সিঁদুর বিক্রি করতে বেড়িয়েছেন উনিজি। বিক্রি করাটাই ওঁর বেঁচে থাকার উপায়। সেজন্য কখনও চা-ওয়ালা হয়ে চা বেচেছেন, কখনও চৌকিদার সেজে দেশ বেচার ধান্দা করেছেন। আর এখন সেনাবাহিনীর কৃতিত্ব সামনে রেখে সিঁদুর বেচতে নেমেছেন।
কোনও অসুবিধা ছিল না, যদি নিজের যেটা করার কথা, সেটা মন দিয়ে করতেন।
প্রতিরক্ষাতে আত্মনির্ভরতায় জোর দিচ্ছে ভারত। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেশীয় সংস্থার থেকে সমরাস্ত্র, যুদ্ধবিমান-সহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বাহিনীকে। এই ইস্যুতে উষ্মা প্রকাশ করেছেন, অন্য কেউ নন, স্বয়ং বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল অমরপ্রীত সিং। তাঁর বক্তব্য, অনেক সময় আমরা এমন কিছু চুক্তি করি, যা কখনই বাস্তবায়িত হবে না। সময় এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এমন একটা প্রকল্পের কথাও আমি মনে করতে পারছি না, যেটি সময়ে শেষ হয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, কাজ সম্পন্ন করতে না পারলে প্রতিশ্রুতি দেব কেন? এ-ব্যাপারে তেজস এমকে১এ যুদ্ধবিমানের প্রসঙ্গ টেনেছেন বায়ুসেনা প্রধান। তিনি জানিয়েছেন, লাইট কমব্যাট এয়ারক্র্যাফ্ট প্রজেক্টের অধীনে ২০২১ সালে এই তেজস যুদ্ধবিমান পেতে হ্যালের সঙ্গে ৪৮ হাজার কোটি টাকার চুক্তি হয়েছিল। ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ওই যুদ্ধবিমান বাহিনীর হাতে আসার কথা। কিন্তু তা হয়নি।
আরও পড়ুন-নিগৃহীতাদের পাশে দাঁড়াল মহিলা কমিশন
তেজস এমকে১ হাতে আসেনি। তেজস এমকে২’র প্রোটোটাইপ এখনও বাজারে আসেনি। স্টেলথ এএমসিএ যুদ্ধবিমানের প্রোটোটাইপ তৈরিই হয়নি। আমাদের ভবিষ্যতের জন্য তৈরি থাকতে হবে। আজ যেটা দরকার, সেটা আজই দরকার। যুদ্ধ জিততে হলে বাহিনীকে শক্তিশালী করতেই হবে। শুধু দেশে উৎপাদনের কথাই যথেষ্ট নয়, ডিজাইন নিয়েও চিন্তাভাবনা জরুরি।
কিন্তু উনিজির এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই। উনি প্রচারের ঢাক কাঁধে সিঁদুর বেচতে বেরিয়ে পড়েছেন। অপারেশন সিঁদুর গোটা দেশের জয়। ভারতীয় সেনার জয়। আর উনিজি সেই জয়কে নিজের জয় হিসেবে ব্যস্ত, ভোটের অঙ্কে জয়ের সুদ গুনতে ব্যস্ত।
আরও পড়ুন-সর্বোচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন, তার মধ্যেই অসমের শিক্ষককে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিল পুলিশ
নিজের দলের দিকে তাকান। আয়নাটা নিজের দিকে ঘোরান। তাহলেই হাল হকিকত পরিষ্কার হয়ে যাবে।
২০২২ সালে উত্তরাখণ্ডের পাউড়ি জেলায় এক তরুণীকে খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন বিজেপি নেতার ছেলে-সহ তিনজন। পুলকিত আর্য্য, সৌরভ ভাস্কর ও অঙ্কিত গুপ্ত।
২০২২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর অঙ্কিতা ভাণ্ডারী (১৯) নামের ওই তরুণী খুন হন। হৃষীকেশের কাছে একটি হোটেলে কাজ করতেন অঙ্কিতা। সেই হোটেলের মালিক ছিলেন বিজেপি নেতার ছেলে পুলকিত। এই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিস জানতে পারে যে, অঙ্কিতার সঙ্গে কোনও এক কারণে ঝগড়া হয়েছিল পুলকিতের। পরে পুলকিত, ওই তরুণীকে খালে ঠেলে ফেলে খুন করেন। এই ঘটনায় তাঁকে সাহায্য করেছিলেন হোটেলেরই দুই কর্মী সৌরভ ভাস্কর ও অঙ্কিত গুপ্ত। ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর খাল থেকে উদ্ধার হয় অঙ্কিতার মৃতদেহ। তদন্ত করতে গিয়ে পুলিস পুলকিত, সৌরভ ও অঙ্কিতের নাম জানতে পারে ও পরে তাঁদের গ্রেফতার করে। এই খুনের ঘটনার তদন্তে গঠন করা হয় সিট।
