার৷ বাবা চাষবাস করে কোনওরকমে সংসার চালান৷ একমাত্র বড় দাদা আবু সাইদ সেখ তাঁকে অনুপ্রেরণা জোগাতেন খেলাধুলার প্রতি৷ তিনি বাড়ির চতুর্থ সন্তান৷ খেলাধুলায় যে এত সম্মান পাওয়া যায় তা জানতেন না বাবা আবু তৈয়েব সেখ, মা মুর্শিদা বিবি৷ ভারতসেরা ছেলেকে আনতে দমদম বিমানবন্দরে অভ্যর্থনার আয়োজন দেখে আনন্দাশ্রু ধরে রাখতে পারেননি মা মুর্শিদা৷
আরও পড়ুন-কংগ্রেস-বিজেপি আঁতাতের অভিযোগ কেজরির
মগরাহাটের মোবাস্সের ফকিরের হাত ধরে ফুটবলের প্রতি ভালবাসা৷ খেলেছেন মোহনবাগান অনূর্ধ্ব–১৯ দলে৷ খুব ভাল পারফর্ম করতে পারেননি৷ তখন কোভিড কাল৷ বন্ধ খেলাধুলা৷ এত বড় সংসারের ভার সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন বাবা–দাদারা৷ পরিবারের অচলাবস্থার কথা ভেবে সেলাইয়ের কাজ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন কুলদিয়া মোহনপুর হাইমাদ্রাসা থেকে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ সুফিয়ান৷ সেইসময়ও বড় দাদা আবু সাইদ ভাইকে খেলা চালিয়ে যেতে বলেন৷ ধীরে ধীরে নিজেকে তৈরি করে সুযোগ পান সুরুচি সংঘে৷ কয়েক মাস আগে কলকাতা প্রিমিয়ার ডিভিশন খেলায় সুরুচি সংঘের হয়ে মাঝমাঠ থেকে কয়েকজনকে কাটিয়ে দূরপাল্লার শটে দুর্দান্ত গোল করেছিলেন এই সুফিয়ান৷ জহুরি যে জহর চেনে তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ সন্তোষজয়ী কোচ সঞ্জয় সেন সেই রত্নকে বাংলার দলে জায়গা করে দিলেন৷ তারপর তো ইতিহাস৷ সন্তোষজয়ী কনিষ্ঠ সদস্য চাকরির নিয়োগপত্র পেয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান৷ তিনি বলেন, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী যে কথা দিয়ে কথা রাখেন এটা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের মতো একেবারে গ্রামের ছেলেদের আর্থিক দুরবস্থার কথাও বোঝেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি যেভাবে আমাদের সম্মান দিলেন, চাকরি দিলেন, তাঁকে কীভাবে অভিনন্দন জানাব তার ভাষা নেই৷ তাঁর আশীর্বাদে এখন স্বপ্ন সফল হতে চলেছে৷ সুফিয়ানের কথায়, পিছুটান আর নেই৷ এখন খেলায় ফোকাস৷ সংকল্প ভারতের জার্সি গায়ে প্রতিনিধিত্ব করা৷ খেলার ইচ্ছা দেশের সর্বোচ্চ লিগ আইএসএল–এও৷