খুনির পরিচয় একই, ফের খুন করা হল গান্ধীজিকে

মোদি সরকার একদা অনেক বড় বড় বুলি শুনিয়েছে। কিন্তু দায়-দায়িত্ব পালনে পুরো ব্যর্থ। লিখছেন তানিয়া রায়

Must read

পশ্চিমবঙ্গে ভোটারদের খসড়া তালিকা। সেখান থেকে নাম কাটছে ভ্যানিশকুমাররা। অর্থাৎ, জ্ঞানেশকুমারের নির্বাচন কমিশন ও মনোজকুমার আগরওয়ালের সিইও দফতর। কমিশনের অফিস থেকে বিজেপির এজেন্ট ইচ্ছামতো নাম বাদ দিচ্ছে। এরপর কৃত্রিম মেধা (এআই) ব্যবহার করে ভোটার তালিকায় কারচুপি করা হতে পারে।
বিজেপির সঙ্গে কমিশনের আঁতাঁতের তত্ত্ব কমবেশি পরিষ্কার। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বিজেপির অফিস থেকে যা বলে দেওয়া হচ্ছে, তা-ই চেঞ্জ করা হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের অফিসে বিজেপি একটা এজেন্ট রেখে দিয়েছে। সে অনলাইনে যাঁর ইচ্ছে নাম বাতিল লিখছে। পুরো লিস্টটা করে দিচ্ছে বিজেপির পার্টির লোকেরা। এমন নির্লজ্জ কমিশন শুধুমাত্র বিজেপির কথায় অপরিকল্পিত ভাবে এই এসআইআর করা হচ্ছে। বিজেপি এবং কমিশনকে একই বন্ধনীতে। এমন আমরা জীবনে দেখিনি, দেখতে চাইও না।
এখন আবার এআই ব্যবহার করেছে বলে জানা গিয়েছে। ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের কাজ তাড়াহুড়োর মধ্যে করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন-বিএলএ-দের নিয়ে অভিষেক বৈঠক করবেন রাজ্য জুড়ে

প্রশ্ন হল, তোমরা চক্রান্ত করেও কিচ্ছু করতে পারবে কি? কমিশনের পদক্ষেপ অপরিকল্পিত। এটা কি নির্বাচন কমিশন এক বারও ভেবে দেখেছেন? ভ্যানিশকুমারবাবুরা, বিজেপির দালালেরা একবারও ভেবেছেন?
সম্প্রতি রাজ্যের যে খসড়া তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে ইতিমধ্যেই বহু ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। আরও দেড় কোটি নাম নাকি বাদ দিতে হবে। বিজেপির খোকাবাবুদের আবদার। তবে নাকি পশ্চিমবঙ্গ ওদের মুখ গহ্বরে লাড্ডুর মতো টুপ করে খসে পড়বে। সেজন্য ভোটারদের নামের বানানে সামান্য এদিক ওদিক দেখলেও তাঁর নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আগে কলকাতায় ১০০টি ওয়ার্ড ছিল। পরে ওয়ার্ডের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১৪৪টি। এর মধ্যে আসন পুনর্বিন্যাসও হয়েছে। ফলে ২০০২ সালে কোনও ভোটারের যে ঠিকানা ছিল, এখন সেই ঠিকানা বদলে গিয়েছে। অথচ এই বিষয়গুলি বিবেচনা না করেই ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। বিএলও-দের নামে গালাগালি দেওয়ার আগে ট্রেনিং দেওয়া দরকার ছিল। সেটা হয়নি। পুরোটাই অপরিকল্পিত।
জননেত্রীর স্পষ্ট কথা, বিজেপির কথায় নির্বাচন কমিশন কাজ করছেন। যত কেস করবেন, করবেন। চাইলে গলাটাও কেটে নিতে পারেন। কিন্তু আমি মানুষের কথা বলব। কাউকে না কাউকে তো মুখ খুলতে হবে। সবাই যদি ভয়ে গুটিয়ে যায়, তা হলে তো দেশটাই শেষ হয়ে যাবে। বাংলা না থাকলে, দেশটা থাকবে না। মাথায় রাখবেন।
শুধু আসন পুনর্বিন্যাস ঘিরেই সমস্যা নয়। বাংলা এবং ইংরেজিতে ভাষাগত পার্থক্যের কারণে নামের বানানও অনেক ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন হয়। শুধুমাত্র নামের বানান আলাদা হওয়ার কারণে অনেকের নাম বাদ পড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি বিয়ের পরে মহিলাদের অনেকে পদবি বদল করার ফলেও তাঁদের নাম বাদ পড়ে যাচ্ছে। এই ধরনের বানান বিভ্রান্তির জন্য এক জনকে আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে হয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুস্পষ্ট বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকারের অনেককে নিয়োগ করা হয়েছে। প্রত্যেক এলাকায় খবর রাখুন তো, কাকে কাকে নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁরা কোন দফতরে কাজ করেন, কোথায় থাকেন। আমরা ডিটেলস চাই। আমি তাঁদের সহযোগিতা করব, কিন্তু আমাদের ডিটেলস চাই। এটা রাজ্যকে জিজ্ঞেস করে করেনি। নির্বাচন কমিশন ইচ্ছা করে করছে।

আরও পড়ুন-হুলিগানদের যোদ্ধা তকমা দিচ্ছেন ইউনুস! ভারতের উপর হামলার কড়া নিন্দায় হাসিনা

