ভুলের জালে জড়িয়ে ম্যাচ গেল নাইটদের

পাঁচ ছক্কার গল্পটা আবার টুকটুক করে ফেরত এসেছিল ভরসন্ধ্যার ইডেনে। গ্যালারি চিৎকার করছে রিঙ্কু ...রিঙ্কু। হিসেবটাও বেশ। ৬ বলে ২৪...৩ বলে ১৮।

Must read

অলোক সরকার
পাঁচ ছক্কার গল্পটা আবার টুকটুক করে ফেরত এসেছিল ভরসন্ধ্যার ইডেনে। গ্যালারি চিৎকার করছে রিঙ্কু …রিঙ্কু। হিসেবটাও বেশ। ৬ বলে ২৪…৩ বলে ১৮। না, রিঙ্কু কেকেআরকে জেতাতে পারেননি।
শেষ বলে একটা লম্বা ছক্কা অবশ্য হাঁকালেন রিঙ্কু। বল পড়ল গ্যালারির মাঝখানে। কিন্তু তাতে বড়জোর ২৩৪/৭ অবধি গেল নাইটরা। এতে অঙ্ক বলছে ৪ রানে হেরে গেল কেকেআর। রিঙ্কু ২৫ বলে ৩৮ নট আউট। ম্যাচ অবশ্য আরও আগে লখনউয়ের হাতে চলে গিয়েছিল, যখন ভেঙ্কটেশ আইয়ার ৪৫ রানে আউট হলেন। শেষদিকে আর একজন যদি রিঙ্কুর পাশে থাকতেন, তাহলে প্রায় পাঁচশো রানের এই ম্যাচে জিততে পারত কেকেআর।

