প্রতিবেদন : আসল ও মোক্ষম কথাটি সবশেষে বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ততক্ষণে ভাষাসন্ত্রাস ও বাঙালি-বিদ্বেষ নিয়ে তাঁর বক্তব্যের সময় টানা চূড়ান্ত অসভ্যতা করে গিয়েছে বিজেপি বিধায়কেরা। কী করেনি তারা! কাগজ ছেঁড়া থেকে শুরু করে মুখে অদ্ভুত আওয়াজ করা— কিছুই বাদ রাখেনি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বলা শেষ করলে বিজেপির সকলে বেরিয়ে যায়। তখন তাদের শূন্য আসনের দিকে দেখিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী দিনে তৃণমূলের আরও বিধায়ক জিতে এসে ওখানে বসবেন। অন্য দলের লোকও বসবে কিন্তু বিজেপি থাকবে না। ওরা মহাশূন্যে মিলিয়ে যাবে। জনতা ধাক্কা দিয়ে বিজেপিকে জিরো করে দেবে।
আরও পড়ুন-লক্ষ্য ২৬, নিবিড় জনসংযোগে জোর অভিষেকের
বৃহস্পতিবার রাজ্য বিধানসভা সাক্ষী থাকল একাধিক নজিরবিহীন ঘটনার। বিজেপি বিধায়কেরা এদিন বিধানসভার মান-মর্যাদা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছেন। নিজেদের কৃতকর্মের জন্য পাঁচ বিজেপি বিধায়ককে সাসপেন্ড করেছেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তারা বেরোতে না চাওয়ায় মার্শাল ও বিধানসভার নিরাপত্তারক্ষীদের দিয়ে রীতিমতো চ্যাংদোলা করে বের করতে হয়েছে। আর বাইরে টিভি ক্যামেরার সামনে ফুটেজ খেতে সে কী অসুস্থতার নাটক! বিশেষ করে বিজেপির শঙ্কর ঘোষ আর মিহির গোস্বামী দীর্ঘ সময় ধরে অত্যন্ত কাঁচা অভিনয় করে গিয়েছেন। বাকিরাও কম যান না। তবে এদিন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য সহকারে সব সামলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপির অসভ্যতার জবাব দিয়েছেন। বিজেপি বিধায়কদের অসভ্যতার জবাব দিতে তুমুল স্লোগান তোলেন তিনি। বিজেপি ভোট চোর, গদি চোর। বাকিরাও তাতে গলা মেলান। এদিন দফায় দফায় বক্তব্য রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কখনও বলেছেন, বিজেপি হঠাও দেশ বাঁচাও। আবার কখনও বলছেন, বিজেপি দেশের লজ্জা। ওরা আলোচনা চায় না। এরা বাংলা ভাষার উপর অত্যাচার করে, বাংলাবিরোধী। যাতে মানুষ আমাদের কথা শুনতে না পায়, সেজন্য এই অসভ্যতা করছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি অনেকক্ষণ ধরে শাসকদলের সদস্যদের শান্ত থাকতে বলেছি, কিন্তু মনে রাখবেন শান্তিরক্ষা দু পক্ষের কাজ।
আপনারা মাননীয় অধ্যক্ষের কথা শুনুন। আমি আমাদের বিধায়কদের শান্ত থাকতে বলেছি। শান্তি রাখা দু’পক্ষের দায়িত্ব। তিনি আরও বলেন, বিজেপি বাংলাবিরোধী ও অত্যাচারী দল। বাংলার মানুষ এদের কাউকে বিধানসভায় দেখতে চাইবে না। এরা ভারতের সবচেয়ে বড় বাংলা, হিন্দু, এসসি, এসটি, ওবিসি-বিরোধী। যিনি বড় বড় কথা বলছেন, তিনি চারবার দলবদল করেছেন। আমার গলা টিপে দিলেও বাংলায় বলব। বাংলাকে অসম্মান করছেন কেন? চোরদের সম্রাট, লুটেরাদের দল। বাংলা ভাষাকে অপমান করার দল। মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবে না। এরা বাংলা জানে না। বাংলার আন্দোলন জানে না। বাংলা জাতীয় সঙ্গীত তৈরি করেছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় এদের জন্ম হয়নি। এরা ইংরেজদের দালালি করেছিল। এরা বাংলার কিছু জানে না। আমাকে চুপ করিয়ে রাখা যাবে না। আমি বলবই। এরা এমন একটা পার্টি, যারা দেশের সবচেয়ে বড় ব্রোকার। দেশ বিক্রি করে দিচ্ছে। সাম্প্রদায়িকতা ছড়াচ্ছে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করছে। ইংরেজদের কাছে মুচলেকা দিয়েছিল। স্বাধীনতা আন্দোলনেও বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল।
আরও পড়ুন-বার্লিনে রাস্তায় পথচারীদের ধাক্কা দিয়ে ছুটল গাড়ি, আহত শিশু সহ একাধিক
বিজেপির বিধানসভায় কাগজ ছোঁড়া দেখে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই যে কাগজ ছুঁড়ছেন বিধানসভায়, এটা অনৈতিক, আনপার্লামেন্টারি, আনডেমোক্র্যাটিক এবং অবৈধ। আমি বাংলা ভাষায় কথা বলি, মানুষ তা জানতে পারলে এদের মুখোশ খুলে যাবে। এমন একদিন আসবে বাংলার মানুষ একজন বিজেপিকেও এখানে দেখতে চাইবেন না। বাংলার উপর অত্যাচার করে, সবাই হারবে। বাংলার মানুষ ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে জবাব দেবে। বিজেপিকে জিরো করে দেব। জনতার ধাক্কা দিয়ে শূন্য করে দেব। ভোট আসলেই ক্যা ক্যা, এনআরসি। টাকা-অস্ত্র নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে ভোটে জেতে বিজেপি। চোরের মায়ের বড় গলা। ভয় পেয়েছে, তাই বাংলা ভাষার ওপর অত্যাচার করছে।
একটা সময় বিজেপির অসভ্যতায় তুমুল হট্টগোল বাধে। বক্তব্য থামিয়ে দিতে হয়। তখন বিজেপির কটূক্তির প্রতিবাদ করেন তৃণমূলের বিধায়কেরা। এরপর ধৈর্য সহকারে পরিস্থিতি সামলান মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল বিধায়কদের শান্ত রাখতে নিজে ওয়েলে নেমে আসেন। সবাইকে শান্ত থাকতে বলেন।