সশক্তীকরণের চাবি সমবায়

সদ্য শেষ হল সমবায় সপ্তাহ। কিন্তু প্রকৃত অর্থে বিকশিত ভারত গড়তে হলে সমবায়ের গুরুত্ব ও তাৎপর্য এখনও অজ্ঞাত এবং সেই কারণে অবহেলিত বহু মানুষের কাছে। সে-জন্যই এ-বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছেন ড. মইনুল হাসান

Must read

প্রতিবারের মতো এবারও নিখিল ভারত সমবায় উদযাপিত হল ১৪-২০ নভেম্বর। এবার সমবায় সপ্তাহ উদযাপনে প্রধান বিষয় ছিল ‘বিকশিত ভারত’ গঠনে সমবায়ের ভূমিকা। কেন্দ্রীয়ভাবে এনসিইউআই মূল থিমটি নির্দিষ্ট করে। তা ছাড়া প্রতিদিনের জন্য আলাদা আলাদা বিষয় থাকে। এবার যেমন ছিল সহযোগিতা, স্বনির্ভরতা, সমবায়ে প্রযুক্তি প্রয়োগ, উদভাবনা সংক্রান্ত বিষয়, তেমনই তরুণ ও মহিলাদের সমবায়ের (cooperative) নেতৃত্বে নিয়ে আসার মতো বিষয়ও আলোচনার বিষয় ছিল। আমাদের রাজ্যে হাজার হাজার সমবায় সমিতিতে এই সমবায় উৎসব পালিত হয়েছে।
সমবায়ের (cooperative) মূল উদ্দেশ্যের মধ্যে অন্যতম মানুষের মধ্যে স্বনির্ভরতা বাড়ানো, কৃষি-সহ সমস্ত ক্ষেত্রে সমতার এই কাজে সব সমবায় যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে। আমাদের রাজ্যে সমবায়ের সঙ্গে যুক্ত আছে বেশিরভাগ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীরা। যুক্ত আছে লক্ষ লক্ষ প্রান্তিক মানুষ। যার ফলে সমবায় হয়ে উঠেছে দশের লাঠি একের বোঝা।
সমবায় বললে সবাই মনে করেন কেবল বোধ হয় কৃষি সংক্রান্ত বিষয়। মোটেই তা নয়। আমাদের কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষি আমাদের জনজীবনে বড় ক্ষেত্র। সুতরাং কৃষিতে সমবায় গঠন একটা বড় ক্ষেত্র আর আজও কর্মসংস্থানে কৃষির প্রাথমিকতা অস্বীকার করতে পারেন না। কিন্তু তারপরেই সমবায়ের স্থান। যেখানে অত্যধিক কর্মসংস্থান হতে পারে। সুতরাং সমবায়ের গুরুত্ব সামাজিক জীবনে কতখানি তা বুঝতে অসুবিধা নেই। তবে সমবায় এখন কৃষির গন্ডি পেরিয়ে জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়েছে। কর্মচারী, শিক্ষক-সহ সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে সমবায় গঠন করে সাফল্যের মুখ দেখছে। আমাদের কফি হাউস চলছে, জুটমিল চলছে, হাসপাতাল চলছে সমবায় গঠন করে। সমবায় ক্ষেত্রে আমাদের এটা অন্য সাফল্য হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে। রাজ্যের সরকার এবং মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী সমবায় গঠন ও তার উন্নত কর্মসূচিতে উৎসাহ দেন। এ-রাজ্যের সমবায়ীরা এ-বিষয়ে খুব উৎসাহিত।
এখন সমবায়ের (cooperative) মধ্যে সমবায় বলে একটি বিষয় আলোচনার বিষয় হয়ে আসছে। আমাদের রাজ্য এ-ব্যাপারে সামনের দিকে আছে। রাজ্যে লক্ষ লক্ষ স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। আমাদের বাড়ির মা-বোনেরা তার সদস্য। গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। গোষ্ঠীগুলিকে রাজ্য সরকার সাহায্য করছেন। তাদের সুদের একটা বড় অংশ রাজ্য সরকার দিয়ে দিচ্ছেন। এই কাজের প্রধান ভিত্তি হচ্ছে ‘সশক্তীকরণ’। হাজার রকমের কাজকর্ম এই গোষ্ঠীগুলি করছে। কেবল মুড়ি ভাজা বা হাঁস পালন নয়, বা মশলা তৈরি নয়। এখন পাট, চামড়া, কাপড়, কাঁচ ইত্যাদি দিয়ে পণ্য তৈরি করেন মা-বোনেরা। শুধুমাত্র স্থানীয় বাজার নয়, জাতীয় বাজার এবং কেউ আন্তর্জাতিক বাজারেও তাঁদের পণ্য বিক্রি করছেন। আমাদের সরকার নিয়মিত সংগঠিত করছেন সরসমেলা, হস্তশিল্প মেলা। আমাদের স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মা-বোনেরা তাঁদের তৈরি পশরা নিয়ে যাচ্ছেন সেখানে। রাজ্য জুড়ে একটা কর্মযজ্ঞ চলছে। মা-বোনেরা উৎসাহিত হয়ে আরও উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দিচ্ছেন। হুগলির কিছু গোষ্ঠীর সদস্যরা তৈরি করছেন মাছের আঁশ থেকে কানের দুল! যা সত্যিই অভাবনীয়। সস্তায় এমন সুন্দর জিনিস সমবায়ই করতে পারে। এ-রাজ্যের ইতিবাচক, পরিবেশবান্ধব পরিবেশের জন্যই এটা হয়েছে। সমবায়ীদের কাছে এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়।

