প্রতিবেদন : সদিচ্ছা দেখিয়ে ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট বসে রইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু লাইভ স্ট্রিমিংয়ের অজুহাত খাড়া করে নবান্ন সভাঘরের বৈঠকেই ঢুকলেন না জুনিয়র ডাক্তাররা! আসলে ছক কষে আটকানো হল এই বৈঠক। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, এই নিয়ে টানা ৩ দিন ওদের জন্য অপেক্ষা করলাম। ওরা বৈঠক করল না। জুনিয়র ডাক্তারদের অনেকেই বৈঠকে রাজি আছে। কিন্তু দু’-তিনজনের জন্য বৈঠক হল না। কারণ তাদের কাছে বাইরে থেকে নির্দেশ আসছে বৈঠক না করার। আসলে ওরা তিলোত্তমার বিচার চায় না, চেয়ার চায়। সাফ কথা মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি বলেন, ওরা ছোট। ওদের আমি ক্ষমা করে দিলাম। এরপর ওরা বৈঠক করতে চাইলে মুখ্যসচিব-সহ বাকিদের সঙ্গে বৈঠক করতেই পারে। কিন্তু আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছিলাম। বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
এরপরই জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, আপনারা কাজে যোগ দিন। আর্ত মানুষকে বাঁচান। ইতিমধ্যেই ২৭ জন বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছেন। ৭ লক্ষ মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে বিপদে পড়েছেন। ১,৫০০ হার্ট অপারেশন হয়নি। এরপর কোনও ঘটনা ঘটলে পরিবারগুলো আমাদের কাছে কৈফিয়ত চাইলে আমাদের তো উত্তর দিতে হবে! মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাকে অনেক খারাপ কথা বলা হয়েছে। রাজ্য সরকার সম্পর্কে অনেক ভুল বোঝানো হয়েছে। মানুষ তিলোত্তমার বিচারের দাবিতে পথে নেমেছিল। আমরাও বিচার চাই। বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। সিবিআই তদন্ত করছে। তাই অনেক কিছু চাইলেও করা যায় না। মানুষের স্বার্থে আমি পদত্যাগ করতে পারি। আপনারা কাজে যোগ দিন। মানুষকে বাঁচান। জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতি বারবার এই আবেদন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
আমরা এমন কিছু করতে চাইনি যাতে অচলাবস্থা দূর না হয়। আমরা অচলাবস্থা পেরিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যোগী। আমরা চিঠিতে জানিয়েছিলাম লাইভ স্ট্রিমিং করতে পারব না, পুরোটা রেকর্ড করা হবে। স্পষ্ট করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সংযোজন, যদি মিটিং কার্যকরী হত তাহলে আমরা যৌথভাবে সাংবাদিক সম্মেলন করতে পারতাম। কিংবা ওরা আলোচনা করেও বাইরে গিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করতে পারত। আমরা ভেবেছিলাম খোলা হাওয়ায় খোলামেলা আলোচনায়। আমার ছোট ছোট ভাই-বোনেরা রাগারাগি না করে ডাক্তারদের স্বার্থে এবং রোগীদের স্বার্থে মানবিকভাবে এই আলোচনা আমাদের সঙ্গে করবে। তারা দু-ঘণ্টা পরেও আসেনি। আমি তাতেও তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেব না। আমরা মনে করি আমরা বড়-ছোটদের ক্ষমা করে দেওয়া চিরকালের নিয়ম এটা। সৌজন্য। এখানেই থেমে না থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা বলেছিলাম খোলা মনে আসুন কোনও দাবি বা কোনও পার্টিকুলার ইস্যু নয় যে আলোচনা করতে চান সেটা আলোচনা করুন খোলা মনে।। আপনাদের ওখানে দড়ির বাঁধন নেই, আমাদেরও নেই। কথা বললে সমস্যা থাকলে তাহলে তার সমাধান হবে। এর আগেও আমি দুদিন অপেক্ষা করেছিলাম দু ঘণ্টা করে। ভেবেছিলাম তারা আসবে কিন্তু তারা আসতে পারেনি। ওরা ছোট আমাদের কাজ তাদের আবেগকে মর্যাদা দিয়ে ক্ষমা করে দেওয়া আমরা ক্ষমা করে দিয়েছি।
আরও পড়ুন-চিত্র সাংবাদিককে ধাক্কা, ফের বিতর্কে মার্টিনেজ
রাজ্য সরকার ডাক্তারদের একটার পর একটা আবদার মেনে নিয়েছে। মুখ্যসচিবের তরফে চিঠি দিয়ে ১৫ জনকে বৈঠকে ডাকা হলেও স্বাস্থ্যভবনের সামনে থেকে এদিন বাসে করে ৩৪ জন জুনিয়র ডাক্তার নবান্ন সভাঘরের সামনে যান। তবুও এদের সকলকেই ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দেয় সরকার। কিন্তু লাইভ স্ট্রিমিংয়ের জেদ ধরে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলেন ধর্মঘটিরা। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, ডিজি রাজীব কুমার, এডিজি আইনশৃঙ্খলা সুপ্রতিম সরকার দফায় দফায় সভাঘরের বাইরে এসে ৩৪ জনের এই প্রতিনিধি দলটিকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু লাভ হয়নি। মুখ্যসচিব বলেন, লাইভ স্ট্রিমিং না হলেও সভাঘরের ভিতরে একাধিক ক্যামেরায় পুরো বৈঠক রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। তাতেও রাজি করানো যায়নি ডাক্তারদের।