আরও পড়ুন-বাগান সদস্যদের জন্য বাড়তি সময়

৬ ওভারে কেকেআরের রান ছিল ৯০/১। তাতে একটা জিনিস স্পষ্ট ছিল, নাইটরা লড়াইয়ে রয়েছে। একটু আগে ১৯ বলে ৫০ রানের পার্টনারশিপ খেলে ফেলেছেন নারিন ও রাহানে। পরিস্থিতি লখনউয়ের জন্য কতটা চাপের ছিল সেটা এই এক ছবিতেই পরিষ্কার। ডাগ আউটে উদ্বিগ্ন মুখে বসেছিলেন মেন্টর জাহির খান। পাশে তখন আরও উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছিল সাপোর্ট স্টাফ রাহুল সাংভিকে।
কেকেআরের ৩৭ রানে ডি’কককে (১৫) ফেরান আকাশ দীপ। তারপর নারিন (৩০) যখন ফিরলেন, বোর্ডে রান ৯১। নারিনের আউটে অবশ্য গল্প আছে। তাঁর উইকেট নেন দিগবেশ সিং রাঠি। কে এই তরুণ? এবারই প্রথম খেলছেন এই লেগি। উইকেট নিয়ে এমন সব সেলিব্রেশন করছেন, যা ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু আসল গল্প এরপর। দিগবেশ খুব নারিন ভক্ত। শয়নে-স্বপনে নারিন। নারিন তাঁর হিরো। এদিন সেই হিরোর উইকেট নিয়ে গেলেন তিনি।
লখনউয়ে যেমন মার্শ, তেমনই কেকেআরের হয়ে এদিন খেললেন রাহানে। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছে কিছু প্রমান করার তাগিদ রয়েছে। তাঁকে সেটা করতেই হবে। ৩৫ বলে ৬১ রান করে গেলেন নাইট অধিনায়ক। তিনি যতক্ষণ ছিলেন, মনে হচ্ছিল এটা তাঁদের ম্যাচ। কিন্তু আইপিএল ভারি অদ্ভুত টুর্নামেন্ট। এই এক তো ওই আরেক। নিমেষে খেলার রং বদলায়। রাহানে ফিরে যাওয়ার পর রামনদীপ (১), অঙ্গকৃশ (৫) এলেন আর গেলেন।
ফলে নাইটরা ভাল জায়গা থেকে চাপের মধ্যে পরে গেল। রিঙ্কু যখন এলেন, উল্টোদিকে রাসেল। ২৯ বলে ৬২ রান দরকার ছিল তখন। কিন্তু এই রাসেল আগের রাসেল (৭) নন। শার্দুলের লো ফুলটস বাউন্ডারির বাইরে ফেলতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলেন মিলারের হাতে। রাহানেও লো ফুলটস শিকার। হিসাব বলছে লখনউ বোলাররা ২০টি ওয়াইড বল করেছেন। যার সুবিধা নিয়ে পারেনি কেকেআর।
পাওয়ার প্লে-তে লখনউ ৫৯/০ তুলে দেওয়ার পর রাহানের সিদ্ধান্ত নিয়ে চর্চা শুরু হল। তিনি টসে জিতে ফিল্ডিং নেন। প্রথম কয়েক ওভারে উইকেট থেকে জুস আদায় করে নেওয়া ছাড়া টার্গেট দেখে ব্যাট করার প্ল্যান ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি কেকেআরের অনুকূলে যায়নি। না হলে লখনউ প্রথম উইকেটে ৯৯ রান তুলে নিতে পারে না। আর ২০ ওভারে রানটা ২৩৮/৩ হত না।
৬২ বলে ৯৯ রানের পার্টনারশিপ খেলে গেলেন মার্করাম। তাঁর নিজের রান ২৮ বলে ৪৭। হর্ষিত যখন তাঁকে ফেরত পাঠালেন, তখন উল্টোদিকে মিচেল মার্শ। যাঁর আপাতত বল করার অনুমতি নেই। আইপিএলের মধ্যে বল করার ছাড়পত্র আসবে কিনা কে জানে। কিন্তু মার্শ ব্যাট হাতে সেই ঘাটতি পূরণ করে দিচ্ছেন। এবার শুরু থেকে ব্যাট হাতে রান করে যাচ্ছেন অজি অলরাউন্ডার। এদিন যেমন ১৯ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেছেন।
মঙ্গলবার যে উইকেটে খেলা হল, তাতে আরসিবি ম্যাচ হয়েছে। বিরাট কোহলিরা সেই ম্যাচে অনেক রান করেছিলেন। কে জানে কেন, এই উইকেটকেই বেছে নিয়েছিলেন রাহানেরা। প্রশ্ন অন্য জায়গায়। গত কয়েকদিনে এত রোদ্দুর ওঠার পর বুঝতে অসুবিধা ছিল না যে, উপরের উত্তাপ উইকেটের আদ্রতা
শুষে নিয়েছে। অর্থাৎ আপাতত এটা নির্বিষ উইকেট। লখনউ ইনিংস যত এগোল, সেটা পরিষ্কার হল মার্শ-পুরাণের ব্যাটে।
আগেরদিন কেকেআরের সহকারি কোচ ওটিস গিবসন বলছিলেন, আমাদের বোলিং লাইন আপ ওয়েল ব্যালান্সড। স্পিন হলে স্পিন, পেস হলে পেস। আমরা সামলে নেব। কিন্তু ক্যারিবিয়ান কোচের এসব মন্তব্য একদম দাঁড়ায়নি। নরখিয়া ফিট না হওয়ায় স্পেনসার জনসন সুযোগ পাচ্ছেন। তিনি এত রান দিলেন যে এবার যেভাবে হোক নরখিয়াকে নামানোর উদ্যোগ শুরু হবে।
বরুণ ভাল বল করলেন। ৪ ওভারে ৩১-০। নারিন ৩ ওভারে ৩৮/০। এই উইকেটে বল এক ফোটা ঘোরেনি। রাসেল বল করতে এসে মার্শকে (৮১) তুলে নিলেন। কিন্তু ততক্ষণে বোর্ডে বড় রান তুলে ফেলেছে লখনউ। সেটা পুরানের জন্য। কেন তাঁকে এই ফর্ম্যাটে ভয়ঙ্কর ব্যাটার বলা হয়, সেটা আরেকবার বুঝিয়ে দিলেন ক্যারিবিয়ান বাঁহাতি। তিনি ৩৬ বলে ৮৭ নট আউট থেকে গেলেন।
হর্ষিত ৪ ওভারে ৫১/২। রাসেল ২ ওভারে ৩২/১। বৈভব ৪ ওভারে ৩৫/০। বোলারদের এই পরিসংখ্যান জানিয়ে দিচ্ছে, একেবারে খারাপ দিন গিয়েছে তাদের। কেকেআরের কাউকে দোষারোপ করার উপায় নেই। এই উইকেটে রাহানেরাই বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথম বল থেকে ভুলের জালে জড়িয়ে গেলেন তাঁরা।

Latest article