আরও পড়ুন- মহারাষ্ট্রে গুন্ডামি বিজেপির, ভাঙচুর বুথে যোগীরাজ্যের উপনির্বাচনে বন্দুক, উঁচিয়ে হুমকি পুলিশের, সাসপেন্ড ৭

সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ভারত নির্মাণে বা বিকশিত ভারত তৈরির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা কেউ একথা অস্বীকার করতে পারব না যে, ক্ষুধা দারিদ্র্য, বেকারির অবসান না ঘটিয়ে বিকশিত ভারত স্বপ্ন দেখা অবান্তর। প্রতি বছর ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি ধোঁয়া হয়ে গেছে।
ক্ষুধাতালিকায় ভারতের স্থান বিপজ্জনকভাবে নিচের দিকে। সেক্ষেত্রে যারা বিকাশের কথা বলছেন তাঁদের চিন্তার মধ্যে গড়বড় আছে। আমাদের রাজ্য বহু আর্থিক কেন্দ্রীয় বঞ্চনার মধ্যেও এগিয়ে এসেছেন মানুষের কাছে সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দেবার কাজে। সেই কারণে দেশের মধ্যে জনমুখী বহু প্রকল্প রূপায়ণে প্রথম হয়েছে। সমবায় সেক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে।
এ-বছরে সমবায় সপ্তাহ পালনে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুক্ত হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘ ২০২৫ সালকে আন্তর্জাতিক সমবায় বর্ষ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। মূল থিম হচ্ছে ‘সমবায় তৈরি করবে সুন্দর পৃথিবী’। সেই আন্তর্জাতিক সমবায় বর্ষ উদযাপনের উদ্বোধনী হবে আমাদের ভারতে-নয়াদিল্লির ভারতমণ্ডপম মঞ্চে। এমন ঘটনা এদেশের সমস্ত সমবায়ীর কাছে এবং সব ভারতবাসীর কাছে গর্বের বিষয়। ২৫ নভেম্বর এই অনুষ্ঠানে পৃথিবীর হাজার হাজার প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।
সারা বিশ্বব্যাপী অগ্রগতির সঙ্গে আমাদের দেশেও সব মানুষের কল্যাণে সমবায় যুক্ত আছে। বিগত এক দশকে আমাদের রাজ্যে সমবায় এক নতুন মাত্রা প্রাপ্ত হয়েছে। যা সব অংশের সাধারণ মানুষের সশক্তীকরণ সম্ভব হয়েছে। রাজ্যের সরকার এবং মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর উৎসাহ প্রদান সমবায়ীদের সঙ্গে আছে। এ-রাজ্যের অগ্রগতিতে সমবায়ের ভূমিকা প্রশ্নাতীত। জয়তু সমবায়।

Latest article