এসআইআর-এর কাজ নিয়ে রাজ্যে এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্য সিপিএমও কম দায়ী নয়। রাজ্যে সর্বশেষ এসআইআর-এর সময়ে রাজ্যে ক্ষমতায় সিপিএম ছিল। তখন বেছে বেছে নবপ্রজন্ম থেকে শুরু করে যাঁরা তৃণমূল কংগ্রেস করত, বেশির ভাগের নাম বাদ দিয়ে দিয়েছিল। এখন আবার বিজেপির দালালি করছে। এবার বুঝবে, কত ধানে কত চাল।
এখানে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) হয়ে যিনি বসে আছেন, তিনি তো বাড়ি থেকে টাকা ফেলেছিলেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে সেই স্টোরি বেরিয়েছিল। সিবিআই হানা দিয়েছিল। তখন তিনি দিল্লিতে অন্য কোনও দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ভয়ে অফিস শিফ্‌ট করছেন। কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসে যাবেন। রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়াই। সব বেআইনি। আর এসবের মধ্যেই মহাত্মা গান্ধীর দ্বিতীয় হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হল। মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করা হয়েছিল ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি। হত্যাকারীকে তাদের আদর্শ ও প্রচারই যে প্ররোচনা দিয়েছিল, এই কথা জোরের সঙ্গে অস্বীকার করেছিল গেরুয়া সংঘ। আর আজ তার উত্তরসূরি বিজেপি মহাত্মা গান্ধীর নামাঙ্কিত একমাত্র আর্থ-সামাজিক কর্মসূচিটি থেকে তাঁর নামটি মুছে দিল।
বছরে ১০০ দিনের ওয়েজ এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি স্কিমটি ছিল ১২ কোটি পরিবারের জন্য একটি লাইফলাইন বা জীবনরেখা। প্রকল্পটি নিশ্চিত করত যেকোনও পরিবার যেন ক্ষুধার্ত ও হতাশ হয়ে রাতে ঘুমোতে না-যায়। এটি ছিল দরিদ্রদের জন্য, বিশেষ করে নিয়মিত কর্মসংস্থানবিহীন নারী ও বয়স্কদের কাছে একটি আশীর্বাদ। প্রকল্পটি পরিবারের নারীদের হাতে টাকা এনে দিয়েছে। নারীদের এমন একধরনের স্বাধীনতা দিয়েছে প্রকল্পটি, যা তাঁদের মা-দিদিমা’রা কখনও অনুভব করেননি।
প্রকল্পটি ছিল সর্বজনীন, চাহিদা-ভিত্তিক এবং বছরভর কাজ দেওয়ার অঙ্গীকার। মজুরি প্রদান নিশ্চিত করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এই প্রকল্পে অর্থের জোগান নিশ্চিত করত কেন্দ্রীয় সরকার; রাজ্যের অংশ বলতে ছিল কেবলমাত্র মেটেরিয়াল কস্ট বা কাজের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সংক্রান্ত খরচের ২৫ শতাংশ। শ্রমিককে কাজ দিতে সরকার অস্বীকৃত হলে ওই ব্যক্তি বেকার ভাতা পাওয়ার অধিকারী হতেন।
আর এখন?

আরও পড়ুন-যুবভারতী : খারিজ সিবিআই ও ইডি, চলবে পুলিশি তদন্ত

প্রকল্পটি হবে স্টেট-স্পেসিফিক।
এই প্রকল্পের খরচ কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ৬০:৪০ অনুপাতে ভাগ করে নেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিটি রাজ্যকে তহবিলের একটি ‘আদর্শ বরাদ্দ’ দেবে। সেই বরাদ্দের অতিরিক্ত খরচ হলে তা বহন করতে হবে রাজ্যকে। যেসব এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে সেই সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকার বিজ্ঞপ্তি দেবে। এটাকে গোপনে একটি সরবরাহ-ভিত্তিক প্রকল্পে পরিণত করবে মোদি সরকার। রাজ্য ১২৫ দিনের জন্য কর্মসংস্থান ‘নিশ্চিত’ করবে— যা একটি অলীক কল্পনা।
২০১৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নরেন্দ্র মোদি সংসদে বলেছিলেন, “আমার রাজনৈতিক বোধ আমাকে বলে যে কখনওই এমজিএনআরইজিএ বাতিল করা উচিত নয়।”
গত কয়েক বছরে, এমজিএনআরইজিএস অবহেলার শিকার হয়েছে। যদিও ১০০ দিনের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, পরিবার প্রতি গড় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে ৫০ দিনের কাছাকাছি মাত্র। ৮ কোটি ৬১ লক্ষ জব কার্ডধারীর মধ্যে, ২০২৪-২৫ সালে পুরো ১০০ দিনের কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে ৪০ লক্ষ ৭৫ হাজার পরিবারের। সংখ্যাটি ২০২৫-২৬ সালে মাত্র ৬ লক্ষ ৭৪ হাজার! যেসব পরিবার কাজ করেছে তাদের মোট সংখ্যা ২০২০-’২১-এ ছিল ৭ কোটি ৫৫ লক্ষ। সংখ্যাটি এখন নেমে এসেছে মাত্র ৪ কোটি ৭০ লক্ষে।
আর কয়েক লক্ষ কোটি টাকা এই বাবদ পায়নি পশ্চিমবঙ্গ। হে রাম!

Latest article