ওই তিন তরুণের বিরুদ্ধে অঙ্কিতাকে খুনের সমস্ত প্রমাণ পেয়ে যান তদন্তকারী অফিসাররা। তারপরেই আদালতে ৫০০ পাতার চার্জশিট জমা দেয় সিট। তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়। তারপরেই গত ২০২৩ সালের ২৮ মার্চ বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ৪৭ জন সাক্ষীর বয়ান ও উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে ৩০ মে, ২০২৫-এ অঙ্কিতা ভাণ্ডারিকে খুনের ঘটনায় বিজেপি নেতার ছেলে পুলকিত-সহ সৌরভ ও অঙ্কিতকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৩০২, ২০১, ৩৫৪এ ও গ্যাংস্টার মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
উনিজি বলছেন, মমতা-সরকার নির্মম সরকার। সত্যি! কী নির্মম। আর উনিজির প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের রাজনীতি, হতাশ করার নোংরা খেলা বুঝি নির্মল সরকারের কীর্তি!
আরও পড়ুন-আন্দোলনের নামে অসভ্যতা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কোনও শিক্ষকের চাকরি খায়নি, উল্টে বাঁচানোর চেষ্টা করে চলেছে নিরলসভাবে। চাকরি খেয়েছে বাম উকিল আর রাম প্রাক্তন বিচারপতি। চাকরি হারাদের ভাতার ব্যবস্থা করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। প্রতিমাসে সেটা পাচ্ছেন চাকরি হারানো শিক্ষকেরা। এটা বুঝি নির্মমতার উদাহরণ!
আর মোদি সরকারের ‘নির্মলতা’? সেটা কেমন?
উনি বলেছিলেন, যদি তিনি ক্ষমতায় আসেন, তাহলে সব চা-বাগান খুলে দেবেন। ১০ বছরের বেশি হয়ে গিয়েছে, একটা চা- বাগানও তো তিনি খুলতে পারেননি। বৃহস্পতিবার চা-বলয়ের জন্য তিনি কিছু ঘোষণা করবেন, এমনটাই ভেবেছিলেন চা-শ্রমিকরা। কিন্তু সেরকম কোনও প্রতিশ্রুতি বা আশ্বাস না-পাওয়ায় নিরাশ চা-বলয়। বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ার প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষণ শুনে হতাশ উত্তরের চা শ্রমিকরা। এদিন প্রধানমন্ত্রী পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সের চা-বাগানের উন্নয়ন নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রের ভারী শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন যে চারটি বাগানে বেতন হচ্ছে না, শ্রমিকদের পিএফ জমা পড়ছে না, সেসব নিয়েও মোদির মুখে কিছুই শোনা যায়নি।
সভার ২৪ ঘণ্টা আগেও বিজেপির জেলা নেতৃত্ব দাবি করেছিল, চায়ের জেলায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে চা বাগান নিয়ে তিনি কিছু ঘোষণা করবেন, এমনটাই আশা করছেন তাঁরা। কিন্তু সেই আশা পূরণ না হওয়ায় তাঁরা এখন সাফাই গাইছেন, টি বোর্ডের মাধ্যমে চা-বাগানের উন্নয়নে অনেক কাজ করছে কেন্দ্র। অন্যদিকে, হাসিমারায় অসামরিক বিমানবন্দর, আলিপুরদুয়ার জংশনে রেলের জমিতে মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল নিয়ে মোদি এদিন কিছু ঘোষণা করতে পারেন, এই আশাতেও তো বুক বেঁধেছিল জেলার মানুষ। মোদি স্পিকটি নট। নির্মল সরকারের প্রধানমন্ত্রী কিনা!
মোদিজি! সরাসরি আপনাকে একটা কথা বলি। জননেত্রী যা বলেছেন, শুনেছেন তো? বুঝেছেন তো কথাগুলো!
বাংলায় ভোট আসছে। কিন্তু এখনও দেরি আছে। তত দিন আপনি ক্ষমতায় থাকবেন কি থাকবেন না, সেটা আগে খেয়াল রাখুন।
চ্যালেঞ্জ রইল। বাংলা বিজেপির হবে না।